কেমন হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াড?

সালেক সুফী

অনেক প্রতীক্ষার অবশেষে বিসিবি নির্বাচকমণ্ডলী কাল দুয়ারে কড়া নাড়তে থাকা আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে যতই উন্মাদনা থাকুক না কেন সবাই জানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ এখনো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটে নিচের সারির দল। নিয়মিত পরাজয়ের ফাঁকে ফাঁকে কালেভদ্রে জয় আসে। আইসিসি র‌্যাংকিংয়ে কখনো ৮ম বা কখনো ৯ম অবস্থান। সেই দল নিয়ে বাংলাদেশের প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় জল্পনা কল্পনা বিনোদন ছাড়া কিছুই না। সীমিত বিকল্প নিয়ে স্কোয়াড ঘোষণায় নির্বাচকদের অনেক কিছু বিবেচনার সুযোগ ছিল না।

স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), তাসকিন আহমেদ (সহ অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, সাকিব আল হাসান, তাওহীদ হৃদয়, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, রিসাদ হোসেন, শেখ মাহেদী হাসান, শরিফুল ইসলাম, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম হাসান শাকিব এবং তানভীর হোসেন।

রিজার্ভ: হাসান মাহমুদ, আফিফ হোসেন

বাংলাদেশ দল টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আমেরিকার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলে পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করবে। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের গ্রুপে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, নেপাল এবং নেদারল্যান্ডস।

দল নির্বাচন নিয়ে প্রথমেই আসবে তাসকিন প্রসঙ্গ।  বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণের প্রধান অস্ত্র তাসকিন কি ম্যাচ ফিট? টুর্নামেন্টের আগে কি পুরোপুরি ফিট হবার সম্ভাবনা আছে? ১০০% ফিটনেস নাই এমন কাউকে স্কোয়াডে রাখা এবং তাকে সহকারী অধিনায়ক করার ঝুঁকি নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত হলো সময়ই বলে দিবে। তবে দলের এমন একজন অপরিহার্য খেলোয়াড়কে কেন প্রচণ্ড দাবদাহের সময় ৫০ ওভারের স্থানীয় ক্রিকেট খেলানো হয়েছিল?

মুস্তাফিজকেই যেখানে আইপিএল থেকে ফিরিয়ে আনা হলো সেখানে তাসকিনের ব্যাপারে কেন ক্রিকেট অপারেশন উদাসীন ছিল? আর তাসকিন যখন অনিশ্চিত তখন অভিজ্ঞ পেস বোলিং অল রাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে স্কোয়াড থেকে ছেটে ফেলা হয়ত সঠিক হল না। বেশ কিছুদিন বিরতির পর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দলে ফিরে ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছিল। একটি বা দুটি দুটি ম্যাচ দেখে প্রমাণিত একজন পরিণত খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া আমার বিবেচনায় ঠিক হয়নি। তানজিম হাসান শাকিব থেকে সাইফুদ্দিন দলে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারতো।

এরপর আসি ব্যাটিং প্রসঙ্গে। সমস্যাসঙ্কট ওপেনিং পার্টনারশিপ, টপ অর্ডার ব্যাটিং। তামিম ইকবাল ধাঁধাঁ কেন মিটানো গেলো না? দেশ সেরা ওপেনার না থাকায় ওপেনিং পার্টনারশিপ কিছুতেই স্থিতু হচ্ছে না। লিটন দাস রান খরায়।  আত্মবিশ্বাস শূন্যের কোথায়। সৌম্য এই আছে এই নেই। সবেধন নীলমনি তরুণ তানজিদ তামিম স্বল্প অভিজ্ঞ। পারভেজ ইমনকে স্কোয়াডে নিয়েও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে কেন যাচাই করা হলো না।

লিটন, সৌম্যর উপর যত বিনিয়োগ করেছে বিসিবি সেই তুলনায় অন্য বিকল্প খুঁজে পেতে কিছুই করেনি বিসিবি। অগত্যা তাই নির্বাচকমণ্ডলী লিটন, সৌম্য এবং তানজিদ তামিমের উপর ভরসা রেখেছে। আশা করি টপ অর্ডারে নাজমুল শান্ত, সাকিব আল হাসান এবং তাওহীদ হৃদয় ভালো করবে। মিডল অর্ডারে বর্ষীয়ান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এখনো দলের ভরসার স্থল। সঙ্গে আছে জাকির আলী এবং রিশাদ হোসেন। আমি মেহেদী মেরাজ এবং সাইফুদ্দিন স্কোয়াডে থাকলে খুশি হতাম। হয়তো দলের কম্বিনেশন এবং কোচ-ক্যাপ্টেনের চাহিদাকে সম্মান জানিয়েছে নির্বাচকমণ্ডলী।

মনে রাখতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই দলের সামর্থ সীমিত। নিয়মিত ১৫০ বা ১৬০ করতে পারে আগে ব্যাটিং করে যদি সাকিব বা রিয়াদ বড় ইনিংস খেলে তাহলে হয়ত কোন ম্যাচে ১৮০ হতেও পারে। এখন কিন্তু টি২০ ক্রিকেটে নিয়মিত ২৩০- ২৪০ রান হচ্ছে। আবার সেই রান তাড়া করে ম্যাচ জিতে নিচ্ছে পরে ব্যাটিং করা দল।

নড়বড়ে টপ অর্ডার নিয়ে বাংলাদেশ কতদূর কি করবে নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশ যদি প্রথম স্তর পেরিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে পারে সেটি হবে বিশাল অর্জন। আর তা করতে হলে বাংলাদেশকে শ্রীলংকা অথবা দক্ষিণ আফ্রিকা একটি দলকে হারাতে হবে। যারা বিশ্ব ক্রিকেট অনুসরণ করেন তারা জানেন কাজটি আদৌ সহজ না। যাহোক ভালো মন্দ মিলিয়ে বাংলাদেশের একটি স্কোয়াড যাচ্ছে বিশ্বকাপে।  আশা থাকবে কিন্তু স্বপ্ন দেখবো না।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven + eighteen =