দুবাই, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ (বাসস) : ১৫তম এশিয়ার কাপের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ার লক্ষ্যে ফাইনালে আজ মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলংকা-পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের এই আসরে গ্রুপ ও সুপার ফোরের সেরা দল হয়েই ফাইনালের মঞ্চে এই দু’দল। ২০১৪ সালের পর আবারও এশিয়া কাপের ফাইনাল শ্রীলংকা-পাকিস্তান। ফাইনালের আগে সুপার ফোরে দেখা হয়েছিলো দু’দলের। ফাইনালের ‘ড্রেস রিহার্সেল’ ম্যাচে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে শ্রীলংকা। এবার শ্রীলংকার বিপক্ষে ডাবল প্রতিশোধের পালা পাকিস্তানের। কারন ২০১৪ সালে ওয়ানডে ফরম্যাটের ফাইনালে শ্রীলংকার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছিলো পাকিস্তান।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।
এবারের আসরে দুই গ্রুপে ছিলো শ্রীলংকা ও পাকিস্তান। নিজ-নিজ গ্রুপে হার দিয়ে এবারের আসর শুরু করে এই দু’দল। আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে ‘বি’ গ্রুপে আফগানিস্তানের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছিলো শ্রীলংকা। তবে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে সুপার ফোরের টিকিট পায় লংকানরা। ঐ গ্রুপ থেকে ২ ম্যাচ জিতে লংকানদের সাথে সুপার ফোরে উঠে আফগানিস্তান।
সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকার প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। এবার আফগানদের উড়িয়ে দেয় লংকানরা। গ্রুপ পর্বে হারের প্রতিশোধ নেয় তারা। ৪ উইকেটে জয় পায় শ্রীলংকা। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে ফাইনালের পথে এক পা দিয়ে রাখে লংকানরা। আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে শেষ ওভারে ম্যাচের নিষ্পত্তি করে শ্রীলংকা। তবে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করতে হয়নি লংকানদের। ১৭ ওভারের মধ্যে ৫ উইকেটে জয়ে ফাইনালের আগে প্রস্তুতিটা ভালোভাবে সেড়ে নেয় শ্রীলংকা। হার দিয়ে আসর শুরু করে টানা চার জয়ে ফাইনালে মঞ্চে লংকানরা।
অন্য দিকে শ্রীলংকার মত গ্রুপ রার্নাস-আপ হয়ে সুপার ফোরে উঠে পাকিস্তান। ভারতের কাছে ৬ উইকেটের হার দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করে পাকিস্তান। পরের ম্যাচে হংকংকে উড়িয়ে দেয় তারা। ১৫৫ রানের বিশাল জয়ে সুপার ফোরে উঠে পাকরা। বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুন্যে প্রতিপক্ষকে হংকংকে ৩৮ রানে গুটিয়ে দেয় বাবর আজমের নেতৃত্বাধীন দলটি।
সুপার ফোরে ভারতের কাছে হারের প্রতিশোধ নেয় পাকিস্তান। উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভারতকে ৫ উইকেটে হারায় পাকরা। আর পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাত্র ১ উইকেটে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। আফগানদের বিপক্ষে শেষ ওভারের ১ উইকেট হাতে নিয়ে ১১ রানের প্রয়োজন দুই ছক্কায় মিটিয়েছেন দশ নম্বরে নামা নাসিম শাহ। বোলার নাসিমের দুই ছক্কায় ফাইনালে টিকিট পায় পাকিস্তান।
ফাইনালের আগে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচের শ্রীলংকার সাথে লড়াইয়ে হার মানে পাকিস্তান। শ্রীলংকার বোলারদের সামনে ব্যাটারদের অসহায় আত্মসমর্পনে ১২১ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ১২২ রানের টার্গেট ১৭ ওভারের মধ্যে স্পর্শ করে ৫ উইকেটে শ্রীলংকা। তাই হারের স্বাদ নিয়ে ফাইনাল খেলতে নামবে নামতে হওয়ায় হতাশ পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজম।
শ্রীলংকার কাছে হারের পর বাবর বলেন, ‘পাওয়ার প্লেতে আমরা ভাল খেলেছিলাম। কিন্তু তারপর ব্যাটিং ভাল হয়নি। আমরা জুটি বাঁধতে পারলাম না। খারাপ শট খেলে আউট হয়েছে সবাই। ফাইনালের আগে এই ধরনের ব্যাটিং দেখে চিন্তা হচ্ছে। আমাদের আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোলাররা নিজেদের কাজ করেছে। আমাদের পেস বোলাররা ভাল ছন্দে রয়েছে। হাসান দলে ফিরেছে। ব্যাটারদের কোথায় ভুল হচ্ছে সেটা ফাইনালের আগে আলোচনা করতে হবে। আশা করি ফাইনালে সবাই নিজেদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করবে। ফাইনালে জয়ের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’
