‘কিল হিম’ সিনেমার ভালো-মন্দ

নূর জাহান

ঈদে প্রেক্ষাগৃহে চলছে আটটি সিনেমা। তার মধ্যে এবারের ঈদে মুক্তি পেয়েছে অনন্ত জলিল ও বর্ষা জুটির অ্যাকশনধর্মী ঘরনার ‘কিল হিম’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মোহাম্মদ ইকবাল। অনন্ত জলিল ও বর্ষা জুটি এই সিনেমার মাধ্যমে নিজেদের প্রযোজনার বাইরে প্রথমবারের মতো অভিনয় করলেন। প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবালের পরিচালিত প্রথম সিনেমা কেমন হলো তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

সিনেমার গল্প এগিয়ে চলে অন্তত জলিলকে কেন্দ্র করে। তাকে কখনো দেখা যায় ‘প্রিন্স’ চরিত্রে আবার কখনো তিনি ‘সালমান’। কিন্তু কেন তা জানতে দেখুন সিনেমাটি। ‘প্রিন্স’কে সিনেমায় সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে দেখা যায়। পেশায় তিনি একজন গাড়ি চালক। ঘটনাক্রমে তিনি জড়িয়ে পড়ে মাদক কেলেঙ্কারির সঙ্গে। তারপর তাকে কনট্রোল করতে থাকে একজন নারী। তিনি একপর্যায়ে তার নির্দেশে নানাভাবে মানুষ মারতে শুরু করে। কিন্তু কেন তাকে টার্গেট করে তা জানা যায় সিনেমায়। মূলত এটাই সিনেমার মূল প্রেক্ষাপট। সিনেমার গল্প আহামরি বলার সুযোগ নেই। গল্পে নতুনত্ব নেই। প্রযুক্তির সঙ্গে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ভিন্ন ধরনের একটা কনসেপ্ট ক্রিয়েট করতে চেয়েছেন সিনেমায় সেটি ইতিবাচক।

অভিনয়শিল্পীদের পারফরম্যান্স নিয়ে যদি বলতে হয় শুরুতেই আসবে অন্তত জলিলের কথা। ‘দিন দ্য ডে’ সিনেমার তুলনায় অনন্ত জলিলের পারফরম্যান্স বেশ ভালো হয়েছে। পর্দায় ডায়লগ ডেলিভারি আর উচ্চারণে দুর্বলতা ধরা পড়েছে বারবার। এই দু’টি বিষয় নিয়ে অন্তত জলিলের আসলেই কাজ করা বড্ড প্রয়োজন। ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনে পরিপক্বতার ছাপ নেই। ফাইটিং সিকুয়েন্সে খাপছাড়া লেগেছে। নাচের মুভমেন্ট দেখে হাসি চলে আসার মতো অবস্থা। ক্যারেক্টারের ইমোশন ফুটে উঠেনি অভিনয়ে। বর্ষার চরিত্রটা বেশ ইন্টারেস্টিং। পর্দায় চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলতে তিনিও ব্যর্থ। অভিনয় করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু হয়েও যেন হয়ে উঠলো না; এমন পরিস্থিতি পুরোটা সময়।

তার ডাবিংয়ে তিনি নিজে কণ্ঠ দেননি সেজন্য পর্দায় খানিকটা ভালো লেগেছে। মিষ্টি জাহান স্বল্প সময়ের উপস্থিতিতে ভালো পারফর্ম করেছেন। মিশা সওদাগর ভিলেন চরিত্রে টাইপ কাস্ট। বারবারই মতো নিজের কাজটা করে গিয়েছেন নিজস্ব স্টাইলে। সে-জায়গায় ব্যতিক্রম মাসুম পারভেজ রুবেল। তার পারফরম্যান্স ভালো লেগেছে। অ্যাকশন সিকুয়েন্সগুলোতে ছিল পরিপক্বতার ছাপ। ভারতীয় অভিনেতা রাহুল দেবকে দেখা যায় সিনেমায়। তিনি স্ব চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করেছেন। শিবা শানু বেশ ন্যাচারাল পারফরম্যান্স করেছেন। স্ক্রিনে তার পারফরম্যান্স ছিল দেখার মতো। ডায়লগ ডেলিভারি, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ সবকিছুই ছিল পারফেক্ট।

