কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ লাকী আখান্দের আজ মৃত্যুবার্ষিকী

আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন তিনি। ১৯৬৩ সালে মাত্র ৭ বছর বয়সেই টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশু শিল্পী হিসেবে সুযোগ পান তিনি। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত নিয়মিত অংশ নিয়েছেন সংগীত বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি।

১৯৫৬ সালের ৭ জুন ঢাকার পাতলা খান লেনে জন্ম নেন বাংলা গানের এই নতুন পথের দিশারি। মাত্র ৫ বছর বয়সেই বাবার কাছ থেকে সংগীতে হাতেখড়ি হয় তার। জন্মের পর লাকী আখান্দের নাম রাখা হয়েছিল এ টি আমিনুল হক। পরে তার মা সে নাম বদলে রাখেন এ টি এম আমিনুল হাসান। যেটা তার ম্যাট্রিকের সার্টিফিকেটেও রয়েছে।

৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। এ সময় ভারতে গিয়ে নিজের নাম রাখেন- লাকী আনাম। আর এই ছদ্মনামেই স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত হত তার গান। ছদ্মনাম (লাকী আনাম) নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, পরিবারের নিরাপত্তার কথা ভেবেই নাম পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কারণ সে সময়টাতে তার মা-বাবা দেশে অর্থাৎ তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানেই থাকতেন।

যেহেতু স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে তার গান বাজতো, পাকিস্তানি আর্মিরা কোনোভাবে তার আসল পরিচয় জানলে দেশে পরিবারের সদস্যদের মেরে ফেলতে পারে। স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে পূর্ব পুরুষের পদবি নিয়ে নিজের নাম রাখলেন লাকী আখান্দ।

১৯৭৫ সালে লাকী আখান্দ তার ছোট ভাই হ্যাপী আখান্দের একটি অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজন করেন। অ্যালবামটিতে ‘আবার এলো যে সন্ধ্যা’ ও ‘কে বাঁশি বাজায়রে’ গান দুটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।

১৯৮৪ সালে লাকী আখান্দ তার নিজ নামেই প্রথম একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন। সরগমের ব্যানারে প্রকাশিত এই অ্যালবামের ‘আগে যদি জানতাম’, ‘আমায় ডেকোনা’, ‘মামুনিয়া’ ও ‘এই নীল মনিহার’ গানগুলো সেসময় শ্রোতামহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে- যা এখনো বিদ্যমান।

এছাড়াও কুমার বিশ্বজিতের কণ্ঠে ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে’ এবং জেমসের কণ্ঠে ‘লিখতে পারি না কোনো গান আর তুমি ছাড়া’ কালজয়ী গানগুলোর সুর করেছেন লাকী আখান্দ।

১৯৮৭ সালে মারা যান ছোট ভাই ‘হ্যাপী আখান্দ’। এই মৃত্যুটাকে মেনে নিতে পারেননি লাকী আখান্দ। প্রায় এক যুগ বন্ধ রাখেন নিজের সঙ্গীতচর্চা। পরে ১৯৯৮ সালে ‘পরিচয় কবে হবে’ ও ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’ অ্যালবামের সঙ্গীতায়োজনের মাধ্যমে আবার গানের ভুবনে ফিরে আসেন লাকী আখান্দ।

সাতটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় তার। সেগুলো হচ্ছে- লাকী আখান্দ, পরিচয় কবে হবে, বিতৃষ্ণা জীবনে আমার, আনন্দ চোখ, আমায় ডেকোনা, দেখা হবে বন্ধু ও তোমার অরণ্যে।

দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস ক্যান্সারে ভুগে ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল লাকী আখান্দ আর্মানিটোলায় তার নিজের বাসাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্মরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

২০১৯ সালে তার লাকী আখান্দের তেষট্টিতম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাতে জনপ্রিয় টেক প্রতিষ্ঠান গুগল তাদের গুগল অনুসন্ধানের বাংলাদেশ অংশের জন্য গুগল ডুডল প্রকাশ করে।

সারাবাংলা

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × three =