সালেক সুফী: বর্ডার-দেশে বর্ডার গাভাস্কার সিরিজ এবং সফরে শ্রীলংকায় ওয়ার্নার-মুরালিধরন সিরিজ জয় করে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল প্রমান করলো কেন অস্ট্রেলিয়া গত তিন দশক ধরে ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল। সবাই জানে অস্ট্রেলিয়া এবং উপমহাদেশের উইকেট, আবহাওয়া, ক্রিকেট পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। বর্ডার-গাভাস্কার টেস্ট সিরিজে ভারতের শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে কঠিন ক্রিকেট খেলেই ৩-১ সিরিজ জিতে আইসিসি টেস্ট সিরিজের চলতি পর্বে ফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সিরিজ হেরে গেলে ভারতের সুযোগ থাকতো। সেই ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়াকে অবশ্যই শ্রীলংকার বিরুদ্ধে সিরিজ ধবল ধোলাই অর্জন করতে হতো। শ্রীলংকার ঘূর্ণি উইকেটে বিশেষত গলে টেস্ট জয় করা সব সময় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জিলণ্ড দলগুলোর জন্য কঠিন। অস্ট্রেলিয়া কিন্তু বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছিল। বেশ কিছু দিন আগেই দুবাইতে এসে অনুশীলন করেছে। স্পিনিং উইকেটে খেলার জন্য নাথান লায়নের সঙ্গে কুহানেমান ,মার্ফিকে দলে নিয়েছে। নিজেদের স্পিনিং উইকেটে খেলার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। যার ফলাফল দেখলো ক্রিকেট বিশ্ব দুই ম্যাচের সিরিজে একচেটিয়া খেলে শ্রীলংকাকে নিজেদের অস্ত্রে বধ করে সিরিজ ধবল ধোলাই থেকে। প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যাবধানে আর দ্বিতীয় টেস্টে ৯ উইকেট জয় অস্ট্রেলিয়াকে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জন্মাবে। অস্ট্রেলীয়াকে দেখে ভারত সহ অপরাপর দেশগুলোর অনেক কিছুই শেখার আছে.অস্ট্রেলিয়ায় দুই দশক থেকে যতটুকু দেখেছি সব কাজেই ওরা পুরো মাত্রায় পেশাদার। বিশেষত ক্রিকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়া দারুন সচেতন। দেখেছি অস্ট্রেলিয়া রিভার্স সুইং, দুসরা নিয়ে রীতিমত গবেষণা করে. সব প্রতিপক্ষের সেরা খেয়োয়ারদের বিশ্লেষণ করে তাদের বিরুদ্ধে কৌশল রপ্ত করে। প্রতিটি খেলোয়াড়কে নিজ নিজ দায়িত্ব ভালোমত বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এবার দেখুন অস্ট্রেলিয়া উসমান খাওয়াজার সঙ্গে ট্রাভিস হেডকে ওপেন করতে পাঠালো। হেডের উপর দায়িত্ব ছিল শুরুতেই প্রতি আক্রমণ করে লংকান বোলারদের এলোমেলো করে দেয়া। খাওয়াজা, স্মীথ চাপ মুক্ত হয়ে খেলে প্রথম টেস্টে রানের পাহাড় গড়েছে। স্মিথ ১০,০০০ রানের মাইলফলক পেরিয়েছে। পর পর দুই টেস্টে শত রান করে ৩৬ সেঞ্চুরি পূরণ করেছে। খাওয়াজা প্রথম টেস্টে দ্বিশতাধিক রান করে এশিয়ায় দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসাবে এই সম্মান অর্জন করেছে। শ্রীলংকান স্পিনাররা নিজেদের পরিচিত পরিবেশে দারুন মার খেলেও অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার্সরা (লায়ন, কুহনেমান, মারফি) কিন্তু ধসিয়ে দিয়ে প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যাবধানে পরাজিত করেছে স্বাগতিক দলকে।
একই মাঠে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টেও শ্রীলংকা টস জয় করে প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের মোকাবিলা করতে বার্থ হয়ে ২৫৭ রান করতে পারে। জবাবে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে স্মিথ, আলেক্স কারীর শত রানের উপর ভিত্তি করে ৪১৪ রান করে ১৫৭ রানের বিশাল লিড অর্জন করে। লায়ন, কুহনেমানের ঘূর্ণি বলে আবারো বিদ্ধস্ত হয় শ্রীলংকা। ২৩১ রানে গুটিয়ে যাওয়া শ্রীলংকা মাত্র ৭৫ রানের টার্গেট দিতে পারে। বলাবাহুল্য হেসে খেলে ১/৭৫ করে ৯ উইকেটে টেস্ট জয় এবং সিরিজ ধবল ধোলাই করে অস্ট্রেলিয়া।
আবারো প্রমান হয় সব ফরম্যাটের টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে ধারাবাহিক দল, দেশে বা বিদেশে ফাস্ট কিংবা স্লো উইকেট সব পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য সেরা প্রস্তুতি নিয়ে খেলে অস্ট্রেলিয়া।