মাসুম আওয়াল
দেখতে কেমন কাঁচাগোল্লা লম্বা নাকি গোল!
রসের ভেতর ভাসে নাকি শুকনো সাদা রোল
করম আলী মিষ্টি খেতে অনেক ভালোবাসেন,
কাঁচাগোল্লা খাবেন বলে নাটোর চলে আসেন।
মনের ভেতর কাঁচাগোল্লার নানান ছবি এঁকে,
করম আলী নাটোর এলেন ঢাকা শহর থেকে।
মিষ্টি তৈরি হতে লাগে নিরেট দুধের ছানা,
কাঁচাগোল্লার রহস্যটা হয়নি আজও জানা।
কী আছে এই মিষ্টিতে ভাই কেনো সে বিখ্যাত,
মিষ্টিপ্রিয় করম আলীর জানতে হবে তা তো!
নাটোর এসে চমকে গেলেন কাঁচাগোল্লা দেখে,
মিষ্টি আবার হয় এরকম দেখেন সেটা চেখে।
গোল-গালও নয় লম্বাও নয় যেনো আস্ত ছানা,
কিন্তু স্বাদে অনন্য এক অসাধারণ খানা।
পিরিচে নিয়ে চামচ দিয়ে মিষ্টি খেতে খেতে,
ভোজন রসিক করম আলীর মনটা ওঠে মেতে।
কাঁচাগোল্লা খেতে খেতে দুচোখ বুজে আসে,
মন ডোবে তার কাঁচাগোল্লার মিষ্টি ইতিহাসে।
দিন শুরু ভাবনার,
কে করলো এমন কাঁচাগোল্লা আবিষ্কার
মন হয়ে যায় উড়ু উড়ু এবং এলোমেলো,
ভাবে করম কোথায় থেকে কাঁচাগোল্লা এলো
ময়রা এসে মিষ্টি হেসে শোনালো সে গল্প,
এই ইতিহাস হার মানাবে রূপকথা আর কল্প।
গল্পটা নয় কোনো দেশের রাজা এবং গজার,
অনেক বছর আগের কথা গল্পটা খুব মজার।
এই নাটোরে এক যে ছিলো মধুসূদন পাল,
মিষ্টি নিয়ে কাটাতো সে রাত দিন ও সকাল।
মধুসূদন পালের ছিলো মিষ্টির কারখানা,
এ কারখানার মিষ্টি সেরা সকল লোকের জানা।
নামি দোকান, নাটোর জেলার লালবাজারের মোড়ে,
ভিড় সারা দিন মিষ্টির উপর মৌমাছিরা ওড়ে।
তৈরি হতো কত স্বাদের পানতোয়া চমচম,
কালো জামের অনন্য স্বাদ ভীষণ অনুপম।
বিশাল বিশাল চুলা, দারুণ ব্যস্ত রান্না ঘর,
রোজ কয়েক মন ছানার মিষ্টি বানায় কারিগর।
চলছিলো দিন ভালোই হঠাৎ বিপদ এলো নেমে,
কারিগররা কেউ আসেনি। দোকান যাবে থেমে!
