কেন পারলো না পাকিস্তান ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে?

সালেক সুফী

ক্রিকেট বিশ্ব মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে আবেগের চেয়ে পেশাদারিত্ব চূড়ান্ত বিজয় অর্জনে মূল ভূমিকা পালন করে। এমসিজিতে অবশ্যই মেধাবী পাকিস্তান দলের থেকে কুশলী ইংল্যান্ড অনেক পেশাদারি মনোভাব সম্পন্ন ছিল। পাকিস্তান দলের বোলিং শক্তি তুলনামূলক ভাবে এগিয়ে থাকলেও ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ছিল বেশ শক্তিশালী। ওদের দলে অনেক বেশি ম্যাচ উইনার ছিল। বেন স্টোকসের মতো পরিণত বিশ্ব সেরা চৌকষ খেলোয়াড় ছিল। আরো যদি বলি ১৯৯২ দলে পাকিস্তানের অত্যন্ত তুখোড় ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন তুখোড় মেধাবী অধিনায়ক ইমরান খান ছিল। সর্বোপরি মোক্ষম সময়ে পাকিস্তান বোলিংয়ের তুরুপের তাস শাহীন আফ্রিদি আহত হয়ে ১১টি বল করতে পারলো না। পাকিস্তানের ১৩৭/৮ ম্যাচ জয়ের জন্য অপ্রতুল ছিল। এতো সব বিচারে যোগ্যতর দল হিসাবেই বিশ্ব জয় করেছে ইংল্যান্ড। লম্বা রেসের ঘোড়ার মতোই নিজেদের সামর্থের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে জিতেছে শিরোপা ওরা। শিরোপা জিততে হলে ভাগ্যর সহায়তা লাগে। সিমিং, সুইংগিং উইকেট আর পরিবেশে টস জয় বড় ভূমিকা পালন করেছে।

দুটি দল এবারে এর আগে এবার একটি করে ম্যাচ খেলে হেরেছিল এমসিজিতে। অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছিল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর বিরাট কোহলির অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের কারণে হেরেছিল পাকিস্তান আর ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে প্রতিবেশী আয়ারল্যান্ড। কাকতলীয় হলেও সত্য দুটি খেলায় কিন্তু একসময় দুটি দলের সেমি ফাইনাল খেলা অনিশ্চিত করেছিল। অস্ট্রেলিয়া ওদের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের সঙ্গে বড়  ব্যবধানে জয়ী হলে ছিটকে যেত ইংল্যান্ড। পাকিস্তান সুযোগ পেয়েছে গ্রুপ পর্যায়ে শেষ খেলায় নেদারল্যান্ডস অভাবনীয় ভাবে চোকার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেওয়ায়।

পাকিস্তান দল নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ছাড়া টুর্নামেন্টে আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ ছাড়া ভালো ব্যাটিং করেনি। দলের প্রধান শক্তি বাবর আলী আর মোহাম্মদ রিজওয়ান কিন্তু টুর্নামেন্ট জুড়েই নিষ্প্রাণ ছিল। পক্ষান্তরে এই বিশ্বকাপ জুড়ে বাটলার আর হেলস জুটি ছিল তুঙ্গে। ওদের ব্যাটিং টি২০ ফরম্যাটের জন্য যথাযথ। বিশ্ব পর্যায়ে শিরোপা জয় করতে অন্তত দুই/তিন জন বিশ্বমানের অল রাউন্ডার প্রয়োজন। পাকিস্তান দলে একমাত্র শাদাব খান ছাড়া কেউ ছিল না। ইংল্যান্ড দলে বেন স্টোকস, স্যাম কুরান ছিল।  বেন স্টোকস ফাইনাল জিতিয়ে দিলো। পাকিস্তানের মেধাবী বোলিং ইউনিট মামুলি সংগ্রহ প্রতিরক্ষায় দারুন ভাবে জ্বলে উঠেছিল। ভাগ্য সহায় থাকলে নাসিম শাহ একটি/দুটি উইকেট পেতেও পারতো। বাবর আযমের উচিত ছিল গ্রিপিং, টার্নিং উইকেটে মোহাম্মদ নেওয়াজকে দিয়ে সঠিক সময়ে একটি দুটি ওভার করানো। হয়তো একই পরিবেশে ইমরান খান থাকলে করতো।

জানি পাকিস্তানের পরাজয় অনেক ক্রিকেট প্রেমিকদের আহত করেছে। কিন্তু চুলচেরা বিশ্লেষণে সেরা দল শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে বলা যায়। ২০১৫ সালে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে এডিলেডে হারিয়ে ছিটকে দিয়েছিলো। সঠিক পরিকল্পনা করে ইংলিশ লায়ন্সরা সাদা বলের দুটি ফরমেট ওডিআই এবং টি২০ বিশ্বসেরা। আর বাংলাদেশ বিসিবির শোচনীয় ব্যার্থতায় সব ফরম্যাটে তলানিতে। শিক্ষা সফরে শিখেই চলেছে নিরন্তর।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × three =