একে বলিউডের নামী তারকা, তার ওপর রাজনীতিতে নেমেই বিজেপির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, সেই কঙ্গনা রানাওয়াতকে কষে চড় মেরেছে বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষী। কঙ্গনা নিজেই একথা জানিয়ে নালিশও দিয়েছেন। ফলশ্রুতি সেই নিরাপত্তারক্ষী গ্রেপ্তার হয়েছেন, চাকরিও হারিয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে চণ্ডিগড় বিমানবন্দরে। বৃহস্পতিবার বিকেলে চণ্ডীগড় থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন সদ্য নির্বাচিত লোকসভার সদস্য কঙ্গনা। বিমানবন্দরে তল্লাশির সময় নিজের মুঠোফোনটি নির্দিষ্ট ট্রেতে রাখতে রাজি হননি কঙ্গনা। তাতে নিরাপত্তারক্ষী আপত্তি জানালে শুরু হয়ে যায় ঝামেলা।
অভিযোগ উঠেছে, সে সময় কুলবিন্দর কৌর নামের ওই নারী নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা মারেন কঙ্গনা। এরপরই তাকে কষে চড় মারেন নিরাপত্তারক্ষী। এই ঘটনায় ওই নারী নিরাপত্তারক্ষীর বিরুদ্ধে পুলিশে মামলাও দায়ের হয়। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সাথে জানিয়েছে, কুলবিন্দরকে সাসপেন্ডও করে কর্তৃপক্ষ।
তবে এ ঘটনার একটু অন্য রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন কঙ্গনা। ভিডিও বার্তায় নতুন সংসদ সদস্য বলেন, আমার কাছে অনেক ফোন আসছে। চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা তল্লাশির পর, আমি যখন বের হলাম, পাশের একটি কেবিন থেকে এক নারী নিরাপত্তারক্ষী বেরিয়ে এসে পাশ থেকে আমার গালে আঘাত করেন।
বিজেপির টিকিটে হিমাচলের মান্ডি কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আরও বলেন, আমি যখন জিজ্ঞেস করলাম, কেন উনি এমন করলেন, তার উত্তর, তিনি কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করেন। আমি নিরাপদে আছি। কিন্তু পাঞ্জাবে যেভাবে আতঙ্কবাদ এবং উগ্রবাদ বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।
কঙ্গনার বক্তব্যের সঙ্গে মিলে গেছে বিমানবন্দর সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য। জানা গেছে, কঙ্গনা রানাওয়াতকে চড় মারায় অভিযুক্ত নারী কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে কঙ্গনার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাই কঙ্গনাকে হাতের কাছে পেয়ে তার প্রতিশোধ নিলেন। এরই মধ্যে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সামাজিক মাধ্যম এই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা গেছে, কষে চড় মারায় অভিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষী বলছেন, দিল্লিতে যখন কৃষকরা আন্দোলন করছিলেন, তখন কঙ্গনা বলেছিলেন, ১০০-২০০ টাকা পেয়ে ওরা আন্দোলন করছে। আমার মা ওখানে ছিলো, আন্দোলন করছিলো।
বলিউড তারকা কঙ্গনাকে চড় মারার কারণ হিসেবে কুলবিন্দর জানিয়েছেন, কৃষক আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামা কৃষকদের অসম্মান করায় কঙ্গনার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন তিনি। বিমানবন্দরে সুযোগ পেয়ে তিনি সেই ক্ষোভ ঝাড়েন। চাকরি হারিয়ে গ্রেপ্তার হবার পরও কুলবিন্দর জানিয়েছেন, তার কোন অনুশোচনা নেই।
চার বছর আগে তখনকার টুইটার হ্যান্ডলে কৃষক আন্দোলনের সময় এক বৃদ্ধার ছবি দিয়ে কঙ্গনা লেখেন যে, তিনি বিলকিস বানো, শাহিনবাগ আন্দোলনের অন্যতম মুখ। ১০০ টাকায় ভাড়া পাওয়া যায় তাকে। কঙ্গনার এই বক্তব্য ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। পরে ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন তিনি।
চাকরি হারানোর পর ওই নারী নিরাপত্তারক্ষী এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে জানান, কঙ্গনাকে চড় মেরে তিনি কোন ভুল করেননি। মায়ের সম্মান রক্ষায় তিনি এই কাজ করেছেন। কুলবিন্দর কৌর লেখেন, আমার নিজের চাকরির চিন্তা নেই। মায়ের সম্মানের জন্য এমন হাজারো চাকরি কোরবানি করতে পারি।
এমপি হয়েই চড় খেলেন কঙ্গনা!এমপি হয়েই চড় খেলেন কঙ্গনা!
এদিকে কুলবিন্দরকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সমাবেশের ডাক দিয়েছে পাঞ্জাবের কৃষকরা। দেশটির একাধিক কৃষক সংগঠনের দাবি, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যেন কোনো অযৌক্তিক পদক্ষেপ না নেয়া হয়। ৯ জুন পাঞ্জাবের মোহালির রাস্তায় নেমে এসপি অফিসের সামনে প্রতিবাদ জানাবেন কৃষকেরা। এটির নাম ‘ইনসাফ’ যাত্রা।
কৃষক সংগঠনগুলোর দাবি, বিমানবন্দরে যে ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক তদন্তের প্রয়োজন। কেন এমন ঘটনা হলো, তা খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নেয়া হোক। সম্মিলিত কিষাণ মোর্চা, কিষাণ মজদুর মোর্চার তরফ থেকে শুক্রবার জানানো হয়, তারা কুলবিন্দরের সমর্থনে তার পাশে দাঁড়িয়েছে।