ঐতিহাসিক এই জয়ে আগ্রাসী ব্যাটিং মূল ভূমিকা পালন করেছে: মিরাজ

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে জয়ের পিছনে আগ্রাসী ব্যাটিং মূল ভূমিকা পালন করেছে বলে স্বীকার করেছেন অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। প্রথম ইনিংসে ১৬৪ রানে গুটিয়ে যাবার পরও দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুড়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটাররা। এরপর বাকি কাজটুকু সেড়েছেন টাইগার বোলাররা।

টেস্ট ফর্মেটে  ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বারবার হতাশায় ম্যাচ শেষ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ভাল খেলতে খেলতে হঠাৎ করেই ব্যাটিং লাইন-আপে ধ্বস নামে। এর থেকে বেরিয়ে আসার শত চেষ্টা করেও সফল হতে পারছে না টাইগাররা। ক্যারিবীয় সফরে প্রথম টেস্টেও সেই একই চিত্রই ফুটে উঠেছিল। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটারদের প্রতিরোধের পর বোলাররা জয় সহজ করে দেয়।

মিরাজ বলেছেন কৌশলগত পরিকল্পনার মূল অংশ ছিল আগ্রাসী ব্যাটিং। যা ব্যাটাররা ভালমতই করতে পেরেছে। আর সে কারনেই ১০১ রানের জয় নিশ্চিত হয়েছে।

এক ক্যালেন্ডার বছরে বিদেশের মাটিতে এই জয় বাংলাদেশের তৃতীয় ও সর্বোচ্চ জয়। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের ১৫ বছর পর ক্যারিবীয় সফরে এটাই প্রথম টেস্ট ম্যাচ জয়।

জ্যামাইকার সাবিনা পার্কে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের পর মিরাজ বলেছেন, ‘এখানকার উইকেট বেশ কঠিন। আমি মনে করেছি আমরা যদি যথেষ্ট ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে না পারি তবে সেটা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। সে কারনেই আমি ব্যাটারদের বলেছি ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে খেলতে। দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা সেই পরিকল্পনায় সফল হয়েছি। ১৮ রানের লিড নিয়ে আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছিলাম। আমাদের সামনে সুযোগ ছিল সেই লিডকে বাড়িয়ে নেবার। ২৫০’র বেশী রান করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এ কারনেই ম্যাচ জয় সহজ হয়েছে।’

মিরাজ আরো বলেন কিছু খেলোয়াড়ের ব্যাটিং অর্ডারও পরিবর্তণ করা হয়েছে যা সতীর্থ অনেককেই বিস্মিত করেছে, ‘মমিনুল ভাই অসুস্থ ছিল। সে কারনে আমি দিপুকে (শাহাদাত হোসেন) বলেছিলাম ৩ নম্বরে ব্যাটিং করতে। এমনকি আমিও নিজের ব্যাটিং অর্ডারও পরিবর্তণ করে ৪ নম্বরে নেমেছিলাম। এসব কারনেই দ্রুত রান এসেছে।

আমি দিপুকে বলেছি ইতিবাচক থাকতে। তুমি যদি মনে করো প্রথম বলটি স্বস্তিতে খেলতে পারছো তবে হিট করো, কেউ তোমাকে কিছু বলবে না। আমি তোমাকে সেই স্বাধীনতা দিচ্ছি। সবাই ঐ সময় কিছুটা অস্বস্তিতে ছিল। দিপুর ২৮ রান আমাদের জন্য ঐ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি যখন চার নম্বরে নামি আমিও সেই একই মানসিকতা নিয়ে ক্রিজে ছিলাম।’

দ্বিতীয় ইনিংসে সবচেয়ে আগ্রাসী ছিলেন জাকের আলি অনিক। ১০৬ বলে তার করা ৯১ রানের ইনিংসই বাংলাদেশের জয়ের ভিত্তি গড়ে দেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে ২৮৭ রানের টার্গেট দাঁড়ায়।

প্রথম ইনিংসে ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা ৬১ রানে ৫ উইকেট প্রাপ্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশ ১৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে। এরপর বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৫০ রানে ৫ উইকেট তুলে নিলে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়।

নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসের শান্তর ইনজুরিতে মিরাজ দলকে নেতৃত্ব দেবার সুযোগ পেয়েছেন। সবাই তার সাজেশন অনুসরণ করেছেন বলে মিরাজ দারুন খুশী, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে ম্যাচে ফিরে আসার সক্ষমতা আছে। প্রথম টেস্টে পরাজয়ের পরও আমি এই একই কথা বলেছিলাম। অবশ্যই টেস্ট সিরিজ ড্র করায় আমি দারুন খুশী।

এটা আমার জন্য অনেক বড় একটি অর্জন। কারন প্রথমবারের মত আমি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছি। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেস্ট ম্যাচে জয়ী হয়েছে। খেরোয়াড়রা সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে। সে কারনেই আমি এই জয়ে প্রত্যেককে কৃতিত্ব দিতে চাই। আমি যেভাবে বলেছি সেটা তারা অনুসরণ করার চেষ্টা করেছে।’

মিরাজ আরো বলেছেন প্রতিটি খেলোয়াড়ই মন থেকে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের জন্যই খেলেছে, ‘এটা সত্যিই অসাধারণ এক অনুভূতি। সবাই এক ছিল এবং ম্যাচ জয়ের জন্য প্রস্তুত ছিল। এই ধরনের কন্ডিশন প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্যই কঠিন। কিন্তু সবাই মন থেকে চেয়েছে ম্যাচটি জিততে।’

বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven + eleven =