এলডিসি উত্তরণ বিলম্বিত করতে জাতিসংঘকে অবিলম্বে অনুরোধ করার আহ্বান

থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ কর্তৃক আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে বাংলাদেশের ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর তারিখে উত্তরণ স্থগিতকরণের অনুরোধ দাখিল করার জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। এলডিসি উত্তরণের ফলে দারিদ্র্য বৃদ্ধির সম্ভাব্য ঝুঁকি ও তথ্য-উপাত্তের অনির্ভরযোগ্যতা বিবেচনা করে উত্তরণ বিলম্বিত করতে যথার্থ সময় পর্যন্ত প্রদানে ইকোসককে অনুরোধ করা উচিত। এই আহ্বানটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত “বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ: প্রস্তুতি ও বাস্তবতা” গোলটেবিল বৈঠক থেকে উঠে এসেছে, যেখানে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, গুরুতর অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা এবং অপর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে উত্তরণের ফলে সম্ভাব্য বাঙ্গালদেশের জনস্বার্থ এবং দীর্ঘমেয়াদী গভীর নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হতে পারে।

রাউন্ডটেবিলে অংশগ্রহণকারী নীতিনির্ধারক, রাজনীতিক, কূটনীতিক, শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন সহযোগী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা একমত হন যে, যদিও সংখ্যাগতভাবে বাংলাদেশ যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করেছে, কিন্তু অনির্ভর তথ্যভিত্তিক বর্তমান বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারণে এই উত্তরণ বিলম্বের চেষ্টা করা আবশ্যক। সম্প্রতি জাতিসংঘের সিডিপি (CDP) ২০২৫ এর ফেব্রুয়ারিতে প্রদত্ত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বেসরকারি খাতের আস্থার ঘাটতির কথা উল্লেখ করে, আলোচনায় একটি যৌক্তিক সময়সীমা নির্ধারণে প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়, যাতে স্মুথ ট্রান্সজিশন স্ট্র্যাটেজি (STS) বাস্তবায়ন, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য চুক্তি সুরক্ষা এবং জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়।

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষণা প্রধান ইশতিয়াক বারী তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশের আসন্ন এলডিসি উত্তরণ দেশের ৭১.৫% রপ্তানিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যেখানে ইইউতে ৮.৭%, যুক্তরাজ্যে ৯.১% এবং জাপানে ফুটওয়্যার ও পোশাকের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ১৫.৮% পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। এছাড়াও, স্বল্পোন্নত দেশ তহবিল (LDCF) থেকে রেয়াতি জলবায়ু অর্থায়ন এবং জলবায়ু অভিযোজন সহায়তা লাভের সুযোগ হারাবে। সুনির্দিষ্ট কাঠামোগত সংস্কার, বৈচিত্র্যময় বাজার কৌশল এবং রাজস্ব সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া উত্তরণের ফলে অর্থনৈতিক লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দেশের মোট রপ্তানির ৮১ শতাংশ তৈরি পোশাক খাতের ওপর নির্ভরশীল এবং বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্য না থাকায় উত্তরণের পর বিভিন্ন প্রধান বাজারে ও পণ্য খাতে শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এতে আমরা শুধু বাণিজ্যিক ক্ষতির মুখোমুখি হবো না, বরং গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সহায়তা হারাতে পারে। উত্তরণের পর বাংলাদেশ আর অগ্রাধিকারভিত্তিক অনুদান ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (WTO) আইনি সহায়তার সুযোগ পাবে না। বাজারভিত্তিক প্রস্তুতি, কাঠামোগত সংস্কার ও আর্থিক সক্ষমতা ছাড়া এই উত্তরণ প্রক্রিয়া শুধু অগ্রাধিকার হারানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বহুমাত্রিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।”

গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থনের বিষয় যোগ করে, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী মন্তব্য করেন: “বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এর উন্নয়নের ফাঁপা বয়ান-ভূয়া পরিসংখ্যান, ভেঙে পড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং রপ্তানির ভিত্তি বিপজ্জনকভাবে সংকীর্ণ অবস্থায় আছে। এলডিসি উত্তরণ ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে হতে পারেনা, প্রকৃত উত্তরণের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে নির্বাচিত সাংসদের মাধ্যমে ম্যান্ডেট প্রয়োজন। গণতান্ত্রিক বৈধতা ছাড়া কোনো মাইলফলকই অর্থবহ নয়।” গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত পোষণ করে বলেন, “উত্তরণ অনিবার্য—কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো: আজ কি সঠিক সময়? এলডিসি স্ট্যাটাস অহংকারের বিষয় নয়, এটি প্রস্তুতির বিষয়। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যে শ্রম ও পরিবেশগত মানকে অগ্রাধিকার প্রদান করছে; এ প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলেছে, বাংলাদেশকে কৌশলগত সুবিধা অর্জনের জন্য এলডিসি উত্তরণে সময় নিতে হবে। নির্ভরযোগ্য তথ্য, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং একটি জাতীয় সংলাপ ছাড়া এই উত্তরণে তাড়াহুড়ো করা আমাদের অর্থনৈতিক অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।” জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম প্রধান সমন্বয়ক সাদিয়া ফারজানা দিনা স্বচ্ছতার উপর জোর দিয়ে বলেন, “নিয়মিত তথ্য নিরীক্ষা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তথ্য ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন।”

চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে যে ঐক্যমত উঠে এসেছে তা স্পষ্ট: বর্তমান পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্জনগুলোকে অগ্রহণযোগ্য ঝুঁকির মুখে ফেলবে। এলডিসি উত্তরণ মর্যাদার প্রতীক বা নীতিগত আনুষ্ঠানিকতা কোনোটিই নয়—এটি একটি গভীর রাজনৈতিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন। অ্যাঙ্গোলা, নেপাল এবং কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো বিলম্ব করতে চেয়েছিল, এবং মিয়ানমার পুরোপুরি অসম্মতি জানিয়েছিল—উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাবের জন্য নয়, বরং সংস্কার প্রস্তুতির অভাবের কারণে। বাংলাদেশও একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। স্বচ্ছ জিডিপি তথ্য, ব্যাংকিং খাতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বা অর্থবহ কর-জিডিপি অনুপাতে অগ্রগতি ছাড়া, আমরা যোগ্যতাকেই প্রস্তুতি বলে ভুল করার ঝুঁকিতে আছি। সংস্কার ছাড়া উত্তরণ উন্নতি তো নয়ই—উল্টো দায়বদ্ধতা এড়ানো আর জনগণের জীবিকাকে বিপন্ন করা। আমাদের অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে: আমরা কি সত্যিই প্রস্তুত, নাকি ভিত্তি শক্তিশালী করার আগেই এলডিসি তালিকা থেকে বের হতে আগ্রহী? এখানে শুধু বাণিজ্য অগ্রাধিকারই ঝুঁকির মুখে নয়, বরং অনুদান-ভিত্তিক জলবায়ু অর্থায়ন হারানোর ঝুঁকিও রয়েছে—যা দুর্বল প্রশাসন এবং প্রাতিষ্ঠানিক জড়তার কারণে আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়াস-এর অধ্যাপক মুশতাক খান মন্তব্য করেন, “এলডিসি স্ট্যাটাস কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটি বৈশ্বিক সুরক্ষার সাথে যুক্ত একটি আলোচনা সাপেক্ষে অর্জিত সুবিধা। বাংলাদেশ উত্তরণের পথে রয়েছে, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতিমূলক কাজ ছাড়াই। আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, বিদ্যুৎ খাতের চুক্তি দুর্নীতিতে জর্জরিত এবং পোশাক খাতের বাইরে আমাদের রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ঠুটো জগন্নাথ—এমন অবস্থায় আমরা উত্তরণ করছি। এই উত্তরণ চামড়া ও খাদ্যের মতো শিল্পগুলোকে অরক্ষিত শুল্কের মুখে ঠেলে দেবে, যা ভারতীয় ও চীনা প্রতিযোগিতার মুখে ধসের ঝুঁকি তৈরি করবে। ইইউ-এর সেফগার্ড থ্রেশহোল্ড এবং ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সামরিকীকরণ উন্নয়নের সুযোগ সংকুচিত করছে, প্রসারিত করছে না। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে ৭-৮ বছর সময় লাগে—আমরা সেই সময়সীমার জন্য প্রস্তুত নই। বিনিয়োগকারীরা আমাদের এলডিসি ব্যাজ নিয়ে চিন্তিত নয়; তারা ব্যবসা করার প্রকৃত খরচ নিয়ে চিন্তিত। আমাদের অবশ্যই যোগ্যতাকে প্রস্তুতির সাথে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। যতক্ষণ না আমরা প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করি, বুদ্ধিমত্তার সাথে আলোচনা করি, নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশীদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি রাজনৈতিক কৌশল গঠন করি, ততক্ষণ আমরা সাফল্যের ছদ্মবেশে ফাঁদে পা দেওয়ার ঝুঁকিতে থাকব।”

আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অফ কমার্সের চেয়ারপার্সন নুরিয়া লোপেজ মানবিক মূল্য এবং সরকারি পদক্ষেপের অপরিহার্যতার উপর জোর দেন: “সবুজ শিল্পের উত্থানের সাথে সাথে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজনিয়তা বাড়বে, কিন্তু উত্তরণে স্থগিতাদেশ ছাড়া ২৫ লক্ষ অদক্ষ শ্রমিক পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়বে। বাংলাদেশকে অবশ্যই অহংকার ত্যাগ করতে হবে এবং কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, উৎপাদনশীলতা এবং গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে যাতে একটি ন্যায়সঙ্গত উত্তরণ নিশ্চিত করা যায়। আমার অবস্থান স্পষ্টতই উত্তরণের পক্ষে ইতিবাচক কিন্তু এখন সময় আসেনি… এখনও পর্যন্ত।” একই সুর শোনা যায় অন্যান্য উদ্যোক্তার কণ্ঠেও। তাদের একজন প্রতিনিধি, দি এম গ্রুপ ইনকর্পোরেটেডের প্রিন্সিপাল কনসালটেন্ট হাফিজ ফিরোজ চৌধুরী বলেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের এ সময়ে, বাংলাদেশকে অবশ্যই কাঠামোগত সংস্কারের উপর উত্তরণকে ভিত্তি করতে হবে—কর-জিডিপি অনুপাত ১৫% এর উপরে তোলা, রপ্তানিখাতকে বহুমুখীকরণ এবং ব্যয়বহুল অভ্যন্তরীণ ঋণের উপর নির্ভরতা কমানো। এসডিজির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া এবং আসিয়ান ও মিয়ানমারের মতো প্রতিবেশীদের সাথে কৌশলগতভাবে জড়িত হওয়া ঐচ্ছিক নয়—এটি একটি টেকসই ও সার্বভৌম ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার জন্য অপরিহার্য।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা নীতি বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (গবেষণা) ড. ওমর ফারুক উল্লেখ করেন, “প্রভাব মূল্যায়ন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে… বিশেষ করে অতীতে সম্ভাব্য বানোয়াট সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকগুলির উপর নির্ভরতার কারণে। আমাদের আর্থিক খাত এখনও দুর্বল এবং অর্থনীতি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়ায়, এই উত্তরণ শুরু করার আগে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য একটি বাস্তবসম্মত মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২-৩ বছরের স্থগিতাদেশের জন্য আবেদন করা প্রয়োজন।”

