এমসিজিতে ক্রিকেট নাটক

সালেক সুফি

ঐতিহাসিক মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজির ) ঐতিহ্যবাহী বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম দিনেই বিশ্ব দেখলো অবিস্মরণীয় ক্রিকেট নাটক। উইকেট দেখে মনে হয়েছে সবুজ ঘাসের গালিচা। পেসি বাউন্সি উইকেটে প্রথম দিনেই দুই দলের ইনিংস শেষ হয়েছে। দিন শেষে স্বাগতিক দল সব উইকেট হাতে নিয়ে ৪৬ রানে এগিয়ে আছে। উইকেটের চরিত্র নিয়ে টেস্ট শেষে কি বলে আইসিসি জানার অপেক্ষায় থাকবো।

চলমান এশেজ সিরিজের আজ শুরু হয়েছে চতুর্থ টেস্ট। পার্থ, ব্রিসবেন, এডিলেড টেস্টগুলো দাপটে জিতে নিয়ে (৩-০) এশেজ সিরিজ জিতে ভস্ম (আর্ন) নিজেদের কাছে ধরে রেখেছে। এমসিজি উইকেট ছিলো পুরো ঘাসের আস্তরণে আচ্ছাদিত পেস বোলারদের জন্য ঘাতক উইকেট। প্রথমে ব্যাটিং করে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ইংলিশ সীমারদের দাপটে ৪৫.২ ওভারে ১৫২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিলো। সবাই জানতো এহেন উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার তুখোড় ফাস্ট বোলিং মোকাবিলায় হিমশিম খাবে ইংল্যান্ড। দিনশেষে ইংল্যান্ড ইনিংস  ২৯.৫ ওভারে ১১০ রানে সাঙ্গ হলো। ১৯৫১ সালের প্রথম এই প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় কোনো টেস্টে প্রথম দিনেই ২০ উইকেট পতন দেখলো। দিনশেষে দ্বিতীয় ইনিংসে এক ওভার খেলে অস্ট্রেলিয়া করেছে ৪/০। অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইন ইনিংসে সব উইকেট হাতে নিয়ে ৪৬ রানে এগিয়ে আছে। উইকেট নয় যেন ব্যাটসম্যানদের বদ্ধ ভূমি। উইকেটের চরিত্র না পাল্টালে টেস্ট ম্যাচটি হয়তো কাল দ্বিতীয় দিনেও শেষ হয়ে যেতে পারে।

আজ শুক্রবার। জুমার নামাজের জন্য খেলার বেশ কিছু সময় দেখতে পারিনি। যখন শুরু করলাম দেখলাম ৫১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ধুকছে। যশ টঙ (৫/৪৫) আর গাস আটকিন্সনের (২/২৮) আগুনে বোলিং সামাল দিতে হাশফাঁস করছে ক্যাঙ্গারু বাহিনী। উসমান খাওয়াজা (২৯), আলেক্স কারী (২০) এবং শেষ দিকে মাইকেল নেসারের বেপরোয়া ব্যাটিং দলের স্কোর কোনোভাবে ১৫২ নিয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান উইকেট এবং অস্ট্রেলিয়ান বর্তমান দলের পেস বোলিং বিষয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে আঁচ করেছিলাম ধসে পড়বে ইংলিশ ব্যাটিং। হলো তাই মিচেল স্টার্ক (২/২৩), মাইকেল নেসার (৪/৫৪) ধ্বংস যজ্ঞ শুরু করলে স্কট বোলান্ড (৩/৩০) যুক্ত হয়ে তাসের ঘরের মত ধসিয়ে দিলো ইংল্যান্ড ইনিংস। একমাত্র হ্যারি ব্ৰুক বেপরোয়া ব্যাটিং করে ৩৪ বলে ৪১ রান না করলে ইংল্যান্ড ইনিংস আরো সঙ্গিন হত। ভেবে দেখুন প্রথম ইনিংসে ১৫২ রান করেও ৪২ রানের লিড পেলো অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে একটি ওভার খেলার জন্য ট্রাভিস হেডের সঙ্গে নৈশ প্রহরী হিসাবে স্কট বোলান্ডকে পাঠিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। দিনশেসে ৪/০। অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে ৪৬ রানে।উইকেট পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অস্ট্রেলিয়ার হাতে। দেখতে হবে ৫ দিনের টেস্ট আবারো দুই দিনেই শেষ হয় কিনা। জানি এমসিজি উইকেট নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হবে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভারতে এমন উইকেট হলে সমালোচনার ঝড় উঠতো।

স্মরণে রাখতে হবে অস্ট্রেলিয়া দলে নেই পাট কামিন্স, যশ হেজেলউড এবং এমনকি নাথান লায়ন। যদি এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার মূল পেস আক্রমণের মোকাবিলা করতে হত কি অবস্থা হত ইংল্যান্ডের।বাগে পেয়েও সুযোগ হারালো ইংল্যান্ড।

ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া এশেজ সিরিজ

বক্সিং ডে টেস্ট, এমসিজি

অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ১৫২ অল আউট: ৪৫.২ ওভার (মাইকেল নেসার ৩৫, উসমান খোয়াজা ২৯, আলেক্স কারী ২০, জস টঙ ৫/৪৫, গাস আটকিন্সন ২/২৮)

অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংস ৪/০

ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ১১০ অল আউট: ২৯.৫ ওভার (হ্যারি ব্রুক ৪১, গাস আটকিন্সন ২৮, মাইকেল নেসার ৪/৪৫, স্কট বোলান্ড ৩/৩০, মিচেল স্টার্ক ২/২৩)

ক্রিকেট গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়তার খেলা হলেও এখানেও ইংল্যান্ড দলের বর্তমান হতচ্ছাড়া পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে চুনকালি মেখেই এবার অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরবে থ্রী লায়ন্স।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 + 16 =