কপ ৩০: বেলেম প্যাকেজ এখনো চূড়ান্ত নয়, আলোচনার শেষ মুহূর্তে দৌড়ঝাঁপ

আফরোজা আখতার পারভীন, ঢাকা

নির্ধারিত শেষ দিনে প্রবেশ করেও কপ৩০ আলোচনাগুলো এখনো নিষ্পত্তিহীন, এবং পুরো সম্মেলন এক অনিশ্চিত পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানি, জলবায়ু অর্থায়ন এবং প্রস্তাবিত বেলেম প্যাকেজ–এর কাঠামো নিয়ে গভীর মতপার্থক্য দূর করতে আলোচকরা সারারাত কাজ করেছেন। তবে ১০ম দিনের শেষ দিকে প্রকাশিত নতুন খসড়া সত্ত্বেও প্রধান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বগুলো অমীমাংসিতই রয়ে গেছে—যা আলোচনার সময়সীমা বাড়ার সম্ভাবনা বা একটি দুর্বল চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাতভর আলোচনার পর ১১তম দিনের সকালে আরো একটি খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে।

মূল ইস্যুগুলোতে অচলাবস্থা

আলোচনায় এখনো ভিন্নমত রয়ে গেছে বিশেষত তিনটি ক্ষেত্রে:

  • জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়ার ভাষা: সর্বশেষ খসড়া থেকে স্পষ্ট ‘ফেজ–আউট রোডম্যাপ’ বাদ পড়েছে—যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো এবং নাগরিক সমাজের তীব্র সমালোচনার কারণ হয়েছে।
  • জলবায়ু অর্থায়ন: অভিযোজন তহবিলের পরিমাণ, পূর্বনির্ধারিততা এবং লস অ্যান্ড ড্যামেজ সহায়তার অর্থায়নে কোন দেশ কতটা দেবে—এসব নিয়ে মতবিরোধ এখনও প্রবল।
  • ন্যায়সঙ্গত রূপান্তর নিয়ম: গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, শিল্পনীতির উল্লেখ এবং বিশ্বব্যাপী ‘জাস্ট ট্রানজিশন’ প্রসঙ্গে বড় অর্থনীতিগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য মিটছে না।

কূটনীতিকদের ভাষায়, পরিবেশ “চাপপূর্ণ কিন্তু এখনো আশাব্যঞ্জক”—কিছু আলোচক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, মৌলিক চাহিদা স্বীকৃত হলে তারা সমঝোতার জন্য প্রস্তুত।

কপ ৩০ প্রেসিডেন্সি: টানা মধ্যস্থতা জরুরি ব্রিফিং

ব্রাজিলের কপ ৩০ প্রেসিডেন্সি দিন ১০-এর শেষ রাত থেকে দিন ১১-এর সকাল পর্যন্ত একাধিক জরুরি ব্রিফিং করেছে, যেখানে পরিস্থিতির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কপ৩০ সভাপতি মারিনা সিলভা বলেন:

“আমরা একদম শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। সকল পক্ষকেই এখন নমনীয়তা ও রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে।”

প্রেসিডেন্সি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে:

  • বেলেম প্যাকেজের নতুন সংশোধিত খসড়া প্রকাশ।
  • ইইউ, জি–৭৭+চায়না, এওএসআইএস, বেসিক এবং তেল–গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধ দরজার বৈঠক।
  • জীবাশ্ম জ্বালানির ভাষা এবং অর্থায়নের বিরোধ মেটাতে “মিনিস্টেরিয়াল রেসকিউ সার্কেল” গঠন।

প্রেসিডেন্সির মতে, সমঝোতার সুযোগ “সংকীর্ণ হলেও এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি।”

নাগরিক সমাজের চাপ অব্যাহত

ভেন্যুর বাইরে—যা সম্প্রতি আগুনের ঘটনার পরও কঠোর নিরাপত্তার আওতায়—ইন্দিজেনাস, যুবসমাজ ও এনজিওগুলো বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধান দাবি:

  • স্পষ্ট ও সময়বদ্ধ জীবাশ্ম জ্বালানি ফেজ–আউট
  • আরও শক্তিশালী ও বাধ্যতামূলক অর্থায়ন প্রতিশ্রুতি
  • আমাজন রেইনফরেস্ট ও আদিবাসী অধিকার সংরক্ষণ

বিক্ষোভকারীদের দাবি, বর্তমান খসড়া সম্মেলনের মর্যাদাকে দুর্বল করছে।

এরপর কী?

সময়ের কাঁটা শূন্যের দিকে এগোতে থাকায় তিনটি পরিস্থিতি সম্ভব:

১. আজই একটি সমঝোতাভিত্তিক বেলেম প্যাকেজ গ্রহণ

যদি পক্ষগুলো কিছুটা নরম হয়, তবে আজই একটি রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য—যদিও তুলনামূলক দুর্বল—চুম্বক খসড়া গৃহীত হতে পারে।

. আলোচনা ১২তম দিনে গড়ানো

জীবাশ্ম জ্বালানি ও অর্থায়নে মতপার্থক্য থাকলে আলোচনার সময়সীমা একদিন বাড়তে পারে—যেমনটি আগের কপগুলোতেও হয়েছে।

. খণ্ডিত বানোডিলসংকট

যদি ইইউ বা অন্য কোনো শক্তিশালী ব্লক বর্তমান খসড়া প্রত্যাখ্যান করে, তবে সম্মেলন একটি ন্যূনতম বা আংশিক সিদ্ধান্তে শেষ হতে পারে, এবং কয়েকটি ইস্যু ভবিষ্যতের আলোচনায় ঠেলে দেওয়া হবে।

কূটনীতিকদের ভাষায়, আগামী কয়েক ঘণ্টাই ঠিক করবে কপ৩০ কতটা বিশ্বাসযোগ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ফলাফল দিতে পারে। বিশ্বের চোখ এখন বেলেমের দিকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

twenty + 20 =