এশিয়া কাপ ২০২৩: লংকার লংকাকান্ড, দায় কার?

সালেক সুফী

চার জন প্রথম সারির বোলার শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকায় শ্রীলংকান আক্রমণ অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল। অনেক নাটকের পর  ঢাক ঢোল পিটিয়ে বাংলাদেশ বিতর্কিত এক স্কোয়াড নিয়ে এশিয়া কাপে গেলো। কিন্তু ১৭ কোটি মানুষকে হতাশ করে লড়াই ছাড়াই প্রথম ম্যাচে শ্রীলংকা দলের কাছে শোচনীয়ভাবে ৫ উইকেটে হেরে গেলো বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে গ্রুপের অপর খেলা দুদিন পরে লাহোরে। করো অথবা মরো এই ম্যাচে হেরে গেলেই শূন্য হাতে ফিরতে হবে বাংলাদেশকে। যদি তাই হয়, কে নিবে সেই দায়? নানা বিতর্কে বিপর্যস্ত দল, নির্বাচক মন্ডলী, বিসিবি না হেড কোচ? এই দলকে নিয়ে না ফাইনাল খেলার স্বপ্ন, বিশ্ব জয়ের আশাবাদ। কেন এমন হলো?

কাল ক্যান্ডির পালেকেলেতে যে উইকেটে খেলা হয়েছে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই রান করা অন‍ায়াসলব্ধ ছিল না। তাই বলে প্রথমে ব্যাট করা দল লড়াই না করে আনাড়ীর মত ১৬৪ রানে গুটিয়ে যাবে সেটি কোনভাবেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না। তামিম দলের জন্য কেন বড় ভরসার নাম, কেন আনকোরা নবীন খেলোয়াড়দের দিয়ে বৈষয়িক আসরে ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত, কেন অভিজ্ঞদের রেখে নবীনদের উপর ভরসা করার আসর নয় এশিয়া কাপ সেটি প্রমাণ হতে কি বাকি রইলো?

অভিষিক্ত তানজিদ তামিম বা মোহাম্মদ নাঈম আদৌ প্রস্তুত ছিল না।  শেষ মুহূর্তে উড়িয়ে নেওয়া আনামুল বিজয়কে খেলানোর সুযোগ ছিল না। সাকিব, মুশফিক দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারলো না। একমাত্র নাজমুল শান্ত নিজেকে প্রয়োগ করে ৮৯ রান এবং তৌহিদ হৃদয় কিছুটা প্রতিরোধ না করলে আরো সঙ্গিন হত দলের অবস্থা।

কি করলো তরুণ তুর্কীরা, অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে উপেক্ষা করে যাদের লেট্ মিডল অর্ডারে ভরসা করা হয়েছে? কেন বিতর্কিত লংকান হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের ছলচাতুরীপূর্ণ জারিজুরি ব্যর্থ হল? এগুলোর জবাবদিহি চাইবার কেউ কি আছে।

আমি প্লেয়ার অফ টি ম্যাচ  শ্রীলংকার মাথিশা পাথিরানা (৪/৩২) দুরন্ত বোলিংকে খাটো করবো না। লংকান কিংবদন্তি স্লিঙ্গার মালিঙ্গার মত বোলিং করা তরুণ কাঁপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। ভালো বোলিং করেছে বাম হাতি চায়না ম্যান বলার মাহেশ থাকসিনা (২/১৯)।

উইকেট কঠিন ছিল সহজে স্ট্রোকস নেওয়ার জন্য। কিন্তু তাই বলে প্রত্যাশী একটি দল ৫০ ওভার খেলতে পারবে না। ১৬৪ রানে অসহায়ের মত আত্মসমর্পণ করবে সেটি মেনে নেওয়া যায় না। একমাত্র নিজেকে প্রয়োগ করে সংগ্রাম করেছে নাজমুল হোসেন শান্ত।  ১২২ বল খেলে ৮৯ রান করে ইনিংসটা ধরে রেখেছিলো। শাকিব বা মুশফিক যেভাবে দায়িত্বহীনের মত উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে সেটি দৃষ্টিকটু লেগেছে।

বোলারদের জন্য পর্যাপ্ত রান ছিল না ডিফেন্ড করার। তবুও তাসকিন, শরিফুল ভালো শুরু করেছিল। কিন্তু যে ভুল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা করেছে ৯.২ ওভারে ৪৩ রানে ৩ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা সেটি করেনি। রানের চাপ ছিল না। সামারাবিক্রমা (৫৪) এবং আসালংকা (৬২) ধীরে সুস্থে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৭৮ রান যোগ করে জয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।

সাকিব দুটি উইকেট তুলে নিলেও অনায়েসে ১৬৫/৫ করে ৬৬ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের সহজ জয় পেয়েছে শিরোপাধারী দল। বাংলাদেশ পড়েছে বিশাল সংকটে। দুদিন বাদে ঘুরে দাঁড়িয়ে আফগানিস্তানকে হারাতেই হবে। না হলে ফিরতে হবে শূন্য হাতে। দেশে ফিরে ব্যর্থতার কোনো অজুহাত থাকবে না। বাংলাদেশ দলের অনেক কিছই প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

ভালো খেলে সহজে ম্যাচ জয়ের জন্য শ্রীলংকা দলকে পূর্ণ কৃতিত্ব দিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবো না। এই জয়ে গ্রুপ অফ ফাইভে এক পা রেখে দিলো ওরা।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 − two =