উন্নয়ন সহযোগীর দৃষ্টিকোণ থেকে, এজেন্স ফ্রঁসেজ দ্য ডেভেলপমেন্ট (এএফডি)-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর সিনথিয়া মেলা বলেন, “আমার ধারণা বাংলাদেশে একটি ‘প্রবৃদ্ধির ভ্রম’ রয়েছে, যা জনগণের প্রকৃত অবস্থার সাথে পুরোপুরি সংগতিপূর্ণ নয়।… জনস্বার্থ ও সামাজিক ন্যায়বিচার ছাড়াও দেশের সম্ভাবনা নিশ্চিতে একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, বাস্তবতার স্পষ্ট মূল্যায়ন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথরেখা তৈরির জন্য সময় প্রয়োজন – যে সময়টি উত্তরণের আগে এখন অত্যন্ত জরুরি বলে মনে হচ্ছে।” ইউএনডিপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ইকোনমিক অ্যাডভাইজার মিঃ ওয়াইস প্যারে বলেন, “বাংলাদেশের শুধু একটি উত্তরণের তারিখ প্রয়োজন নেই—প্রয়োজন একটি পরিকল্পনা যা অতীতের ভুলগুলো এড়িয়ে চলে, বৈচিত্র্য আনে এবং প্রকৃত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।”

নাগরিক সমাজের অনুভূতি তুলে ধরেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি আইয়ুব ভুঁইয়া: “যখন হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন প্রতিবাদ করছে, তখন এলডিসি উত্তরণ একটি মাইলফলক নয়—এটি একটি বিভ্রম। গণতন্ত্র, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং জবাবদিহিতা ছাড়া বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়-টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।” ঢাকা ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এই বিষয়ে স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন, “বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার আগে কাঠামোগত সংস্কার এবং নির্ভুল তথ্য প্রয়োজন।” ড একেএম ওয়াসিকুল করিম বলেন, “বাংলাদেশের ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের অর্থনীতির প্রায় ৫% শুধু ঋণের সুদ বাবদ দিতে হচ্ছে, উত্তরণের ফলে সামনে আরো দায় বাড়তে পারে।’’

জাতিসংঘের সরকারি তথ্য অনুযায়ী মানদণ্ড পূরণের বিষয়টি তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও জাতিসংঘ উইং প্রধান, জনাব এ কে এম সোহেল বিদ্যমান বিকল্প উল্লেখ করেন: “বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডই পূরণ করে। কিন্তু প্রস্তুতি শুধু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা নয়; এটি স্থিতিস্থাপক ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়। আমরা বলছি না যে আমরা গ্র্যাজুয়েট হব না-আমরা বলছি আমাদের বাড়তি সময় দরকার। আমরা একতরফাভাবে স্থগিত করতে পারি না, তবে খরচ, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ঘাটতি বিষয়ক সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আমরা অতিরিক্ত সময় প্রদানের জন্য একটি ন্যায্য যুক্তি উপস্থাপন করতে পারি। ঋণের শর্তাবলী ইতিমধ্যে কঠোর হচ্ছে, শুল্কমুক্ত সুবিধা শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং কৌশলগত সংস্কারের জন্য আমাদের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। পছন্দ আমাদের: পরিকল্পনা নিয়ে এখনই কাজ করুন, অথবা অপ্রস্তুত অবস্থায় এগিয়ে যান।” তবে, অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অপ্রস্তুত অবস্থায় এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অত্যধিক ঝুঁকি বিদ্যমান বলে ব্যাপক ঐকমত্য পরিলক্ষিত হয়।

বাংলাদেশ ডিফেন্স জার্নালের প্রধান সম্পাদক আবু রুশদ তার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা, আঞ্চলিক উত্তেজনা এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ ফাটল উপেক্ষা করার মতো অবস্থায় নেই। জনগণ ১৭ বছর ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি করেছে এবং গণতন্ত্রের নামেও তা পায়নি। যখন ভিত্তি—জনগণের অধিকার ও মর্যাদা—অবহেলিত থাকে, তখন রোলস রয়েসের মতো সাফল্যের প্রতীক দেখাবেন না। সমাধান অবশ্যই রাজনৈতিক হতে হবে এবং তা জরুরিভাবে আসতে হবে।”

সিএসও এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আরও বক্তব্য রাখেন জামশেদ আল জুবায়েদী, মোঃ আব্দুল আলীম, আসলাম বেগ সায়েম, এম মাকসুদ, এস কে রুবাব, মোহাম্মদ আলী বাপ্পী এবং ড. ওয়ারেসুল করিম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

16 + 2 =