প্রতি বছরের মতো কান চলচ্চিত্র উৎসবের বাণিজ্যিক শাখা মার্শে দ্যু ফিল্মে এবারও থাকছে নানান আয়োজন। এ বছর কানের বাণিজ্যিক এই শাখাতে দেখানো হবে দেশের অন্যতম গুণী লেখক, চলচ্চিত্র সমালোচক ও নির্মাতা এবাদুর রহমানের সিনেমা ‘বাঙালি বিলাস’।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী ১৩ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত তিনি ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বাঙালি বিলাস’ নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। ১৮ মে এজেন্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে ‘বাঙালি বিলাস’ ছবিটা মার্শে দ্যু ফিল্ম বিভাগে দেখানোর কথাও জানান তিনি। খবর বার্তা২৪.কম
এবাদুর রহমান পরিচালিত ‘বাঙালি বিলাস’ ছবিটির আন্তর্জাতিক নাম ‘ট্র্যাকটাস বেঙ্গালিয়াম’। সমসাময়িক বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের ধারার বাইরে গিয়ে এটি নির্মাণ করেছেন এবাদুর।
বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত ১৯০ মিনিট দৈর্ঘ্যের ‘বাঙালি বিলাস’ ছবিটি যৌনতা, নারীবাদ, বিশ্বাসঘাতকতা এবং রাজনীতিকে একত্র করে গড়ে তুলেছে এক জটিল কিন্তু গভীরভাবে সংবেদনশীল সিনেমাটিক অভিজ্ঞতা। নির্মাতা বলছেন- এখানে রয়েছে “ফিল্ম-উইদিন-এ-ফিল্ম” কাঠামো। যেখানে দুটি মুসলিম নারী চরিত্র—মিত্রা ও রুশতী—এক পুরুষতান্ত্রিক নির্মাতার হাত থেকে নিজেদের শরীর ও ভাষার নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে নামে।
‘বাঙালি বিলাস’-এ অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী ঋ সেন। যিনি ভারতীয় নির্মাতা কিউ-এর ‘গান্ডু’-তে অভিনয় করে আলোচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও এবাদুরের এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন ফারহানা হামিদ, নাঈমা তাসনিম, শতাব্দী ওয়াদুদ, ও আজাদ আবুল কালামসহ অনেকে।
সিনেমাটির চিত্রগ্রহণে ছিলেন রাওয়ান সায়েমা ও মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান। এটি সম্পাদনা করেছেন বার্লিনের অস্কার লোসার এবং ঢাকার ইকবাল কবির জুয়েল। ছবিটির শব্দ পরিকল্পনা করেছেন ফিনল্যান্ডের মিকা নিনিমা। এরইমধ্যে সিনেমাটির দুটি গানও রিলিজ হয়েছে, যেগুলোর সংগীতায়োজন ও কণ্ঠ দিয়েছেন আহমেদ হাসান সানী।
‘বাঙালি বিলাস’ নিয়ে নির্মাতা এবাদুর রহমান বলেন, ‘বাঙালি বিলাস’ শুধু একটি সিনেমা নয়—এটি একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া। এখানে নারী, শরীর ও বিশ্বাসের প্রশ্নকে নতুনভাবে হাজির করার চেষ্টা করেছি, যেখানে প্রথাগত ‘বাঙালি ছবি’র কাঠামোকে সচেতনভাবেই ভেঙে ফেলা হয়েছে।
সিনেমাটি নিয়ে তিনি বলেন, “এটা শুধু একটি সিনেমা নয়—এটি একটি জাতিগত, লিঙ্গগত, নৈতিক ও ধর্মীয় বাকস্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ। বাংলাদেশের মত সমাজে যেখানে সেন্সরশিপ, মৌলবাদ ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন একটি অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা, ‘বাঙালি বিলাস’ সেই বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তোলে।”
এবাদুর জানান, ‘বাঙালি বিলাস’ ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক পরিবেশক ও উৎসব আয়োজকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।