সিনেমার মিউজিক ডিপার্টমেন্ট নিয়ে যদি বলতে হয় তবে বেশ ভালো। অনন্ত জলিলের সিনেমায় গানের আয়োজন থাকে বেশ গোছানো ও পরিপাটি। সিনেমায় তিনটি গান ছিল। প্রথম গানটি ছিল ঈদকে কেন্দ্র করে। ‘যখনই চাঁদের আলো আকাশ ভরে গেল’ শিরোনামে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন লিংকন। গানটি সিনেমায় ভালো লেগেছে। ঈদের একটা আমেজ পাওয়া গেছে মিউজিক আর লিরিকে। সিনেমার দ্বিতীয় গানটি ছিল রোমান্টিক ধাঁচের। ‘একটু একটু তোর প্রেমে যাচ্ছি আমি ডুবে’ শিরোনামের গানটিতে দ্বৈত কণ্ঠ দিয়েছেন তৌহিদুল ইসলাম ও নদী। গানটির দৃশ্যায়নে অনন্ত জলিল ও বর্ষায় রসায়ন মন্দ লাগেনি। সিনেমায় একটা আইটেম সং ছিল; কেন রাখা হয়েছে উত্তর খুঁজে পেলাম না বহুবার ভেবে।

সিনেমার স্ক্রিন প্লে হতাশ করেছে। কোথা থেকে কোথায় চলে যাচ্ছে টের পাওয়া যাচ্ছিল না। মেইন ক্যারেক্টার সিনেমা জুড়ে স্টাবলিশ হতে পারেনি। সিনেমায় অতিরঞ্জিত মাত্রায় টুইস্ট দিতে গিয়ে খেই হারিয়েছে। সিনেমার কালার গ্রেডিং বেশ ভালো থাকলেও সিনেমার এডিটিং হতাশ করেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। ক্যামেরার কাজ ভালো করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন সিনেমাটোগ্রাফার। সিনেমার সেট ডিজাইন হতাশ করেছে।

অনেকেই সিনেমাটি নকল, কপি, রিমিক, চুরি এসব বলছে। আসলে এই কথাটা ভিত্তিহীন। সিনেমার কিছু সিকুয়েন্সের সঙ্গে মিল রয়েছে অনান্য ইন্ডাস্ট্রির সিনেমার সঙ্গে। সম্পূর্ণ সিনেমার প্লটের সঙ্গে কোনো সিনেমার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ‘প্রিন্স’ সিনেমার কিছু সিকুয়েন্সের সঙ্গে মিল রয়েছে সিনেমায়। তবে ‘কিল হিম’ সিনেমার বেশ কিছু প্লট, পয়েন্ট, ক্যারেক্টার, আর্ট তেলুগু সিনেমা ‘ইশমার্ট শাংকার’ সিনেমার সঙ্গে মিলে যায়। এই তথ্যগুলো জানতে পেরেছি সিনেমাভিত্তিক কনটেন্ট ক্রিয়েটর ‘আরএনএআর’ ওরফে রাশেদুজ্জামান রাকিবের ভিডিও থেকে।

কমার্শিয়াল সিনেমা হিসেবে ‘কিল হিম’ বস্তাপচা বলার সুযোগ নেই। ভালো কিছু করার প্রচেষ্টা করছেন সেজন্য সাধুবাদ জানানো প্রয়োজন। দিনে দিনে অনন্ত জলিলের অভিনীত সিনেমা ভালো হওয়ার দিকে হাঁটিহাঁটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে এটা স্বীকার করতেই হবে। সিনেমার শেষাংশে নায়িকা কিন্তু ভিলেনের মতো চোখটা খুলেছে। তার মানে হয়তো ‘কিল হিম’ সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তি আসবে। সেজন্য অপেক্ষা।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সিনেমালজি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fifteen − 13 =