আফরোজা আখতার পারভীন
ঢাকা, ১২ নভেম্বর ২০২৫ (ইপি ডেস্ক): বেলেমে অনুষ্ঠিত কপ৩০-এর দ্বিতীয় দিনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী কার্যক্রম পেরিয়ে এখন সম্মেলন প্রবেশ করেছে আলোচনার মূল পর্বে। নীতিনির্ধারক ও আলোচকরা ক্রমেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, আর বিভিন্ন সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ বেড়েছে। জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ আজকের আলোচনায় সবচেয়ে বেশি অনূভূত হয়েছে।
মূল অগ্রগতি
- আলোচনার মূল এজেন্ডা কার্যকর: দ্বিতীয় দিনে আলোচনার বিভিন্ন ট্র্যাক সক্রিয় হয়েছে। অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে অর্থায়নের বাধ্যবাধকতা (আর্টিকেল ৯.১), কার্বন মার্কেট ও হালনাগাদ এনডিসি (জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান) নিয়ে পরামর্শ সভা।
- নতুন বিশ্লেষণ: এ পর্যন্ত ১১৩টি দেশ তাদের এনডিসি জমা দিয়েছে। বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বর্তমান প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০১৯ সালের তুলনায় মাত্র ১২% কমবে, যেখানে বিজ্ঞানীরা বলছেন ১.৫°C লক্ষ্য অর্জনে ৬০% হ্রাস প্রয়োজন।
- গতিশীল পরিবেশ: সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ, লবিতে বৈঠক এবং করিডোরে তীব্র আলোচনায় সম্মেলন এখন শুধু মঞ্চ প্রস্তুতি নয়, বরং কর্মপরিকল্পনার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।
গুরুত্বপূর্ণ সাইড ইভেন্ট
- বহুমাত্রিক শাসন ও নগর উন্নয়ন: “প্ল্যান টু অ্যাক্সিলারেট দ্য সলিউশন (PAS)” নামের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, যা স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে জলবায়ু বিনিয়োগ ও পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করবে।
- কার্বন মার্কেট ও কমপ্লায়েন্স কোয়ালিশন: ব্রাজিল ঘোষণা দিয়েছে “ওপেন কোয়ালিশন অন কমপ্লায়েন্স কার্বন মার্কেটস” গঠনের, যেখানে ১৮টি অঞ্চল যোগ দেবে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য আন্তর্জাতিক কার্বন বাজারের নিয়ম একীভূত করা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি।
- স্বাস্থ্য, ন্যায়বিচার ও আদিবাসী কণ্ঠস্বর: নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এক ইভেন্টে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও আদিবাসী নেতারা অংশ নেন। তারা বলেন, “১.৫°C আমাদের জন্য শুধু লক্ষ্য নয়, এটি বেঁচে থাকার প্রশ্ন।”
মূল পর্যবেক্ষণ
- দ্বিতীয় দিনে স্পষ্ট হয়েছে, কপ৩০ এখন বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগী। নতুন প্রতিশ্রুতির চেয়ে বরং পুরোনো প্রতিশ্রুতিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিয়েই মূল আলোচনা।
- উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবসম্মত সক্ষমতার ব্যবধান রয়ে গেছে— বিশেষত জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর জন্য, যারা এখন কথার চেয়ে কাজের প্রত্যাশা করছে।
- নগর শাসন, বহুমাত্রিক সমন্বয়, প্রকৃতি ও ন্যায্যতা— এসব বিষয় আলোচনায় উঠে আসায় কপ৩০-এর পরিসর আরও বিস্তৃত হয়েছে।
- তবে অর্থায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানি পরিহারের সময়সীমা ও প্রধান দূষণকারী দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ এখনো অনির্ধারিত রয়ে গেছে।
আগামী দিনে যা নজরে রাখার মতো
- PAS/CHAMP-এর মতো বহুমাত্রিক শাসন কাঠামো কি বাস্তব প্রতিশ্রুতিতে রূপ নেবে, নাকি কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
- অভিযোজন, ক্ষয়ক্ষতি (Loss & Damage) ও প্রকৃতি নির্ভর সমাধানে কি বড় কোনো অর্থায়ন ঘোষণা আসবে?
- কার্বন মার্কেট নিয়ে আলোচনা কোন পথে যাবে? নতুন কোয়ালিশন কি কার্যকর আন্তর্জাতিক চুক্তির দিকে অগ্রসর হবে?
- আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠ কি মূল আলোচনায় প্রতিফলিত হবে, নাকি তা কেবল সাইড ইভেন্টেই সীমাবদ্ধ থাকবে?
বেলেমে কপ৩০-এর দ্বিতীয় দিন আলোচনায় গতি এনেছে, অংশগ্রহণ বাড়িয়েছে এবং বাস্তবায়নের পথে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এখন চ্যালেঞ্জ একটাই— এই গতি ও অঙ্গীকারকে কার্যকর পদক্ষেপে রূপ দেওয়া, বিশেষ করে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য।