কারো কি লজ্জা হয় না?

সালেক সুফী

কি এক আজব দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ?  সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ক্ষণে ক্ষণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য আকাশছোয়া। মন্ত্রী বলেন খেজুর না খেয়ে বরই দিয়ে ইফতার করতে।  বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন পরে শুনবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদন নেই, সনদ ভুয়া। বাসে উঠলেন দুর্ঘটনার পর জানবেন ড্রাইভারের লাইসেন্স নাই, গাড়ির ফিটনেস সনদ নাই। লঞ্চে চাপলেন, ডুবে যাওয়ার পর শুনবেন লঞ্চের ফিটনেস নাই, নকশা জাল। ভবনে থাকবেন, অফিস করবেন, দুর্ঘটনার পর জানবেন ভবনটির অনুমোদন নাই। হাসপাতালে ভর্তি হবেন পরে শুনবেন হাসপাতালটি অনুমোদনহীন। ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিবেন পরে শুনবেন সার্টিফিকেট জাল। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কাউকে আমন্ত্রণ জানাবেন পরে শুনবেন আমন্ত্রিত অতিথি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, পরিবার পরিজন নিয়ে খেতে রেস্টুরেন্টে যাবেন পরে শুনবেন আবাসিক ভবনে অনুমোদন বিহীন ব্যবসা চলছিল, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। তাহলে দেশে এতো সংস্থা জনগণের টাকায় কেন প্রতিপালিত হচ্ছে? সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিব আমলারা কি করছে?

এমন একটা দেশ সৃষ্টির জন্য ৩০ লক্ষ  আত্মাহুতি দেয়নি। আসছে রমজান মাস। মুসলিম প্রধান দেশে অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রোজা পালন করবে। খেজুর মুসলানদের রোজার সময়ে অপরিহার্য খাবার।  সরকারের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মূল্য সহনীয় রাখা।  অথচ মন্ত্রী উপদেশ দিচ্ছেন খেজুরের পরিবর্তে বরই দিয়ে ইফতার করতে। মনে আছে প্রধানমন্ত্রী একসময় পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজু না খেয়ে কুমড়ার পাকোড়া খেতে উপদেশ দিয়েছিলেন।  বাংলাদেশের কৃষক সমাজ কিন্তু প্রতিটি কৃষি পণ্য বাম্পার ফলন করছে। বাজারে কিন্তু সরবরাহ সংকট নেই। কিন্তু একশ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা অবৈধভাবে মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। এমন না যে সরকার এদের চিনে না। কিন্তু কেন সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না? ওরা কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী ?

দেশে রাজউক, সিটি করপোরেশন, ফায়ার বিগ্রেড, পরিবেশ মন্ত্রণালয় আছে তার পরেও কিভাবে অনুমোদন বিহীন অজস্র বহুতল ভবন থাকে বাংলাদেশে? কিভাবে আবাসিক ভবনে অবৈধভাবে অনিরাপদ ভাবে হোটেল রেস্টুরেন্ট দিব্বি নাকের ডগায় মাশরুমের মত গড়ে ওঠে? তিতাস গ্যাসের বিতরণ এলাকায় অজস্র অবৈধ সংযোগ। গ্যাস বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগজনিত কারণে আগুনে পুড়ে রোজার সময় মসজিদে মারা গেলো মুসুল্লি।  কারো কি বিচার হয়েছে? দুনিয়ার ভদ্র দেশে এই ধরনের ঘটনায় মন্ত্রী সচিবরা পদত্যাগ করে। বাংলাদেশ তবে কি ভদ্র দেশের পর্যায়ে পড়ে না?

কিভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অগোচরে অসংখ্য অনুমোদন বিহীন হাসপাতাল ক্লিনিক গড়ে উঠতে পারে? দেশে পুলিশ, বিজেবি, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা কত কিছু আছে।  শুধু দুর্ঘটনা ঘটলেই ওদের অস্তিত্ত্ব অনুভব করা যায়।  দেশে চালু থাকা কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারি অনুমোদন আছে? কি ধরনের উচ্চ শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এগুলোতে?

নগর মহানগরগুলোর সড়কে হাজার হাজার অনুমোদনহীন যানবাহন চলছে। চালকদের লাইসেন্স নাই, যানবাহনের ফিটনেস নাই। কি করে কর্তৃপক্ষ?  দেশে এখন গ্যাস  সংকটের কারণে এলপিজির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু ব্যবহার বিধি, নিরাপদ সংরক্ষণের নিয়ম না জানায় প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটছে।  এই বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির দায়িত্ব কার? ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবাধ লুটপাটের কথা নাই বা বললাম।  লুটেরাদের সবাই চেনে। ওরা দূর আকাশের তারা।  ধরা ছোয়ার বাইরে।

যাক সব কিছু। দেশটা কি এভাবেই চলবে ? বেইলি রোডের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পর নানা কর্তৃপক্ষ তৎপরতা দেখাচ্ছে। এগুলো নিয়মিত করা হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো।  স্বাস্থ্য মন্ত্রীর উদ্যোগে অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।  আশা করি সুফল মিলবে। সুধীজন বলছে মাটির নিচে শতছিন্ন গ্যাস পাইপ লাইন নিয়ে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির পর ঢাকা মহানগরী, হাজারো অনিরাপদ হোটেল রেস্টুরেন্টের কারণে অনেক ভবন এখন জীবন্ত বোমা।  সড়কে যানবাহনগুলো যমদূত। মুক্তি কোথায় ?

সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রীদের কি লজ্জা হয় না?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − one =