কিভাবে বদলে গেলো ক্রিকেট রসায়ন?

সালেক সুফী: এই তো সেদিনও কেউ ভাবেনি বাংলাদেশ নিজেদের দুর্বলতম টি২০ সংস্করণে সদ্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে দাপটের সঙ্গে ধবল ধোলাই  করবে। একটি ম্যাচ, দুটি ম্যাচ না হয় জয় করা যেতে পারে। কিন্তু পর পর যেভাবে তিন তিনটি ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জয় করলো বাংলাদেশ। বলতেই হয় বাংলাদেশ টি২০ দলের দৃষ্টিভঙ্গি, রসায়ন পুরোপুরি পাল্টে গেছে। ভয়-ডরহীন আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। খেলার কোনো পর্যায়ে বিচলিত হয়নি বা মুষড়ে পড়েনি। পরিবর্তিত দলে যারা সুযোগ পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং, আক্রমণাত্মক বোলিং আর তুখোড় ফিল্ডিং করে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে। গোটা দলকে বিনা সুতার মালা গেথেছে বিচক্ষণ সাকিব।  কোনো অবস্থায় মনে হয়নি শক্তিমত্তার তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ পিছিয়ে।

পুরাণের কথা পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট পাল্টে দায়। কি এমন পরিবর্তন হয়েছে বিশ্বকাপে খেলা দল দুইটিতে। বলা যায় ইংল্যান্ড দলে বিশ্বকাপে খেলা ৩-৪ জন ব্যাটসম্যান ছিল না। কিন্তু যারা খেলেছে তারাও কিন্তু নিয়মিত খেলোয়াড়।  ওদের আক্রমণ এখন বিশ্বসেরা। বিশ্বকাপের অনেক পারফর্মার দলে  ছিল। অন্যদিকে কয়েকজন বর্ষীয়ান খেলোয়াড় মুশফিক, তামিম, মাহমুদুল্লাহ বাংলাদেশ দলে  নেই।  তামিম, মুশফিক অবসর নিয়েছে। মাহমুদুল্লাকে নেওয়া হয়নি। কিছু দিন আগে সমাপ্ত বিপিএলের সেরা ব্যাটসম্যান বোলারদের বেশ কয়েকজনকে দলে সুযোগ দেয়া যে বিচক্ষণতার কাজ হয়েছে সেটি প্রমাণিত।

আর্চার, উড, ওকস, কুরানের সমন্বয়ে গড়া ইংলিশ পেস আক্রমণ সাদা বলের ক্রিকেটে এখন বিশ্বসেরা।  কিন্তু টি২০ সিরিজে তাসকিন, মিরাজ , হাসান মাহমুদ ইংলিশ পেসারদের থেকে অনেক ভালো বোলিং  করেছে। মঈন আলী, আদিল রশিদের  তুলনায় সাকিব, মিরাজ কার্যকরী ছিল।  তাসকিনের গতি, লেংথ এন্ড লাইন , তরুণ হাসান মাহমুদের নিশানা ভেদি ইয়র্কার, গতি বৈচিত্র, কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের ফিরে আসা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বিপদে  ফেলে।

ডোনাল্ডের ছোয়ায় বদলে যাওয়া পেস আক্রমণ বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের অন্যতম কারণ।  বহুদিন পর বাংলাদেশ তিনজন বিশ্বমানের পেসার একসঙ্গে পাওয়া অনেক স্বস্তির কারণ। উপযোগী উইকেটে সাকিব, মিরাজ ভেলকি দেখাবে এটি অনুমেয় ছিল। সর্বোপরি সাকিব বোলিংসম্পদ ব্যবহার করেছে বিচক্ষণতার সাথে। অনেক আউট অফ দি বক্স সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উঁচু মানের বোলিং আরো কার্যকরী হয়েছে পুরো দলের তুখোড় ফিল্ডিংয়ের কারণে। উইকেটের পেছনে লিটন, মাঠ জুড়ে  শান্ত, মিরাজ, হৃদয়, মাহমুদুল হাসান ছিল প্রাণবন্ত।

সব ফরম্যাটে ভালো খেলতে থাকা লিটনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ইনিংস ওপেন করার। দেশের ক্রিকেটে ক্রমাগত ভাল খেলতে থাকা বেশ কিছু দিন পর দলে ফেরা রনি  তালুকদারকে। লিটন প্রথম দুই ম্যাচে নিজেকে হারিয়ে খুঁজলেও শেষ খেলায় ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছে। রনির আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি গোটা দলের শরীরের ভাষা  পাল্টে দিয়েছে। নাজমুল শান্ত ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে দলের ব্যাটিং স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয়কে দেখে মনেই হয়নি সবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাতেখড়ি। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশের ব্যাটিং দর্শন পাল্টে দিয়েছে।

এমন একটি সিরিজ জয়ে দলের সবাই ভূমিকা রেখেছে. অনেক দিন পর বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে একটি সুখী পরিবার মনে হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে কিছু জয় কিভাবে সব কিছু পাল্টে দেয়। সিরিজ জয় কিন্তু ঘুরে  দাঁড়ানোর সূচনা।  আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। সামনে আয়ারল্যান্ড,  আফগানিস্তান। সাফল্যের ধারাবাহিকতা অর্জন করতে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আশা করি হাতুরাসিংহে অনুভব করেছে কোথায় কোথায় কি কাজ করতে হবে। দলে অন্তত দুইজন ভালো মানের লেগ স্পিনার, দুই জন পাওয়ার হিটার প্রয়োজন। সাকিব প্রমাণ করেছে কেন সে এই মুহূর্তে দেশের সেরা অধিনায়ক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 3 =