এশিয়া কাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তিরোহিত

সালেক সুফী

ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ এবং পাকিস্তান-শ্রীলংকায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপে অন্যতম পরিণত দল  হিসেবে বাংলাদেশের বড় কিছু অর্জনের স্বর্ণালী সম্ভাবনা ছিল। দলে থাকার কথা কিছু সোনালি প্রজন্মের চারজন বিশ্বমানের অভিজ্ঞ খেলোয়াড় সহ পরিণত হবার পথে মানসম্পন্ন একদল উদীয়মান তরুণ খেলোয়াড়।  কিন্তু বিসিবির কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান প্রাক্তন অধিনায়ক তামিম ইকবাল শেষ মুহূর্তে স্বেচ্ছায় দল থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অনেক  জয়ের নায়ক চৌকষ খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নানা তাল  বাহানা করে বাদ দেওয়া হয়েছে।

রিয়াদের বিকল্প হিসাবে যাদের দলে নেওয়া হয়েছে তাদের কোনো ভাবেই রিয়াদের সঙ্গে দক্ষতা , অভিজ্ঞতা বা বড় প্রতিদ্বন্দীর বিরুদ্ধে চাপের মুখে দলকে উদ্ধার করার ক্ষমতা বিষয়ে তুলনা করার সুযোগ নেই. অবস্থা দৃষ্টিতে প্রতীয়মান যে কোনো মহলের প্রতিহিংসার বলী হয়ে দল থেকে বাদ পড়েছে রিয়াদ।  প্রতিক্রিয়ায় দেশ ব্যাপী ক্রিকেট অনুরাগীরা আন্দোলন  করছে। মিডিয়া ঝড় তুলেছে বিসিবির বিতর্কিত আত্মবিনাশী ভূমিকার কারণে। ফলশ্রুতিতে দলের  প্রচণ্ড চাপ পড়েছে।

এমতাবস্তায় অনেক শক্তিশালী দারুনভাবে প্রস্তুত  ভারত, পাকিস্তান দূরের কথা শ্রীলংকা, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশ লড়াই করতে পারবে কি না নিশ্চিত করে বলা যায় না। বাংলাদেশ যদি অন্তত এশিয়া কাপের প্রথম রাউন্ডে একটি জয় নিয়ে গ্রুপ অফ ফোরে খেলতে না পারে আমি সেই পরিণতির জন্য খেলোয়াড়দের মোটেও  দায়ী করবো না। দোষ দিবো বিসিবির অদূরদৃষ্টি কর্মকাণ্ডের।

সবাই জানে বাংলাদেশের বিতর্কিত হেড কোচ প্রথম পর্বের কার্যকালেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে একটি সংঘাতপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টি  করেছিল। তার  শ্রীলংকায় একটি টি২০ সিরিজ চলা কালে হটাৎ ওই ফরমেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছিল মাশরাফি। তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহকে নিজেদের অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করার কথা বলা হয়েছিল। পর্যায়ক্রমে তামিম, মুশফিক এই কারণেই টি২০ ফরমেট থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর টেস্ট দলে ফিরে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে নিজের সেরা ইনিংস খেলে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করে রিয়াদ।  তাকে টি২০ ফরমেট থেকে বাদ দেওয়া হয়। প্রবল মানসিক চাপ সৃষ্টি করে তামিমকে অনেকটা বাধ্য করা হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে। অবশ্য তামিম প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত অনুরোধে ফিরে আসে। মাহমুদুল্লাহকে বিশ্রামের কথা বলে কয়েকটি সিরিজ থেকে সরিয়ে রাখার পর নানা ছল চাতুরী করে এশিয়া কাপ ১৭ জনের স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হয়।

সবকিছুর পেছনে হেড কোচ সহ বিসিবির একটি অশুভ সিন্ডিকেট জড়িত আছে। প্রশ্ন করা প্রাসঙ্গিক যে অন্য বিকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন হাতুরাসিংহের মত একজন বিতর্কিত শ্রীলংকানকে ফিরিয়ে আনা হলো? প্রথম টার্মে দলকে অগোছালো রেখে জবাবদিহি না করেই ফিরে গিয়েছিল হাতুরাসিংহে।  নিজ দেশের কোচিং থেকেও বিতাড়িত এমনি একজন বিতর্কিত বিদেশির হাতে কেন আবারো দেশের ক্রিকেটের কোচিং দায়িত্ব দেওয়া হলো? দেখলাম এবার সে তার পুত্রকে নিয়ে এসেছে।  অনাকাঙ্ক্ষিভাবে ছেলেকে দলের অনুশীলনের সকল পর্যায়ে দর্শক হিসাবে রাখা হয়েছে। এই বিষরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তি রকিবুল হাসান যে অভিযোগ করেছে তার যৌক্তিকতা আছে। মিডিয়ায় সাংবাদিকরা যে প্রশ্ন তুলেছে তার জবাব একসময় বিসিবিকে দিতেই হবে।

আমি মনে করি নিতান্ত অঘটন না ঘটলে এশিয়া কাপে ভারত অথবা পাকিস্তান শিরোপা জয় করবে। শ্রীলংকার সম্ভাবনা আছে একটি  ম্যাচে ভারতকে দলকে হারিয়ে ফাইনালে যাওয়ার।  আমি তামিম, রিয়াদবিহীন বাংলাদেশের খুব একটা সম্ভাবনা দেখি না। বাংলাদেশ যদি অন্তত গ্রুপ পর্যায়ে একটি ম্যাচ জয় করে গ্রুপ অফ ফোরে যেতে পারে সেটি হবে বড় অর্জন। আর সেটি করতে হলে সাকিব এবং মুশফিককে সামনে থেকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং বাংলাদেশের মানসম্পন্ন পেস আক্রমণকে জ্বলে উঠতে হবে।

এশিয়ার কাপের পর ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড সিরিজ এবং তার পরেই বিশ্বকাপ। দেখলাম মাহমুদুল্লাহ সহ ৮ জন খেলোয়াড়কে বিশেষ অনুশীলনের জন্য ডাকা হয়েছে। ১৭ জন +৩ জন = ২০ জন নির্বাচনের পরেও আরো ৮ জনকে ডাকা নির্বাচকদের আনাড়িপনার আরেক নিদর্শন। বিসিবির কি কোনো জবাবদিহিতা নাই কারো কাছে? ক্রিকেট বিশ্বের অপরাপর দলগুলো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ক্ষেত্র বিশেষে অবসর থেকে ফিরিয়ে আনছে।  আর সীমিত খেলোয়াড় সম্পদ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অভিজ্ঞদের বাদ দিয়ে বৈষয়িক টুর্নামেন্টে ঝুঁকি নিচ্ছে। আশা করি বিসিবির বোধোদয় হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − 7 =