এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় – শ্রষ্ঠা কবি হেলাল হাফিজ আজ শুক্রবার মারা গেছেন।
অকৃতদার কবির বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। জীবনের শেষ দিনগুলো তার কাটছিল ঢাকার শাহবাগের সুপার হোম নামের এক হোস্টেলে।
শুক্রবার দুপুরে বাথরুমে পড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়। পাশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিএসএমএমইউ পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রেজাউর রহমান বলেন, বেলা ২টা ৩৫ মিনিটে কবিকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তার আগেই তার মৃত্যু হয়।
দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর, নেত্রকোণার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে নিজের শহরেই।
১৯৬৭ সালে নেত্রকোণা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ।
১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে ওঠে মিছিলের স্লোগান।
এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময় – কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।
১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ।
আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা একাত্তর’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।
৭৬ বছরের জীবনে কবি হেলাল হাফিজ রেখে গেছেন কেবল তিনটি বই। প্রথম বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশের সময় নিজের ভেতরে কী ঘটেছিল, সে কথাও ওই অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।
কবিতায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৩ সালে হেলাল হাফিজকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এছাড়াও যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোণা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
কবিতার জন্য জীবন কাটিয়ে দেওয়া হেলাল হাফিজ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাংবাদিকতা।
১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন হেলাল হাফিজ। পূর্বদেশ ও দৈনিক দেশ পত্রিকায় তিনি সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক যুগান্তর।