‘কুইন অব রক এন রোল’ টিনা টার্নার মারা গেছেন

‘কুইন অব রক অ্যান্ড রোল’, কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী টিনা টার্নার আর নেই। বুধবার (২৪ মে) সুইজারল্যান্ডের কুস্ন্যাটে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। শিল্পীর মুখপাত্র বার্নার্ড ডহার্টি মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি। জানা যায়, সম্প্রতি তার স্ট্রোক হয়েছিল। এছাড়া অনেক দিন ধরে কিডনি জটিলতায়ও ভুগছিলেন গায়িকা।

টার্নারের পরিবার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছে, “তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিশ্ব একজন  কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী ও আদর্শকে হারিয়েছে।” এছাড়াও এই তারকার ভেরিফাইড ফেইসবুক পেজে এক শোক বার্তায় বলা হয়েছে, “সংগীত ও জীবনের প্রতি তার সীমাহীন আবেগ সারা বিশ্বের লক্ষ লক্ষ ভক্তকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছিল, নবীন তারকাদের অনুপ্রাণিত করেছিল। আজ আমরা সেই প্রিয় বন্ধুকে বিদায় জানাচ্ছি, যিনি আমাদের জন্য নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ ও সংগীত রেখে গেছেন। আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি তার পরিবারকে। টিনা, আপনাকে আমাদের খুব মনে পড়বে।”

ষাটের দশকের শুরুতে স্বামী আইকি টার্নারের সাথে যৌথভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন টার্নার। যদিও তাদের দাম্পত্য বেশিদিন টেকেনি। একাধিকবার নির্যাতিত হয়ে মাত্র ৩৬ সেন্ট নিয়ে নিজেদের ডালাস হোটেল রুম থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি।

এরপর আশির দশকে সুপারহিট অ্যালবাম ‘প্রাইভেট ড্যান্সার’ এর মধ্য দিয়ে এক অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটে টার্নারের। এরপর থেকেই তিনি বিশ্বব্যাপী সুপারস্টার হয়ে ওঠেন। তার ব্যতিক্রমী প্রতিভাই তাকে ‘কুইন অব রক এন রোল’ খেতাব এনে দেন। এছাড়াও টার্নার ১৯৮৫ সালের সিনেমা ‘ম্যাড ম্যাক্স বিয়ন্ড থান্ডারডোম’ এ মেল গিবসনের বিপরীতে অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির নাটবুশের পার্শ্ববর্তী এলাকার আনা মে বুলকে জন্মেছিলেন টার্নার। সর্বমোট আটবার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন এই কিংবদন্তি। এছাড়াও পেয়েছেন গ্র্যামি আজীবন সম্মাননা পুরস্কার। শক্তিশালী কণ্ঠ, আবেদনময়ী উপস্থাপন এবং বিধ্বংসী এনার্জির সুবাদে টিনা টার্নারের লাইভ পারফর্মেন্সগুলো অনন্য হয়ে উঠতো। সর্বকালের সবচেয়ে সফল সংগীতশিল্পীদের একজন হিসেবে বিবেচিত তিনি। রক মিউজিকে সাধারণত গায়কদের দাপট, জনপ্রিয়তা দেখা যায়। তবে সেই ধারায় পরিবর্তন এনেছেন তিনি। বিশ্বজুড়ে রক, আর অ্যান্ড বি, পপ ও রক অ্যান্ড রোল ঘরানার গানে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছেন।

টিনা টার্নার তার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের সংগীত ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন ১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে, যখন তিনি স্কুলের ছাত্রী। ওই সময় তিনি ‘কিংস অব রিদম’ নামে একটি ব্যান্ডের হয়ে গান শুরু করেছিলেন। প্রথমে অবশ্য তিনি অতিথি গায়ক ছিলেন। কিন্তু নিজের অনবদ্য পরিবেশনার সুবাদে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যান্ডের মূল আকর্ষণে পরিণত হন তিনি।

১৯৬০ সালে ‘আ ফুল ইন লাভ’ গানটির মাধ্যমে একক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন টিনা টার্নার। এতে তার সঙ্গে পারফর্ম করেছেন তার প্রথম স্বামী ইক টার্নার। এই গানটিকে সংগীত ইতিহাসের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী লাইভ পরিবেশনা’ বলে মনে করা হয়।

মূলত ষাটের দশকেই টিনার জনপ্রিয়তা বিস্তৃত হয়। যা ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলে। তার গানের রেকর্ড ১০০ মিলিয়নের বেশি বিক্রি হয়েছে। যার ফলে সর্বকালের ‘বেস্ট সেলিং আর্টিস্ট’-দের একজন তিনি।  তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ সংগীতশিল্পী ও নারী, যিনি বিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘রোলিং স্টোন’র প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven − eleven =