‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি যে কারণে লিখেছিলেন কাজী নজরুল

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটির সুর বিকৃত করার অভিযোগ নিয়ে দুই বাংলা এখন সরগরম। ১০০ বছর আগে যখন গানটি প্রথম লেখা হয়েছিল, হইচই পড়েছিল তখনো। কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই গান লিখেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ হিসেবে।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘নজরুল সহায়িকা’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি নজরুল লিখেছিলেন ১৯২১ সালে। সে সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর রাজনৈতিক গুরু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ইংরেজ সরকারের হাতে বন্দী হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। তার প্রতিবাদ জানাতে ওই সময়ের সাপ্তাহিক ‘বাংলার কথা’ একটি সংখ্যা বের করে। দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তী দেবী সেই সংখ্যার জন্য কবির কাছে একটি লেখা চেয়ে পাঠান।

এরপর কবি ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি লিখে দেন। সেটি ছাপা হওয়ার পর রীতিমতো হইচই পড়ে যায়। ইংরেজ সরকার এতে চরম ক্ষিপ্ত হয়। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে এই গানটি শিল্পী গিরীন চক্রবর্তী রেকর্ড করেন। কলম্বিয়া রেকর্ডস সেটি বাজারে ছাড়ে। এই গানটিও বাজারে আসার পরপরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়, যা এখনো বহাল আছে। আর একটি তথ্য হলো—গানটি পরে একটি সিনেমাতেও ব্যবহৃত হয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানের সুর বিকৃত করা নিয়ে আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কবি পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান কবির নাতনি মিষ্টি কাজী। তিনি কবির ছেলে কাজী সব্যসাচীর মেয়ে।

বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থার আয়োজনে কাজী নজরুল ইসলামের এই গানের বিকৃতির প্রতিবাদ জানিয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে মিষ্টি কাজী বলেন, ‘আমি পরিবারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। এ ব্যাপারে যেন একটি কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন সেই পদক্ষেপটি নেন। কারণ, এটা আমাদের জাতীয় কবির গান।’

তিনি বলেন, ‘এ গান কেন বিকৃত করা হলো? তাঁকে কে অনুমতি দিয়েছে? এ আর রাহমানের জানার দরকার ছিল যে, নজরুল বাংলাদেশের জাতীয় কবি। আমি দাদু কাজী নজরুল ইসলামকে অপমানিত হতে দেব না।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। তিনি বলেন, ‘কারার ঐ লৌহকপাট গানের নজরুল সুরারোপিত আদি রেকর্ডটির প্রাপ্যতা সত্ত্বেও বিকৃত সুরে এর পরিবেশনা কেবল অন্যায় ও বেআইনিই নয়, নজরুল সৃষ্টির প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনজনিত কারণে নিতান্ত ঘৃণ্য ও হীন অপকর্ম।’

আয়োজনে শিল্পী সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ বা ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ অতি প্রতিষ্ঠিত গান। এ কারণেই চিত্তে আঘাত দিয়েছে যে এভাবে করা উচিত হয়নি। সংস্কৃতিকর্মীরা সবাই তার প্রতিবাদ করছি।”

এ আর রাহমান সম্প্রতি রাজা কৃষ্ণ মেনন পরিচালিত ‘পিপা’ ছবির জন্য ‘কারার ঐ লৌহকপাট’ গানটি রিমেক করেন। গানটি ৭ নভেম্বর ইউটিউবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় বাংলাদেশ ও ভারতে। তীব্র প্রতিবাদ জানান শিল্পীরা। তাঁদের অভিযোগ, রিমেক নয়, গানের পুরো সুর বিকৃত করেছেন রাহমান। প্রতিবাদ জানিয়েছে, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটিও। এই প্রতিবাদ এখনো অব্যাহত আছে। যদিও এ ব্যাপারে এই ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি এন্টারটেইনমেন্ট বা এ আর রাহমানের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী সাদিয়া আফরীন মল্লিক, শাহিন সামাদ, ইয়াসমিন মুশতারী, লীনা তাপসী খান, সুজিত মুস্তফা, বুলবুল ইসলাম, নজরুল গবেষক মাহবুবুল হক প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

8 + twenty =