কী যে করে মধুসূদন মাথায় পড়ে বাজ,
নষ্ট হবে ছানাগুলো করছে না ব্রেন কাজ।
কারিগররা কেউ আসেনি কে বানাবে মিষ্টি,
মধু ভাবেন নতুন কিছু করতে হবে সৃষ্টি।
কাঁচা ছানায় দিলেন ঢেলে মিঠা চিনির রস,
সেটা চুলায় জ্বাল করা হয় না হয় যেনো লস।
তারপরে এক অবাক ব্যাপার পর সমাচার এই,
চিনি দেওয়া কাঁচা ছানার স্বাদ হয়েছে সে-ই।
এমন করে বিপদ নদী হতে গিয়ে পার
মধুসূদন কাঁচাগোল্লা করেন আবিষ্কার।
নাম ছড়ালো দিকে দিকে
সেই মিষ্টি আছে টিকে।
কাঁচা ছানার ঘ্রাণে মাতাল মিষ্টিপ্রেমিকেরা,
কাঁচাগোল্লা হয়ে গেলো সেই বাজারে সেরা।
রসগোল্লা, পানিতোয়া, এমনকি সন্দেশ,
লাগছিলো না খেতে তখন আগের মত বেশ।
সাড়ে তিন মন কাঁচাগোল্লা এক দিনে হয় শেষ,
যে খেয়ে যায় তার জিহ্বায় যায় থেকে তার রেস।
কাঁচাগোল্লার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে,
সতেরশ ষাট থেকে তা আজও আছে টিকে।
নাটোর জেলা নিয়ে শোনা গল্প আছে কত!
কাঁচাগোল্লাও বিখ্যাত ঠিক বনলতার মত।
শোনো শোনো শোনো রে ভাই শুনে হবে ধন্য,
কাঁচাগোল্লা বাংলাদেশে এখন জিআই পণ্য।
শোনো, শুনে লাগবে মিঠা
কাঁচাগোল্লার রেসিপিটা
কাঁচাগোল্লা তৈরি করতে কী কী লাগে জানো
ছানা, মাওয়া, এলাচগুঁড়া, চিনি কিনে আনো।
লাগবে আরও কী কী এসো মধুর কাছে জানি,
মাওয়ার জন্য ছানায় লাগে দুধ, ঘি এবং পানি।
ভীষণ সহজ রেসিপিটা থেকো না ভাই চাপে,
কাঁচাগোল্লা হবে তৈরি মাত্র দু’টি ধাপে।
প্রথম ধাপে দুধ ও পানি মিশিয়ে করো জ্বাল,
ফুটতে থাকলে নামিয়ে রেখো না হারিয়ে তাল।
পাঁচটা মিনিট পরে অল্প সিরকা মিশিয়ে নাড়ো,
দুধটা জমাট বাধলে তখন থেমে যেতে পারো।
আনো আনো ঝাঁঝরি বা টুকরো কাপড় খানি,
ছানা তৈরি হলে তাতে ঝরিয়ে নাও পানি।
সিল্ক কাপড়ে ছানা বেঁধে ঝুলিয়ে দিতে হবে,
ছানা প্রস্তুত, সকল পানি ঝরে গেলে তবে।
ছানা মিহি করো রেখে কাঠের পাটাতনে,
দ্বিতীয় ধাপ শুরু এবার রাখো সেটা মনে।
সমান সমান তিনটি ভাগে ভাগ করে নাও ছানা,
দু’ভাগ এবার অল্প তাপে জ্বাল করে নাও টানা।
ছানার পানি বের হবে আর ছানা হবে নরম,
মৃদু আঁচে অল্প চিনি দিয়ে করো গরম।
চিনি দেওয়া ছানাগুলো আঠালো ভাব নিলে,
বাকি একভাগ ছানা যাবে তারই সাথে মিলে।
ক্রিম ও এলাচ গুঁড়া মিশিয়ে দিতে পারো তাতে,
আর কিছুক্ষণ জ্বাল করে নাও মিষ্টি পাবে হাতে।
শেষ কথা
দিন কেটে যাক ভালো সবার না হোক সেটা বৈরি,
নিয়ম মেনে কাঁচাগোল্লা ঘরেই করো তৈরি।
লাগলো কেমন রেসিপিটা মজা আছে ততো
নাটোর ঘুরে আসি চলো করম আলীর মতো।
পাঁচশো থেকে ছয়শো টাকা কেজি হয় তো হবে!
ভাবো কাঁচাগোল্লা খেতে নাটোর যাবে কবে
অনেক অনেক হলো কথা এবার করি শেষ,
আবার নতুন বিষয় নিয়ে দেখা হবে বেশ।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: নিবন্ধ