ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা

সালেক সুফী: সাকিব, তামিম, মাহমুদুল্লাহ তিন পাণ্ডবকে তিন ফরম্যাটে  অধিনায়ক করে পূর্ণাঙ্গ সফরে বাংলাদেশ দল কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে রওয়ানা হয়েছে। প্রত্যাশা সকল ফরম্যাটে ঘুরে দাঁড়ানো। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলও পরিবর্তনের জোয়ার।  শক্তি-সামর্থের চুলচেরা বিচারে অতীতের ছায়া হলেও সব ফরম্যাটে দেশের মাটিতে এখনো অনেক শক্তিধর দল।  ওডিআই সিরিজ নিয়ে আশাবাদী হয় গেলেও টেস্ট সিরিজ এবং টি ২০ সিরিজ নিয়ে আশাবাদী হওয়া সাহসের পরিচায়ক হবে।

ক্রমাগত পরাজয় আর দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে টেস্ট আঙিনায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ২০০০ থেকে ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলিং পরিবারের সদস্য বাংলাদেশ। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে টেকসই উন্নয়ন হয়নি। একটি প্রদ্বন্দিতামূলক টেস্ট দলের অবয়ব গড়ে উঠেনি। কালেভদ্রে হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো দুই একটি সাফল্য আসলেও এখনো ৫ দিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টেস্ট ক্রিকেট খেলার মানসিকতাই গড়ে উঠেনি। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রশ্নই আসে না; পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমনকি আফগানিস্তানের সাথেও টেস্ট হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

টেস্ট ক্রিকেটের বর্তমান অবস্থার কারণ খুঁজতে আলবার্ট আইনস্টাইন হবার প্রয়োজন নেই। ক্রিকেট প্রেমিক বাংলাদেশের আবাল বৃদ্ধ বণিতা জানে কোথায় দুর্বলতা, কি করতে হবে। শুধু জানে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। হয়তো জানার আগ্রহ বা ক্ষমতা কোনোটাই নাই।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় সাকিব আল হাসানকে তৃতীয় বারের মতো টেস্ট অধিনায়ক করা হচ্ছে। বর্তমানে দুর্দান্ত ব্যাটিং ফর্মে থাকা লিটন কুমার দাসকে করা হয়েছে সহঅধিনায়ক। খেলোয়াড় হিসাবে বা অধিনায়ক হিসাবে সাকিবের যোগ্যতা দক্ষতা তর্কের ঊর্ধ্বে। তবে নৈতিকতার মানদণ্ডে কয়েকবার বহিষ্কৃত হয় একজন খেলোয়াড়কে অধিনায়ক করায় দ্বিমত থাকা স্বাভাবিক।

বাজিকরদের সঙ্গে সংযোগের কথা গোপন করে আইসিসি নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর এই প্রথম সাকিবকে আবারো অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হলো। একবছরের বহিষ্কার সাজা থেকে ফিরে নানা কারণে সাকিব দেশের হয়ে নিয়মিত খেলেনি। ব্যাবসা-বাণিজ্যের দিকে খুব মনোযোগী হয়ে পড়েছে। সতীর্থ কারো কারো সাথে এমনকি বিসিবির কোনো কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে টানাপোড়েনের কানা ঘুষা  আছে। যাক সে কথা, আশা করি সাকিবের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়বে বাংলাদেশ।

টেস্ট ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে মূল সমস্যা চাপের মুখে বার বার ভেঙে পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাটিং। না পারছে পেস বোলারদের বুক চিতিয়ে মোকাবিলা করতে, না খেলতে পারছে স্পিন। বিশেষত পাঁচ দিনের টেস্টে তিন বা চার দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেই পঞ্চম দিনে খেই হারিয়ে ফেলছে। শুনলাম এবার দলকে সেনাবাহিনীর মনোবিদরা মানসিকভাবে চাঙ্গা হতে সহায়তা করেছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস বোলিং আক্রমণ অনেক সমৃদ্ধ। গত সফরে বাংলাদেশ একটি টেস্ট ইনিংনে ৪৩ রানে সব উইকেট হারিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং বাংলাদেশে দুই ধরনের বোলিং আক্রমণের মুখে বাংলাদেশ ব্যাটিং মেরুদণ্ডহীন মনে হয়েছে। তদুপরি দলে ব্যক্তিগত কারণে নেই মুশফিকুর রহিম। সফরের শুরুতেই দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ।  বাংলাদেশ দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিরুদ্ধে কৃষ্ণ ধোলাই হয়েছিল। দেখা যাক সাকিব দলটাকে কতটুকু সঞ্জীবনী সুধা ঢেলে দিতে পারে। আমি তামিম, জয়, মোমিনুল, লিটন, সাকিবের ব্যাটিংয়ের দিকে চেয়ে থাকবো। ৩৫০ রান প্রতি ইনিংসে করতে না পারলে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারবে না। বোলিং নিয়ে আমি আশাবাদী।  মুস্তাফিজ টেস্ট খেললে এবং তাসকিন ফিরে আসলে পেস আক্রমণ গতি পাবে। তবে উইকেট নিতে হবে শাকিব তাইজুলদের।

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দুর্বল। টেস্ট সিরিজটা পরে হলে বাংলাদেশ উইকেট আর পরিবেশের সঙ্গে ধাতস্ত হবার সুযোগ পেতো।  এখানেও ক্রিকেট দূতিয়ালিতে দুর্বলতা।  দূরদৃষ্টির অভাব বলবো। তারপরেও নিজেদের দেশ আশা রাখতেই হবে। আমি ওডিআই সিরিজ জয় এবং টি ২০ সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আশা করি। টেস্ট সিরিজ নিয়ে আশাবাদী হতে পারছি না।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eight + 11 =