এশিয়া কাপ ২০২৩, কোন দল জিতবে শিরোপা?

সালেক সুফী

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তা-ও আবার সাদা বলের ৫০ ওভার ক্রিকেট।  সাধারণ বিবেচনায় দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত এশিয়া কাপে টুর্নামেন্ট ফেভারিট ভারত এবং পাকিস্তান। কিন্তু বিশ্বাস করুন আর নাই বা করুন উপমহাদেশ তথা বিশ্ব ক্রিকেটের দুটি শক্তিধর দল এখন পর্যন্ত এশিয়া কাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয়নি।

এযাবৎ খেলা ১৪ বারের টুর্নামেন্ট ৭ বার জয় করেছে ভারত, ৫ বার শ্রীলংকা আর মাত্র ২ বার পাকিস্তান, বাংলাদেশ তিন বার ফাইনাল খেললেও জিতেনি একবার। শক্তি, সামর্থ, সামপ্রতিক ফর্ম এবং অভিজ্ঞতার বিচারে এবারের এশিয়া কাপ কিন্তু অনেকটা উন্মুক্ত।

পাকিস্তান, ভারত অনেকের বিবেচনায় ফেভারিট হলেও, বর্তমান শিরোপা ধারী শ্রীলংকা, নবীন, প্রবীনের সম্মিলনে বাংলাদেশ এমনকি কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় সম্মিলনের আফগানিস্তান চমক দেখালে বিস্মিত হবো না।

পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ৬ দেশের এই টুর্নামেন্টে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলবে প্রথম রাউন্ড। সেখনে পাকিস্তান, ভারত, নেপালের গ্রুপটি শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান গ্রুপ থেকে সহজ। গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়তার ক্রিকেট হলেও বলা যায় পাকিস্তান, ভারত অনায়াসেই গ্রুপ অফ ফোরে উন্নীত হবে।

কিন্তু সেই কথা এতো সহজে বলা যাবে না বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তান গ্রুপ নিয়ে। তিনটি দলের প্রতিটির সক্ষমতা আছে পরবর্তী রাউন্ড শুধু নয় এমনকি ফাইনাল খেলা বা শিরোপা জয়ের। শ্রীলংকা শিরোপাধারী দল।  সেই বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়িং রাউন্ড থেকেই চমৎকার ক্রিকেট খেলছে। ওদের ঘরের মাঠেখেলার সুবিধা আছে।

অন্যদিকে আফগানিস্তান দলে সাদা বল ক্রিকেটের কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে। ওরাও খেলার মাঝেই আছে। বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বের বাংলাদেশ কিন্তু নিজেদের দিনে সেরাদের হারিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখে।

প্রথম রাউন্ডের চ্যালেঞ্জ পার হলে বাংলাদেশ যেই কোনো দলের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এবারের দলে কিন্তু সাকিব, মুশফিকের সঙ্গে বেশ কিছু তরুণ, মেধাবী, সাফল্য ক্ষুদার্ত খেলোয়াড় আছে। অন্তত ৫ জন খেলোয়াড় অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ।

আমার মতে গ্রুপ অফ ফোরে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গী হবে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান। তবে শ্রীলংকা-বাংলাদেশের ম্যাচটি হবে খুব গুরুত্ব পূর্ণ।গ্রুপ অফ ফোরে পাকিস্তান ভারত, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ধরে নিলে প্রতিটি খেলা হবে অনেকটা নক আউটের মত। প্রচার, বিশ্লেষণে ভারত এগিয়ে থাকলেও এবারে পাকিস্তান কিন্তু অনেক পরিণত আর প্রস্তুত দল।

শাহীন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ, নাসিম শাহ তুখোড় ফাস্ট বোলারদের পাশাপাশি আছে বাবর আজম, ফখর জামান, ইমামুল হক, মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো বিশ্বসেরাদের অন্যতম সাদা বলের ব্যাটসম্যান। দলটির অধিকাংশ খেলোয়াড়  বেশ কিছুদিন যাবৎ শ্রীলংকায় খেলে পরিস্থিতি এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে।

সর্বোপরি পাকিস্তানের এই দলটিকে নিঃসন্দেহে ওদের ইতিহাসের সেরা ফিল্ডিং ইউনিট বলা যায়। সম্ভাবনা আছে এই টুর্নামেন্টে ভারত পাকিস্তান তিন বার মুখোমুখি হওয়ার। আমি ভারতকে খর্ব শক্তির মনে করছি না। যে স্কোয়াড শিখর ধাওয়ান, রবিচন্দ্র অশ্বিন, চাহালের মতো খেলোড়াদের প্রায় সমমানের খোয়াড়দের নিয়ে গঠন করা হয় তাদের সম্ভাব্য টুর্নামেন্ট জয়ী না বলার কোনো কারণ নেই।

রোহিত, কোহলি, রাহুল, সূর্য কুমার যাদব, শ্রেয়াস আয়ার, রবীন্দ্র জাদেজা, হার্দিক পান্ডিয়ার মতো খেলোয়াড় সমৃদ্ধ দলকে হারিয়ে ট্রফি জয় করতে পাকিস্তান বা অন্য দলকে সেরা খেলা ক্রমাগত খেলতে হবে। তবে এই দলে কোন অফ স্পিনার না থাকা বুমেরাং হতে পারে।

দলে এক্স-ফ্যাক্টর বুমরাহ ফিরে আশায় সামি, সিরাজ, শার্দুল ঠাকুর সমন্বয়ে পেস আক্রমণ সুসংহত হয়েছে। জাদেজা, কুলদীপ যাদব স্পিন আক্রমণ কতটা সামাল দিবে তার উপর নির্ভর করবে দলের জয়। স্বাভাবিক বিবেচনায় ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল কাঙ্ক্ষিত হলেও গ্রুপ ফোরের বাকি দুটি দল বাংলাদেশ, শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানের যে কোনো একটি বা দুটি চমক দেখালেও অবাক হবো না।

কাল পাকিস্তান-নেপালের খেলা দিয়ে শুরু হবে এশিয়া  কাপ। পরের দিন বাংলাদেশ-শ্রীলংকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। শুনেছি ইতিমধ্যেই কেন্ডিতে অনুষ্ঠিতব্য খেলাটির সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।

নানা কারণে বাংলাদেশ এখন আহত বাঘের মত।  শ্রীলংকা বাংলাদেশের বিজয়ী দল টুর্নামেন্টে ঝড় তুললে অবাক হবো না। বিশ্ব জোড়া কোটি ক্রিকেট পূজারীদের মতো চাতক পাখির মত অপেক্ষা করছি ক্রিকেট কার্নিভালের অপেক্ষায়।

পাকিস্তান, ভারত দুটি দল চুল চেরা বিশ্লেষণে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান কিন্তু চমক দেখাতে পারে। এমন অনিশ্চিত খেলা বলেই ক্রিকেট এতো ভালবাসি।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 × five =