নীলাঞ্জনা নীলা
বর্তমান সময় অতিরিক্ত ওজন একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অতিরিক্ত ওজনের ফলে মানুষের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নানা রকম জটিলতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে যেকোনো মানুষ তার আদর্শ ওজন ধরে রাখতে পারলে অনেক ধরনের রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারে। কিন্তু যান্ত্রিক এই জীবনে ওজন ধরে রাখাই যেন কষ্টসাধ্য। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠে যে যার কর্মব্যস্ততা শুরু করে দেয়। এর মধ্যে সঠিক খাবার নিয়ম মেনে খাওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া ব্যস্ততা এবং ক্লান্তিতে নিজের জন্য সঠিক খাবার তৈরি করাও বেশ কঠিন। বিভিন্ন কারণে ওজন বাড়তে পারে। তাদের মধ্যে বংশগত কারণ, অধিক খাদ্য গ্রহণ, শারিরীক পরিশ্রম বা ব্যায়াম না করা, হরমোনের সমস্যা, ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, দুশ্চিন্তা, খাবারের সঠিক সময় মেনে না চলা। এছাড়াও নানা কারণে ওজন বাড়তে পারে। তাই অনেকেরই নির্ভরশীল হতে হয় বাইরের খাবারের উপর। বাইরের খাবারে অতিরিক্ত তেল মশলা ওজন বাড়িয়ে দেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেকে ওজন কমানোকে খুব কঠিনভাবে দেখে। সুতরাং ওজন কমানোর যাত্রা তারা শুরু করতে আতঙ্কিত থাকে। ফলে ধীরে ধীরে ওজন বাড়তেই থাকে এবং দেখা দিতে থাকে নানা রকম রোগ। কিন্তু ওজন কমানোর যাত্রাকে খুব কঠিন চোখে না দেখে সহজ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে খুব সহজে কমিয়ে ফেলা সম্ভব ওজন।
বাস্তবধর্মী লক্ষ্য ঠিক করুন
অনেকেই মনে করেন এক মাসের মধ্যে ১০ থেকে ২০ কেজি কমিয়ে ফেলবেন। যেটা প্রায় অসম্ভব কারণ আপনার ওজন যেমন একদিনে বেড়ে যায়নি তেমনি একদিনে ওজন কমানো সম্ভব নয়। ওজন কমানোর যাত্রায় বাস্তবধর্মী একটি লক্ষ্য ঠিক করা অনেক বেশি প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের মতে মাসে তিন কেজির বেশি ওজন কমানো উচিত নয়। আপনার কতটুকু ওজন কমবে তা নির্ভর করছে আপনার জীবনযাত্রা এবং মেটাবলিজমের উপরে। সবদিক বিবেচনা করে একটি বাস্তবধর্মী লক্ষ্য ঠিক করুন এবং তা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। যেকোনো কাজে সফলতা পাওয়ার জন্য লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন। লক্ষ্য ছাড়া কাজ শুরু করলে তা পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ঠিক কতদিনে আপনি কত কেজি ওজন কমাতে চান তার একটি বাস্তবধর্মী তালিকা তৈরি করে ডায়েরিতে লিখে রাখুন।
মানসিক প্রস্তুতি
ওজন কমানোর আগে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ ওজন কমানো শুরু করলে জীবনযাত্রার অনেক পরিবর্তন আসে। অনেকে সহজে সে পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না। যেমন ওজন কমানোর যাত্রা শুরু করলে কিছুটা অসামাজিক হয়ে যেতে হয়। অনেক দাওয়াতে অংশগ্রহণ করা যায় না, বন্ধুদের আড্ডায় অনেক খাবারকে না করতে হয়। এছাড়া দ্রুত ঘুম থেকে ওঠা সময়মতো ঘুমাতে যাওয়ার মতো বেশকিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে হয়। প্রথম দিকে হঠাৎ করে নতুন জীবনে অভ্যস্ত হতে সময় লাগে এবং অনেকে এটি মেনে নিতে পারে না। তখন দেখা যায় হুট করে তারা ওজন কমানো থেকে বের হয়ে যায় এবং হতাশ হয়ে পড়ে। তাই ওজন কমানো শুরু করলে আপনার জীবনে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে এবং এ পরিবর্তনগুলো কিভাবে সামলাতে হবে সকল বিষয় ধারণা নিয়ে মানসিক প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন।
ভাতকে ‘না’ নয়
