কিংবদন্তি সত্যজিৎ রায়ের প্রয়ান দিবস আজ

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী সত্যজিৎ রায়ের প্রয়ান দিবস ২৩ এপ্রিল। ১৯৯২ সালের এই দিনে তিনি চলে যান না ফেরার দেশে। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার, সংগীত পরিচালক, কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। সব কিছুতেই রয়েছে তার উজ্জল অবদান।

বাংলাদেশের সঙ্গে তার ছিল আত্মিক সম্পর্ক। সত্যজিৎ রায়ের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বড় মাসুয়া গ্রামের অধিবাসী। সে হিসেবে তাকে এই বাংলার বললেও খুব একটা ভুল হবে না।

তিনি বেশ ভালো ছবিও তুলতেন। আর সেই দক্ষতা ধরা দেয় মাত্র ১৪ বছর বয়সে। ১৯৩৬ তার তোলা ছবি বিদেশি পত্রিকা বয়েজ ওন পেপার-এ প্রথম পুরস্কার পায়। সে বছরই ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন সত্যজিৎ। ১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনের কলাভবনে ভর্তি হন সত্যজিৎ। বলা যায় এখানেই প্রখ্যাত চিত্রকর নন্দলাল বসুর হাতে শিল্পী সত্যজিৎ- এর জন্ম ঘটে।

কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু করলেও নির্মাণে আসেন অন্যভাবে। প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় বাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন।

নির্মাণে এসে প্রথম ছবিতেই নিজের জাত চেনান সত্যজিৎ। একেবারে বাজিমাৎ যাকে বলে, তেমনটি করেছেন তিনি। ১৯৫২ সালে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ থেকে সিনেমা নির্মাণ করেন ‘পথের পাঁচালী’। টাকার অভাবে শেষ করতে বিলম্ব হয় অনেক দিন। শেষমেষ মুক্তি পায় ১৯৫৫ সালে। অস্কারসহ দুনিয়াব্যাপি খ্যাতি পায় সিনেমাটি।

ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছেন মোট ৩৭টি ছবি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অপরাজিত, পরশপাথর, জলসাঘর, অপুর সংসার, দেবী, তিনকন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, অভিযান, মহানগর, চারুলতা, গুপী গাইন বাঘা বাইন, হীরক রাজার দেশে, অরণ্যের দিনরাত্রি, অশনি সংকেত, সোনার কেল্লা, ঘরে-বাইরে, গণশত্রু, শাখা-প্রশাখা, আগন্তুক।

পথের পাঁচালি, অপরাজিত ও অপুর সংসার এই তিনটি চলচ্চিত্রকে একত্রে অপু ত্রয়ী বলা হয়, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ বা ম্যাগনাম ওপাস হিসেবে বহুল স্বীকৃত।

তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অতুলনীয়। বিশ্ব চলচ্চিত্রে বিভিন্ন সমলোচকরা তাকে কখনো আন্তন চেখভ, জঁ রনোয়ার, হাওয়ার্ড হক্স, ভিত্তোরিও দে সিকা অথবা কখনো ভোল্ফগাং, আমাদেউস মোৎসার্ট কিংবা শেক্সপিয়ারের সঙ্গেও তাকে তুলনা করা হয়েছে। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ভি এস নাইপল শতরঞ্জ কে খিলাড়ি-র একটি দৃশ্যকে শেক্সপিয়ারের নাটকের সাথে তুলনা করেন!

সত্যজিৎ রায়ের বর্ণময় কর্মজীবনে বহু পুরস্কার পেয়েছেন। তবে এগুলির মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার)।

বাংলা সাহিত্যে সত্যজিৎ রায় একটা বড় জায়গা দখল করে আছেন। বিশেষ করে শিশুতোষ গোয়েন্দা কাহিনী ফেলুদা সিরিজ ছেলে-বুড়ো সবার প্রিয়। এছাড়া বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কুও সবার কাছেও দারুণ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তিনি একাধিক ছোট গল্প লিখেছেন।

১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন এই মহান চলচ্চিত্রকার। মৃত্যুর মাত্র একসপ্তাহ আগে সত্যজিৎ রায় পান বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সন্মানজনক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)। জীবদ্দশায় তিনি অর্জন করেন ৩২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

11 − 11 =