কনের সাজ

সবকিছুর মতো কনের সাজেও এসেছে অনেক পরিবর্তন। বদলে গেছে রুচি ও পছন্দ। কয়েক বছরের কনেদের সাজ দেখলেই তা বোঝা যায়। কনের পোশাক থেকে শুরু করে মেকআপ, গয়না সবকিছুর মধ্যেই আছে চোখের পড়ার মতো নতুনত্ব। তবে পরিবর্তনের সাথে গা ভাসালেই তো চলবে না, কারণ নিজের জন্য বাছাই করে নিতে হবে মানানসই কিছু। একজনকে যে সাজ পোশাকে মানাবে তা আপনাকে না-ও মানাতে পারে। জেনে নেওয়া যাক এবার বিয়ের মৌসুমে কেমন হতে পারে কনের সাজসজ্জা। নীলাঞ্জনা নীলার প্রতিবেদন

এখন বিয়ের অনুষ্ঠান বেশ লম্বা সময় ধরেই চলে। মেহেদি সন্ধ্যা, সংগীত সন্ধ্যা, হলুদ সন্ধ্যা আরো কত আয়োজন! তাই শুধু বিয়ের দিন না অন্যান্য দিনের জন্যও কনেকে নিতে হয় প্রস্তুতি। হলুদের অনুষ্ঠানে হলুদ পোশাকই পরতে হবে এই নিয়ম আর নেই। সবুজ, নীল, গোলাপি, মেরুন সহ বিভিন্ন রঙ বেছে নিতে পারে কনেরা। তবে হলুদের দিন যেকোনো উজ্জ্বল রঙ বেছে নেওয়া উচিত। একটা সময় হলুদের সাজে কনেকে দেখা যেত তাঁতের শাড়ি ও তাজা ফুলে। কিন্তু এখন জামদানি, সিল্কসহ নানা ধরনের শাড়ি পরে থাকে কনেরা। অনেকে আনারকলি কিংবা লেহেঙ্গাও পরছে।

তবে সেই চিরাচরিত সাজ যে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে তা নয়। অনেকেই গায়ে হলুদে এক প্যাচের শাড়ি ও হলুদ গাদা ফুলের গয়না পরছে। এতে কনের বাঙালিয়ানা ফুটে উঠছে। লেহেঙ্গা ভারী হলে হালকা গয়না পরুন। হলুদের সব সময় ফুলের গয়নাই বেশি মানিয়ে যায়। কিন্তু চাইলে ফুল না পরে কুন্দনের সেট পরতে পারেন। আবার আসল ফুল না পরতে চাইলে বাজারে হরেক রকমের নকল ফুলের গয়না পাওয়া যায়। তবে নকল ফুল বেছে নিলে তা যেন পোশাকের রঙের সাথে একদম মিলে না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন পোশাক হলুদ হলে গোলাপি রঙের ফুল বেছে নেওয়া যেতে পারে।

বিয়ের আগে কনের মেহেদি সন্ধ্যা এখন বেশ ধুমধাম করেই করা হয়। বেশিরভাগ কনে সেদিন সবুজ রঙের পোশাকই বেশি পরে থাকে। অনেকে ভারতীয় স্টাইলে ‘সারারা’ ও ‘গারারা’র মেহেদিতে পরে থাকে। যেহেতু হাত ও পায়ে মেহেদি দেওয়া হয় তাই খুব ভারী পোশাক না পরাই উচিত। চাইলে মাথায় রুপার টিকলি কিংবা ঝাপ্টা পরা যেতে পারে। আরামদায়ক পোশাক বেছে নিতে হবে ও গয়নার ক্ষেত্রেও হালকা গয়না পরা যেতে পারে।

এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিয়ের দিন। বাঙালি নারীদের বিয়েতে বেনারসির কদর কখনো কমবে না। তাই অনেক বদল আসবার পরেও কনেরা বেছে নিচ্ছে লাল বেনারসি শাড়ি। এছাড়া লেহেঙ্গা পরছে অনেকেই। জর্জেটের উপর পাথর বসানো শাড়ি বেছে নিচ্ছে অনেকে। কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে কনেরা বিয়ের দিন জামদানি শাড়ি পরছে, যা আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য বহন করে।

বউ মানেই লাল এই ধারণা থেকে বের হয়ে অনেকে বিয়ের থিম হিসেবে বেছে নিচ্ছে সাদা। বিয়েতে এক সময় সোনার গয়না ছাড়া কল্পনাই করা যেত না কিন্তু এখন সোনার গয়নাও তেমন পরছে না কনেরা। এখন কনেরা বেশি পরছে অ্যান্টিক গোল্ড আর ধাতব গয়না। কেউ আবার বিভিন্ন পাথর বসানো গয়না পরছে পোশাকের সাথে মিল রেখে। কুন্দন, পান্না, রুবি পাথর বসানো পাথরও অনেকে পরছে। এছাড়া গা ভরে গয়নাও এখন তেমন পরে না কেউ, গলায় বড় একটু সেট পরে থাকে। রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেওয়া গয়নাও পরছে অনেকে। কনেরা এখন বেশ চোকার পরছে, সোনার গয়না হলেও তা চোকারের মতো বানাচ্ছে। এছাড়া চিরাচরিত চন্দ্রহার, সীতাহার তো রয়েছেই। কেমন গয়না কনে বেছে নিবে তা নির্ভর করছে কনের পোশাকের উপর। পোশাক খুব জাঁকজমকপূর্ণ হলে হালকা গয়না পরা উচিত।

হীরা আভিজাত্যের প্রতীক। তাই রিশিপশনের মতো অনুষ্ঠানে অনেকে হীরার সেট পরে থাকে। বোম্বে কাট আর বেলজিয়াম কাট এই দুই ধরনের হীরাই বেশি পরে থাকে কনেরা। আমাদের দেশে এখন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় গোল্ড প্লেটেড গয়না। অ্যান্টিক কালারের গোল্ড প্লেটেড এখন বেশ চলছে। শাড়ি ভাঁজ করে পরলে কোমরে গোল্ড প্লেটেড বিছা পরতে পারেন। বিয়ের জন্য এমন গয়না বেছে নেওয়া উচিত, যা বিয়ের পরেও যেকোনো অনুষ্ঠানে পরা যাবে। বেশিরভাগ সময় বিয়ের গয়না অতিরিক্ত ভারী হবার কারণে পরবর্তীতে আর পরা যায় না। জামদানি, মসলিন ও কাতান শাড়ি বিয়েতে পরলে ট্র্যাডিশনাল গয়না বেছে নেওয়া যেতে পারে। জর্জেট শাড়ির সাথে হীরার গয়না পরতে পারেন।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × four =