অন্য দিকে শিরোপা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি শ্রীলংকাও। তবে ফাইনাল নিয়ে লংকানরা অনেক বেশি সতর্ক বলে জানালেন দলের অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তিনি বলেন, ‘ফাইনালের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয় পেয়েছি আমরা । এই জয় বাড়তি অনুপ্রেরণা দিবে। তবে ফাইনাল নিয়ে আমরা অনেক বেশি সতর্ক। পাকিস্তান শক্তিশালী দল। পুরো আসরে তা দেখিয়েছে তারা। ফাইনালে ঘুড়ে দাঁড়াতে মরিয়া থাকবে তারা। তাই পাকিস্তানকে আমরা হালকাভাবে নিচ্ছি না। আমরাও ছাড় দেবো না। ফাইনাল জিততে নিজেদের সেরাটা উজার করে দেবো।’
এবারের এশিয়া কাপ হবার কথা ছিলো শ্রীলংকার মাটিতে। কিন্তু গত এপ্রিলে শ্রীলংকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির কারনে শেষমেষ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরিয়ে নেয়া হয় এশিয়া কাপের আসর। তবে এশিয়া কাপের আয়োজক থাকে শ্রীলংকাই। তাই এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে দেশবাসীর মুখে হাসি ফোটাতে চান শানাকা।
শানাকা বলেন, ‘গত এপ্রিল থেকে ভয়ংকর সময় পার করছে দেশবাসী। চরম খারাপ অবস্থার কারনে জীবন যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। তবে একমাত্র দেশের খেলাধুলার মাধ্যমেই তাদের মুখে সামান্য হাসি ফুটে। এবারের এশিয়া কাপে আমাদের জয়গুলো তাদের আনন্দ দিয়েছে। তাই ফাইনাল জিতে শিরোপা উপহার দিয়ে দেশবাসীকে কিছুটা হলেও আনন্দ দিতে চাই আমরা।’
শ্রীলংকার ব্যাটার-বোলাররা দারুন ছন্দে রয়েছে। দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস ইনিংসের শুরুতে দলকে দুর্দান্ত সূচনা এনে দিচ্ছেন। ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ৬৭ বলে ৯৭ রান করেছিলেন তারা। এখন পর্যন্ত ব্যাট হাতে ৫ ইনিংসে নিশাঙ্কা ১৬৫ ও কুশল ১৫৫ রান করেছেন।
মিডল-অর্ডারে চারিথা আসালঙ্কা ও দানুস্কা গুনাথিলাকার ফর্ম চিন্তায় রেখেছে শ্রীলংকাকে। শেষ দিকে ব্যাট হাতে নেমে ঝড়ো ইনিংস খেলে দলের অনেক জয়ে বড় অবদান রাখছেন শানাকা ও ভানুকা রাজাপাকসে। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত শানাকা ১০৯ ও রাজাপাকসে ১২০ রান করেছেন।
বল হাতে শ্রীলংকার বড় শক্তি স্পিন। স্পিন দিয়ে গত ম্যাচে পাকিস্তানকে ঘায়েল করেছে তারা। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ৬টি উইকেট নিয়েছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন হাসারাঙ্গা।
হাসারাঙ্গার সাথে মহেশ থিকশানার বোলিংও প্রতিপক্ষের মাথা ব্যাথার কারন। ৫ ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। স্পিনারদের সাথে শ্রীলংকার পেসাররাও দারুন পারফরম করে চলেছেন। এ আসরেই অভিষেক হওয়া পেসার দিলশান মুধশাঙ্কা সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নিয়েছেন।
ব্যাট হাতে পাকিস্তানকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২৬ রান করেছেন তিনি। তবে অধিনায়ক বাবরের অফ-ফর্ম চিন্তায় রাখছে পাকিস্তানকে। ৫ ইনিংসে মাত্র ৬৩ রান করেছেন তিনি। মিডল-অর্ডারে ফখর জামান, ইফতেখার ও শাদাব দলের প্রয়োজনে ছোট-ছোট ইনিংস খেলে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারেন।
বোলিংয়ে দারুন ফর্মে আছেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ নাওয়াজ, শাদাব ও নাসিম শাহ। নাওয়াজ ৮ ও শাদাব ৭টি উইকেট নেন। এই আসরে অভিষেক হওয়া নাসিম নিয়েছেন ৬ উইকেট। তবে ব্যাট হাতে এশিয়া কাপের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নাসিম। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে শেষ দিকে দুই ছক্কা যেভাবে পাকিস্তানকে জয় উপহার দিয়েছেন সেটি টি-টোয়েন্টিতে স্মরনীয়ই হয়ে থাকবে।
এখন পর্যন্ত ২২বার টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। এরমধ্যে ১৩বার জিতেছে পাকিস্তান। ৯বার জয় আছে শ্রীলংকার।
টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি লড়াইয়ে পাকিস্তানের জয়ের পাল্লা ভারী থাকলেও, এশিয়া কাপের মঞ্চে বেশি জয় রয়েছে শ্রীলংকার। এশিয়া কাপে ১৬বারের লড়াইয়ে ১১বার জিতেছে লংকানরা। ৫বার জয় আছে পাকিস্তানের।
শ্রীলংকা দল : দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), কুশল মেন্ডিস (উইকেটরক্ষক), দীনেশ চান্দিমাল, দানুশকা গুনাথিলাকা, পাথুম নিশাঙ্কা, চারিথ আসালঙ্কা, ভানুকা রাজাপাকসে, আসিন বান্দারা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাহেশ থিকশানা, জেফ্রি ভান্দারসে, প্রভীন জয়াবিক্রমা, চামিকা করুনারতেœ, দিলশান মধুশঙ্কা, মাথেশ পাথিরানা, নুয়ান্দু ফার্নান্দো, আসিথা ফার্নান্দো, প্রমোদ মধুশান ও নুয়ান থুসারা।
পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, আসিফ আলি, ফখর জামান, হায়দার আলি, হারিস রউফ, ইফতিখার আহমেদ, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), হাসান আলি, নাসিম শাহ, শাহনেওয়াজ দাহানি, মোহাম্মদ হাসনাইন ও উসমান কাদির।