এমবাপ্পের জোড়া গোলে শেষ ষোলোতে ফ্রান্স

স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পের নৈপুণ্যে  প্রথম দল হিসেবে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলো নিশ্চিত করলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। শনিবার গ্রুপ-ডি’তে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এমবাপ্পের জোড়া গোলে ফ্রান্স ২-১ ব্যবধানে  হারিয়েছে ডেনমার্ককে। এই জয়ে ২ ম্যাচ থেকে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে উঠে শেষ ষোলোর টিকিট পায় ফ্রান্স। সমানসংখ্যক ম্যাচে ১ ড্র ও ১ হারে ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয়স্থানে ডেনমার্ক। ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয়স্থানে অস্ট্রেলিয়া। সমানসংখ্যক ম্যাচে ১ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে তিউনিশিয়া। এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে একনো শেষ ষোলোতে যাবার সুযোগ থাকছে ডেনমার্ক-অস্ট্রেলিয়া ও তিউনিশিয়া তিন দলেরই।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ গোলে জিতেছিলো ফ্রান্স। তিউনিশিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করেছিলো ডেনমার্ক। এ ম্যাচ জিতলেই শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত হবে, এমন সমীকরণ মাথায় রেখে ডেনমার্কের মুখোমুখি হয় ফরাসিরা।

দোহার ৯৭৪ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমণ করে ফ্রান্স। স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পের কাছ থেকে বল পেয়ে ডেনমার্কের গোলমুখে শট নেন ফরোয়ার্ড  ওসমানে ডেম্বেলে। সেটি প্রতিহত করেন ডেনমার্কের ডিফেন্ডার ভিক্টর নেলসন। দশম মিনিটে আবারও আক্রমণে যায় ফ্রান্স। ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজের ক্রস থেকে ছয় গজ দূর থেকে হেড করেও গোল পাননি মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন রাবোয়িত।

১২ মিনিটে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন ফ্রান্সের রাফায়েল ভারানে। কর্নার থেকে বল পেয়ে বক্সে থাকা ভারানের উদ্দেশ্যে ক্রস করেন স্ট্রাইকার আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। বাতাসে উড়ে আসা বলে হেড নেন ভারানে। কিন্তু ভারানের হেডের বল বারের পাশ দিয়ে বাইরে চলে যায়।

ম্যাচের ২২ মিনিটে ফ্রান্সের গোলের একটি সুযোগ নষ্ট করে দেন ডেনমার্কের কাসপার সিমিচেল। গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিক থেকে বল পেয়ে ডেম্বেলের ক্রসে হেড করেন মিডফিল্ডার আদ্রিয়েন রাবোয়িত। দারুণ দক্ষতায় রাবেয়িতের হেড করা বল রুখে দেন ড্যানিশ গোলরক্ষক সিমিচেল।

এরপর ৩০ থেকে ৩৪ মিনিটের মধ্যে ৪বার আক্রমণে গিয়েও গোল পায়নি ফ্রান্স। ম্যাচের ৩৬ মিনিটে প্রথম আক্রমণে আসে  ডেনমার্ক। মিডফিল্ডার পিয়েরে-এমিলে হোবার্গ স্ট্রাইকার আন্দ্রেস কোরনেলিয়াসকে বল দেন।  ডান-প্রান্তে বক্সের কাছ থেকে ফ্রান্সের গোলমুখে শট নেন কোরনেলিয়াস। কিন্তু ফ্রান্সের ডিফেন্সের সামনে সেই শট মুখ থুবড়ে পড়ে।

এই অর্ধের শেষদিকে ১টি করে আক্রমণ করেও গোল পায়নি কোন দল। গোলহীনভাবেই শেষ হয় ম্যাচের প্রথম ভাগ। হাতে গোনা ২টি আক্রমণ করলেও, বল দখলে ফ্রান্সের সাথে তুমুল লড়াই করে এগিয়ে ছিলো ডেনমার্ক। ৫১ শতাংশ বল দখলে ছিলো তাদের। ৪৯ শতাংশ বল দখলে ১৩টি আক্রমণ করে ৩টি শট নিতে পারে ফ্রান্স।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেও বল দখলে রাখে ডেনমার্ক। ৫৬ মিনিটে  এমবাপ্পের শট ডেনমার্কের গোলমুখে প্রবেশ করেনি। তবে কিছুক্ষণ পরই ৬১ মিনিটে ডিফেন্ডার থিও হার্নান্দেজের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান টাচে ঠিকই গোল আদায় করে নেন এমবাপ্পে।

মধ্যমাঠ থেকে এমবাপ্পেকে বল যোগান দেন হার্নান্দেজ। বল পেয়ে ডেনমার্কের বক্সে ঢুকে হার্নান্দেজকে পাস দেন এমবাপ্পে। বল নিয়ে এমবাপ্পেকে মাইনাস করেন হার্নান্দেজ। বলকে না থামিয়ে দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ডেনমার্কের গোলমুখে শট নিয়ে গোল পকরেন  এমবাপ্পে। বাঁ-দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলকে হাতের নাগালে নিতে পারেননি ডেনমার্কের গোলরক্ষক। ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স।

অবশ্য লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি ফ্রান্স। ৭ মিনিট পরই গোল করে ডেনমার্ককে খেলায় ফেরান ডিফেন্ডার আন্দ্রেস ক্রিস্টেনসেন।  কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে গোলমুখে ঠিক-ঠাক হেড করতে পারেননি মিডফিল্ডার ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। এরিকসেনের মাথা ছুঁয়ে বল যায় ক্রিস্টেনসেনের কাছে। তিনি আর ভুল করেননি। হেডের সহায়তায় বলকে ফ্রান্সের জালে প্রবেশ করেন ক্রিস্টেনসেন।

১-১ সমতায়ই ম্যাচ গড়াচ্ছিলো। তবে  গোলের জন্য মরিয়া ছিলো দু’দলই। ৮৬ মিনিটে ফ্রান্সকে আরও একবার গোলের আনন্দে ভাসান এমবাপ্পে।  ডান-প্রান্তের বক্সের কাছ থেকে ক্রস করেন গ্রিজম্যান। ডেনামার্কের গোলমুখের খুব কাছে আসা বলে বাতাসে ভেসে ডান পায়ের ছোয়ায় গোল করেন এমবাপ্পে। আবারও লিড পায় ফ্রান্স। নির্ধারিত সময় শেষ হবার পর ইনজুরি সময়ে আট মিনিটে গোল না হলে ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে শেষ ষোলোতে নাম লেখায় ফ্রান্স।

আগামী ৩০ নভেম্বর গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে দোহার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে খেলবে ফ্রান্স। একই দিন আল-ওয়াকরাহর আল-জানুব স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ডেনমার্ক।

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − 10 =