হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। প্রতি বছর আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা শুরু হয়। এর ৯ দিনের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় উল্টো রথযাত্রা। এবারের উল্টো রথযাত্রা হবে আগামী ২৮ জুন। তবে ঈদুল আজহার কারণে রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) উল্টো রথযাত্রার অনুষ্ঠান একদিন এগিয়ে ২৭ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।
রথযাত্রা একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত। জগন্নাথ দেবের রথযাত্রার প্রচলন পুরী জগন্নাথ দেবের মন্দির থেকে। বাংলাদেশেও রথযাত্রা হিন্দুদের একটি পবিত্র উৎসব। ঢাকার উপকণ্ঠে ধামরাইয়ে এ রথযাত্রা যশোমাধবের রথযাত্রা নামে উপমহাদেশ বিখ্যাত। গাজীপুরের জয়দেবপুরে এই রথযাত্রা মাণিক্যমাধবের রথযাত্রা নামে পরিচিত।
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উপলক্ষে ইসকন মঙ্গলবার থেকে ঢাকায় আট দিনের মহোৎসব উদযাপন করবে। মঙ্গলবার ইসকনের স্বামীবাগ আশ্রম মন্দির প্রাঙ্গণে বেলা ১১টায় বিশ্বশান্তি ও মঙ্গল কামনায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞের মাধ্যমে মহোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। দুপুরে আশ্রমে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা শেষে উৎসবের উদ্বোধন ও বর্ণাঢ্য রথ শোভাযাত্রা; যা শেষ হবে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে। মহোৎসব অনুষ্ঠানমালায় আরও রয়েছে– হরিনাম সংকীর্তন, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, পদাবলি কীর্তন, আরতি কীর্তন, ভগবত গীতা পাঠ, ভাগবত কথা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, জগন্নাথ লীলামৃত এবং ধর্মীয় নাটক মঞ্চায়ন। ২৭ জুন ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে স্বামীবাগ আশ্রম পর্যন্ত উল্টো রথযাত্রার মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব।
এ দিন পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের জগন্নাথ জিউ ঠাকুর মন্দির, জয়কালী রোডের রামসীতা মন্দির এবং শাঁখারীবাজার একনাম কমিটিসহ রাজধানীর অন্যান্য মন্দির ও দেশের বিভিন্ন মন্দিরেও রথটান অনুষ্ঠিত হবে। রথযাত্রা উপলক্ষে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিত্রয় ঊষাতন তালুকদার, অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মনীন্দ্র কুমার নাথ এবং সাধারণ সম্পাদক রমেন মণ্ডল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এদিকে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী যশোমাধবের রথযাত্রা উৎসব ও মাসব্যাপী মেলা উপলক্ষে রাজধানীর অদূরে ধামরাইয়ে বইছে সাজসাজ রব। এরই মধ্যে যশোমাধব মন্দির ও রথ পরিচালনা পরিষদ রথের যাবতীয় মেরামতসহ সাজসজ্জার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আজ বিকেল ৪টায় ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়ার অস্থায়ী মঞ্চে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে ও পায়রা উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
উদ্বোধনের পর ভক্তরা কায়েতপাড়া থেকে ৪২ ফুট উচ্চতার তিন তলা রথ রশি ধরে টেনে নিয়ে যাবেন যশোমাধবের শ্বশুরবাড়িখ্যাত যাত্রাবাড়ী মন্দিরে। সেখানে পূজা-অর্চনা শেষে ৯ দিন পর ২৮ জুন রথ উল্টো টেনে আবার আগের স্থানে আনা হবে। তবে রথ উৎসবের মেলা চলবে এক মাসব্যাপী।
ধামরাই থানার ওসি (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস জানান, রথযাত্রা ও মেলা সফল করতে রথ পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি তিন শতাধিক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্য মোতায়েন থাকবে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে মেলাঙ্গনে নজরদারি করবেন।
রাজধানীতে যান চলাচলে ডিএমপির বিশেষ নির্দেশনা
রথযাত্রা উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে যান চলাচলে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রধান রথযাত্রাটি মঙ্গলবার দুপুরে ইসকনের স্বামীবাগ আশ্রম মন্দির থেকে শুরু হয়ে জয়কালী মন্দির, ইত্তেফাক মোড়, শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলা মোড়, রাজউক ক্রসিং, গুলিস্তান, গোলাপশাহ মাজার, পুলিশ সদরদপ্তর, সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, হাইকোর্ট মাজার, দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, জগন্নাথ হল, পলাশী হয়ে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। এ সময়ে ওইসব সড়কে চলাচল করা যানবাহনকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছে ডিএমপি।