মাছে ভাতে বাঙালি। বাঙালিরা ছোটবেলা থেকেই ভাত খেয়ে বড় হয় এবং ভাতেই তারা অভ্যস্ত। অনেকের কাছে তো ভাতের আরেক নাম আবেগ। অনেকে মনে করেন ডায়েট শুরু করলে সবার আগে ভাতকে না করতে হবে। এই ভয় অনেকের ডায়েট শুরু করতেই পারে না। কিন্তু ডায়েট শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ভাত খাওয়া বন্ধ করে দিলে শরীরে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। যেমন রক্তের সুগারের পরিমাণ কমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে থাকা, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারার ইত্যাদি। তাই ডায়েটের শুরুতেই ভাত বন্ধ না করে বরং ভাতের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনতে হবে।
ব্যায়াম করুন
অনেকে ওজন কমানোর জন্য শুধুমাত্র খাওয়া বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কোনো প্রকার শারীরিক পরিশ্রম করতে চায় না। এতে শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মাসল ভাংতে থাকে। সঠিক পদ্ধতিতে ওজন কমানোর নিয়ম হলো খাবার মেপে খাওয়ার পাশাপাশি অবশ্যই শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করতে হবে। ব্যায়াম মানে যে আপনাকে খুব কঠিন ব্যায়াম করতে হবে জিমে গিয়ে এমন নয়। যেকোনো সহজ ব্যায়াম দিয়ে আপনি শুরু করতে পারেন। যেমন প্রতিদিন ৪০ মিনিট হাঁটা যেতে পারে।
চিট ডে পালন করুন
‘চিট ডে’ যারা ডায়েট করে তাদের কাছে খুব পরিচিত একটি শব্দ। এটির মানে হচ্ছে ডায়েটের মধ্যে যেকোনো একদিন চিট করে নিজের পছন্দের খাবার গ্রহণ করা। কিন্তু অনেকে এই চিট ডে পালন করতে ভয় পায় তারা মনে করে এতে ওজন আরো বেড়ে যাবে। কিন্তু ডায়েটের মধ্যে চিট ডে পালন করা খুব বেশি জরুরি। দিনের পর দিন নিজেকে পছন্দের খাবার থেকে দূরে রাখার ফলে ডায়েট এবং ওজন কমানোর প্রতি অনীহা চলে আসতে পারে। সপ্তাহে এক দিন চিট ডে পালন করলে উৎসাহ পাবেন।
হতাশ হবেন না
খুব দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পেলেও ওজন কমানো কিছুটা কষ্টকর। অনেক চেষ্টার ফলেও অনেকের ওজন কমতে চায় না। কারণ দিনের পর দিন ধরে জমে যাওয়া চর্বি কমতে সময় লাগে। দেখা যায়, ডায়েট শুরু করলে শরীরের পানি কমে দ্রুত ওজন কমে যায়। কিন্তু কিছুদিন পর ওজন ধীর গতিতে কমতে থাকে। এর ফলে অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে ডায়েট করা বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে ওজন কমতে সময় লাগে। তাই অবশ্যই ধৈর্য নিয়ে ওজন কমানো শুরু করতে হবে।
নিজের শরীরকে চিনুন
অনেকেই বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়-স্বজন কারও ওজন কমাতে দেখে তা অনুসরণ করার ডায়েট ফলো করে ওজন কমানো শুরু করেন। কিন্তু ওজন কমার বদলে বরং ক্ষতি হয়। কারণ সবার শরীর এক রকম নয়। সবার শরীর এক রকম ডায়েটে সাড়া দেয় না। অনেকে দিনের পর দিন কার্বোহাইড্রেট না খেয়ে ডায়েট করে ওজন কমিয়ে ফেলে। কিন্তু আবার আপনার ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে কার্বোহাইড্রেট ছাড়ার সাথে সাথে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই ডায়েট শুরুর আগে শরীর চেনা জরুরি। ডায়েটে শরীরে কী প্রভাব পড়তে পারে তা জানতে হবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত নিন
অনেকের শারীরিক জটিলতার ফলে ওজন বেড়ে যায়। ফলে তারা অনেক ধরনের ডায়েট ও ব্যায়াম অনুসরণ করলেও তাদের ওজন কমতে চায় না। অন্যদিকে ডায়েট শুরু করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেক্ষেত্রে অবশ্যই পুষ্টিবিদদের পরামর্শ নিয়ে ডায়েট করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে কারো যদি ১০ কেজিরও বেশি ওজন কমানোর প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী কমানো উচিত।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী