কপ৩০: বেলেমে উত্তেজনা বেড়েছে, আলোচনা আরও জটিল হচ্ছে

আফরোজা আখতার পারভীন

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর ২০২৫ (ইপি ডেস্ক): কপ৩০ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বেলেমে পরিবেশ আরও গতিশীল ও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আনুষ্ঠানিক আলোচনার পাশাপাশি নাগরিক সমাজের কর্মী, আদিবাসী প্রতিনিধিদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং নানা সাইড ইভেন্টে কনফারেন্সে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এদিকে, কপ প্রেসিডেন্সি বিতর্কিত ইস্যুগুলোর সমাধানে সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

প্রেসিডেন্সির ব্রিফিংয়ের মূল বক্তব্য

কপ৩০ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রে কোরেয়া দো লাগো ও শীর্ষ আয়োজকরা তৃতীয় দিনের ব্রিফিংয়ে অগ্রগতি ও মতপার্থক্যের হালনাগাদ তুলে ধরেন।

  • প্রেসিডেন্সি জানায়, চারটি বিতর্কিত এজেন্ডা বিষয়— বাণিজ্য ব্যবস্থা, স্বচ্ছতা, জীবাশ্ম জ্বালানি রূপান্তর ও কার্বন বাজারের নিয়মাবলী — বর্তমানে বিশেষ পরামর্শ প্রক্রিয়ায় রয়েছে, তবে এগুলো এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির অংশ নয়। এই বিষয়গুলোকে আলোচনার কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার পথ খোঁজা হচ্ছে।
  • তারা জরুরি অবস্থার ওপর জোর দেন। ভারী বৃষ্টি ও প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে সম্মেলনস্থল অল্প সময়ের জন্য বন্ধ ছিল এবং স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (GMT-3) পুনরায় চালু হয়।
  • প্রেসিডেন্ট লাগো বলেন, “আমরা সেতুবন্ধন গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখনই বলার সময় আসেনি যে আমরা সমাধানে পৌঁছেছি— কপের মাত্র দুই দিন পার হয়েছে।”
  • জীবাশ্ম জ্বালানি রূপান্তরের রোডম্যাপ নিয়ে তিনি স্পষ্ট করেন, এটি এখনো আনুষ্ঠানিক এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত নয় এবং কপে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায়ও ওঠেনি।
  • কনফারেন্স সচিবালয় ‘ডিক্লারেশন অন ইনফরমেশন ইন্টেগ্রিটি অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ প্রকাশ করেছে, যা জলবায়ু বিষয়ক ভ্রান্ত তথ্য মোকাবেলায় বেশ কয়েকটি দেশ সমর্থন দিয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ সাইড ইভেন্ট ও উন্নয়ন

১. আদিবাসী ও নাগরিক সমাজের আন্দোলন:

“পিপল’স সামিট” নামে এক গুরুত্বপূর্ণ সাইড ইভেন্টে হাজারো আদিবাসী প্রতিনিধি ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী অংশ নেন, যেখানে অ্যামাজন অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর তুলে ধরা হয়।

একই সময়ে, সম্মেলন ভেন্যুতে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

২. কার্বন মার্কেট ও জাস্ট ট্রানজিশন:

আলোচনার মধ্যে কয়েকটি দেশ প্যারিস চুক্তির আওতাধীন আর্টিকেল ৬-এর কার্বন মার্কেট আলোচনাগুলো পুনরায় খোলার হুমকি দিয়েছে। প্রেসিডেন্সি সতর্ক করেছে, এই আলোচনাগুলো সপ্তাহের শুরুতেই “উত্তপ্ত” হতে পারে।

মূল পর্যবেক্ষণ

  • প্রাথমিক আলোচনা পর্ব পেরিয়ে এখন কপ৩০ কঠিন দরকষাকষির পর্যায়ে প্রবেশ করেছে— এখন প্রশ্ন “কখন ও কীভাবে”, “হবে কি না” নয়।
  • অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিনিধিত্বের ঘাটতি এখনো বড় একটি চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য।
  • অর্থায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানি পরিহার ও তথ্য স্বচ্ছতা—এই বিষয়গুলোতে প্রতিশ্রুতি ও বাস্তব অগ্রগতির ব্যবধান আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
  • প্রেসিডেন্সি এখন একদিকে আলোচনার গতি রক্ষা করছে, অন্যদিকে প্রতিবাদ ও ভেন্যু সংকট সামলাচ্ছে—এ যেন এক সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা।

আগামী দিনগুলোতে যা নজরে রাখার মতো

  • এই বিশেষ পরামর্শ প্রক্রিয়া থেকে কি কোনো সিদ্ধান্তমূলক টেক্সট আসবে, নাকি আলোচনাগুলো আরও পিছিয়ে যাবে?
  • উন্নত দেশগুলো কি অভিযোজন, ক্ষয়ক্ষতি (Loss & Damage) ও অর্থায়নে G77+চায়নার দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কোনো প্রতিশ্রুতি দেবে?
  • নাগরিক সমাজ ও আদিবাসী প্রতিনিধিদের চাপ কি বন সংরক্ষণ, তথ্য স্বচ্ছতা ও জাস্ট ট্রানজিশনের আলোচনায় প্রভাব ফেলবে?
  • কার্বন মার্কেট (আর্টিকেল ৬) আলোচনায় কি বাস্তব কোনো চুক্তি হবে, নাকি এটি প্রক্রিয়াগত অচলাবস্থায় পড়বে?

বেলেমে কপ৩০-এর তৃতীয় দিন আরও তীব্র, জটিল এবং নাগরিক সমাজের সক্রিয়তায় পূর্ণ ছিল। এখন চ্যালেঞ্জ একটাই— এই গতিকে বাস্তব ফলাফলে রূপ দেওয়া, যা একদিকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা বজায় রাখবে, অন্যদিকে ন্যায় ও অন্তর্ভুক্তির প্রতিফলন ঘটাবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 4 =