এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শেষ দুটি খেলা

সালেক সুফী

ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ সামনে রেখে ২০২৩ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের মিশন ছিল অনেক কিছু অর্জনের। অনেক নাটকের জন্ম দিয়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশ সাকিব আল হাসানকে দলনায়ক বানিয়ে অপেক্ষাকৃত স্বল্প অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে খেলতে গেলো। ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বঘোষিত ক্রিকেট বিশারদদের কত বিশ্লেষণ কত বিশেষজ্ঞ মতামত। প্রথম খেলায় ক্যান্ডিতে শ্রীলংকার খর্ব শক্তির বোলিং আক্রমণের কাছে ৫ উইকেটের বিশাল পরাজয়ে টুর্নামেন্ট থেকে খালি হাতে ফেরার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। যাহোক আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি দারুন জয় বাংলাদেশকে এগিয়ে যাবার সুযোগ করে দিলো। কিন্তু গ্রুপ ফোরের প্রথম খেলায় আবারো টুর্নামেন্ট ফেভরিট পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে হেরে বাংলাদেশের এখন ত্রিশংকু অবস্থা। কাল খেলবে ভালো অবস্থানে থাকা শ্রীলংকার বিরুদ্ধে এবং শেষ খেলা টুর্নামেন্টের অপর ফেভরিট দল ভারতের বিরুদ্ধে। অতি বাংলাদেশ প্রেমিক ছাই উড়িয়ে রত্ন দেখার স্বপ্ন দেখতে পারেন। বলছি না বাংলাদেশের একটি এমনকি দুটি ম্যাচ জিতে ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা তিরোহিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো বর্তমান অবস্থায় ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় ছিনিয়ে নেয়া আদৌ সহজ হবে না।

আজ বাদে কাল বাংলাদেশকে খেলতে হবে আবারো শ্রীলংকার বিরুদ্ধে।  প্রথম খেলতে কেন বাংলাদেশ হেরে গেলো তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে সহজেই প্রতীয়মান হবে ম্যাচটিতে বাংলাদেশের একাদশ নির্বাচন, টস জয় করে মেঘলা আকাশের নিচে ব্যাটিং নেয়া, টপ অর্ডারে একাধারে চার জন বাম হাতি ব্যাটসম্যান খেলানো সবকিছুই বুমেরাং হয়েছিল। মানতেই হবে লিটন শেষ মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওপেনিং ব্যাটসম্যান নির্বাচনে সমস্যা ছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে তাই বলে হুট্ হাট তানজিদ তামিমকে, মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গী করে সূচনা করানো চৌকষ সিদ্ধান্ত ছিল না।  শ্রীলংকার প্রথম চয়েস ৪ বলার না থাকায় মূল শক্তি ছিল মালিঙ্গার মত স্লিঙ্গার পাথিরানা এবং রহস্য স্পিন বলার থীকসানা।  তামিম জুনিয়রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়া ঠিক হয় নি। দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারে নি নাঈম, সাকিব, হৃদয় বা মুশফিক।  একমাত্র নাজমুল শান্ত ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারেনি শ্রীলংকার বিরুদ্ধে।  লেট্ মিডল অর্ডারে একজন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অভাব দারুন ভাবে ফুটে উঠেছে। ৭.২ ওভার হাতে রেখে ১৬৪ রানে ইনিংস শেষ করে বাংলাদেশের ভরাডুবি ঘটেছে। একই ধরণের ভুলগুলো বাংলাদেশের পুনরায় করার সুযোগ নেই।

কাল বাংলাদেশকে একাদশ নিয়ে অনেক ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেহেতু আনামুল হক বিজয়কে উড়িয়ে নেয়া হয়েছে আমি বিজয়, লিটনকে দিয়ে ইনিংস সূচনার পরামর্শ দিবো। সেই ক্ষেত্রে ওদের একজন উইকেটে থিতু হয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে পারলে বাংলাদেশের সুবিধা হবে। ম্যাচটি জয় যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ তাই সাকিব ৩ নম্বরে ব্যাটিং করে দলের হাল ধরা উচিত হবে। সেই ক্ষেত্রে মেহেদী মিরাজ চার, মুশফিক পাচঁ এবং তাওহীদ হৃদয় ছয় নম্বরে ব্যাটিং করতে পারে। আমি মনে করি বাংলাদেশ আফিফকে এই ম্যাচে ফ্লোটার হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ওকে প্রমোট করে টপ অর্ডারে খেলানো যেতে পারে। বাংলাদেশের লেট্ অর্ডার বাটিংয়ে ভরসা রাখা দায়। তবুও আশা করি , তাসকিন শরিফুল যদি অন্তত ২০-২৫ রান জুড়ে দিতে পারে তাহলে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ২৮০-৩০০ রান করা সাধ্যের বাইরে নয়।  আমি মনে করি অন্তত ২৮০ করলে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ ম্যাচ জয়ের সুযোগ পাবে। শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ম্যাচটিতে জয় পেলে সেটি ভারতের বিরুদ্ধে ভালো খেলার রসদ যোগাবে।

বাংলাদেশ শ্রীলংকা খেলার পরদিন ভারত পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ খেলা। এই খেলায় ভারত হেরে গেলে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ আসবে জয়ের জন্য মরিয়া ভারতকে হকচকিয়ে দেয়ার। শুনতে বিস্ময়কর মনে হলেও আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের ক্ষমতা আছে ভারতকে হারিয়ে দেয়ার।

জানিনা বৃষ্টি কলম্বোতে ম্যাচগুলো পূর্ণ সময় খেলার সুযোগ দিবে কিনা। তাই আকাশের দিয়ে চেয়ে থাকবে দলগুলো। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচগুলোতে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। স্কোয়াড নির্বাচন, অভিজ্ঞদের অবহেলা করে নবীনদের দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যে ভুলগুলো করা হয়েছে তার যথেষ্ট প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে। নতুন করে ভুল হোক চাই না। বাকি খেলাগুলো বাংলাদেশকে অন্তত লড়াই করুক সেটি সবার কামনা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − 18 =