এশেজ ২০২৩: ক্রিকেট ক্রসেড জয়ে আগুয়ান অস্ট্রেলিয়া

সালেক সুফী

প্রথমে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং এরপর সনাতন প্রতিদ্বন্দ্বী সঙ্গে ওদের আঙিনায় এশেজ সিরিজ নিয়ে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে আসা অস্ট্রেলিয়া প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চলতি সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষ সময়ে লড়াই করে জয়ের পর ক্রিকেট মক্কা লর্ডসে শুরু থেকেই চালকের ভূমিকায় ছিল ক্যাঙ্গারু বাহিনী। সবুজ ঘাসের উইকেট, মেঘে ঢাকা আকাশ, বোলারদের জন্য উপযোগী পরিবেশে সমসাময়িক বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা নতুন বল বলার স্টুয়ার্ট ব্রড এবং জেমস এন্ডারসনকে মোকাবিলা করেও অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান করে কাজের কাজটি করে।

ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস সঠিক পথেই এগিয়েছিল। দ্বিতীয় দিনশেষে ২৭৮/৪ করে ওরা  লড়াই করার ইঙ্গিত দিয়েছিলো। তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া দ্রুত গতির পাঁজর নিশানায় বোলিং করে ইংল্যান্ড ইনিংসে কাঁপুনি তুলে ৩২৫ রানে ওদের ইনিংস গুটিয়ে দিয়ে ৯১ রানে এগিয়ে থাকলো।  আরো সুবিধা হলো ইংল্যান্ডের ক্রমাগত ১০০ টেস্ট খেলে নতুন মাইলফলক স্থাপন করা স্পিনার নাথান লায়ন পায়ের কাপ মাসেল আহত হয়ে পড়ে।

ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে খাটো লেংথের বোলিং করে সাফল্য পেলেও ২৭৯ রান করে অস্ট্রেলিয়া ৩৭০ রানে এগিয়ে থাকলো। দ্বিতীয় ইনিংসে দ্রুত গতির এবং পরিবেশ এবং উইকেট অনুযায়ী অধিকতর উপযোগী বোলিং করে চতুর্থ দিন শেষে ইংলান্ডকে ১১৪/৪ করে কোনঠাসা করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া। এই অবস্থায় ৬ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ দিনে ২৫৭ করে ম্যাচ জয়  ইংল্যান্ডের সামর্থ আছে কিনা সেটি নিয়ে জোরালো যুক্তি নেই. এই টেস্ট জিতে নিয়ে ২-০ অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেলে সেখান থেকে ফিরে আসা অনেকটাই দুরূহ হয়ে  যাবে থ্রি লায়ন্সদের।

তৃতীয় দিনের শেষ দিকে বৃষ্টি এবং আলোক সল্পতার জন্য দিনের খেলা পরিত্যক্ত হবার সময়েও অস্ট্রেলিয়া সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। কাল চতুর্থ দিন ইংল্যান্ড লেংথে বোলিং কৌশল  নিয়েছিল। যদিও ইংল্যান্ড আক্রমণে এখন ১৪০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতির বোলার নেই তবুও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা ২৭৯ বেশি রান করতে পারে নি। এমনকি ওদের আহত নাথান ল্যায়নকেও উইকেটে পাঠাতে হয়। বিরোচিত লায়নের সাহসী ভূমিকাকে সবাই ভূয়সী প্রশংসা করে। বিশাল ৩৭১ রান করে ম্যাচ জয়ের টার্গেট ছুড়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। পরিস্থিতি মোতাবেক যেটি যথেষ্ট বলেই মনে হয়।

বল হাতে মিচেল স্টার্ক এবং পাট কামিন্স উইকেটের মেজাজ মর্জি অনুযায়ী বোলিং করে ইংল্যান্ডকে কোনঠাসা করে ফেলে। শুরুতেই দুর্দান্ত দুটি সুইং বলে স্টার্ক মাত্র ১৩ রানে ক্রলি এবং পোপকে ফেরত পাঠায়।  ফেরাতে পারতো দিন শেষে ৫০ রানে অপরাজিত থাকা বেন ডাকেটকে।  অন্তত দুবার আউট হতে হতেও বেচে যায় ডাকেট।  কামিন্স রুট এবং ব্রুককে ফেরালে দিনশেসে ইংল্যান্ডের রান দাঁড়ায় ১১৪/৪।

উইকেটে ডাকেটের  সাথী অধিনায়ক বেন স্টোকস।  ম্যাচ জয় করে সিরিজে টিকে থাকতে প্রয়োজন আরো ২৫৭ রান। শেষ দিনের উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার মানসম্পন্ন আক্রমণের মোকাবিলায় ইংল্যান্ডের লেট মিডল অর্ডার কাজটি পারবে বলে ভরসা হয় না। বিশেষত যখন খুনে মেজাজে আছে স্টার্ক, কামিন্স।  সঙ্গী হ্যাজেলউড এবং গ্রিন। তবে একটা কথা টেস্ট ক্রিকেটে শেষ কথাটা আগাম বলা সব সময় দুরূহ।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − thirteen =