মাসুম আওয়াল
হ্যালো কেমন আছেন এই তো ভালো। আপনার একটা সাক্ষাৎকার নিতে চাই। নেন। প্রশ্নগুলো হোয়াটস অ্যাপে পাঠাই পাঠাতে পারেন। ভয়েস মেসেজ আকারে উত্তরগুলো পাঠালে ভালো হয়, কোনো সমস্যা হবে? না না। আপনি প্রশ্নগুলোর আগে নাম্বার দিয়ে দিয়েন। আচ্ছা ঠিক আছে।
অনেকদিন পর রুনা খানের সঙ্গে আলাপ। দেশের একজন স্বনামধন্য অভিনেত্রী তিনি। অভিনয় গুণে যিনি বারবার আলোচনায় আসেন। সম্প্রতি দারুণ সব ফটোশুট করে চমকে দিচ্ছেন সবাইকে। ওজন কমিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দর্শকদের। সমালোচনার মুখেও পড়েছেন ব্যতিক্রমী পোশাক পরে। বর্তমান ব্যস্ততা ও নানা বিষয় নিয়ে রঙবেরঙের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাসুম আওয়াল।
আপনার কাছে জীবনের মানে কী?
আমার কাছে জীবন মানে পৃথিবীর কোনো প্রাণীর কোনো ক্ষতি না করে আনন্দ নিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করা।
মডেলিং, অভিনয় আর অন্য পেশার মধ্যে তফাতটা কোথায়?
আমি অভিনয় করতে ভালোবাসি। পেশা হিসেবে যে কাজটা করতে আমি ভালোবাসি সেই কাজটা করেই আমি উপার্জন করতে পারি। এটা আমার পেশার একটা আনন্দের দিক।
সম্প্রতি ছবি পোস্ট করে তুমুল আলোচিত হয়েছেন, পোশাকের স্বাধীনতা বিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কী?
আমি যেহেতু একজন পেশাদার অভিনেত্রী ও মডেল, আমার চরিত্রের প্রয়োজনে আমি যে কোনো পোশাক পরবো। মডেল হিসেবেও আমি যখন যে ডিজাইনারের পোশাকে কাজ করব তখন সে ডিজাইনারের ডিজাইন করা পোশাক পরবো। সেটা যে কোনো ডিজাইনের পোশাক হতে পারে। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কে কোন পোশাক পরবে এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ও পছন্দ। কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে সেই অনুষ্ঠান উপযোগী পোশাক পরা উচিৎ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যিনি পোশাকটা পরবেন তিনি তার পছন্দেই পরবেন।
ভক্তদের বলবেন ফিটনেস ধরে রাখার রহস্য কী?
ফিটনেস ধরে রাখার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যকর ও পরিমিত খাবার খেতে হবে। নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে। শরীর চর্চা করতে হলে জিমেই যেতে হবে, তা নয়। ঘরেও শরীর চর্চা করা যায়। এছাড়া যার যেটা পছন্দ যেমন – হাঁটা, সাঁতার, জিমে যাওয়া চর্চা করতে হবে। আর পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।
তারকাদের বিরূপ মন্তব্যের শিকার হতে হয়; কতটা প্রভাব ফেলে, কিভাবে কাটিয়ে ওঠেন?
যারা কাজ করেন তাদের কাজের প্রশংসা ও আলোচনা-সমালোচনা দুটোই থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। এতে আমার ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। কারণ আমি শুধু দেখি আমার কাজটা ঠিকমত করতে পারছি কি না। সবসময় নিজের সেরা কাজটি করার চেষ্টা করি। সে কাজ কারো ভালো লাগলে প্রশংসা আসবে, ভালো না লাগলে সমালোচনা। ভালো-মন্দটা আসলে আপেক্ষিক ব্যাপার। যিনি দেখছেন তার ওপর নির্ভর করে। একই কাজ কারো ভীষণ ভালো লাগে আবার কারো কাছে সমালোচনার শিকার হয়। যিনি প্রশংসা করছেন এটা তার দৃষ্টিভঙ্গি, যিনি সমালোচনা করছেন সেটাও তার দৃষ্টিভঙ্গি।
ক্যারিয়ারে এগিয়ে চলেছেন আপন গতিতে, আপনার মোটিভেশন কী?
পরিবার হলো একটা অন্যরকম নির্ভরতার জায়গা। আমার যে কোনো কিছুর মূল শক্তি আমার পরিবার, আমার প্রিয়জন, আমার কাছের মানুষেরা।
নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে তৈরি করেছেন মঞ্চে। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের কর্মী ছিলেন। ভালো অভিনয়শিল্পী হতে থিয়েটারের ভূমিকা কতটা মঞ্চকে মিস করেন?
আমি মনে করি যে কোনো শিল্পসত্ত্বা হচ্ছে প্রকৃতি প্রদত্ত। তবে তারপর সেটার যত চর্চা হবে তত সুন্দর হবে। কারো যদি গানের গলা না থাকে তাহলে সারাজীবন ধরে চেষ্টা করলেও সে গায়ক হবে না। এটা প্রকৃতি প্রদত্ত একটা গুণ। সেটা যার আছে সে যত চর্চা করবে তত সুন্দর জায়গায় যাবে। একই রকম যে কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে, যেমন নাচ, গান, আঁকাআঁকি, অভিনয় সবটাই চর্চার মধ্য দিয়েই সুন্দর হয়। থিয়েটার সুন্দর একটা চর্চার জায়গা। প্রতিভাবানদের সামনে এগিয়ে নিতে থিয়েটার অবশ্যই ভালো ভূমিকা রাখে।
আপনার অভিনীত কোন মঞ্চ নাটকের কথা মনে পড়ে?
মঞ্চে আমি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে দেওয়ান কাজীর কিচ্ছা নাটকে কাজ করেছি। দেওয়ান গাজী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আলী যাকের, ছিলেন আবুল হায়াত, সারা যাকের। আমি সেখানে লাইলি চরিত্রে অর্থাৎ গাজীর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করি। গাজীর মেয়ে নাটকটির প্রধান নারী চরিত্র ছিল। মঞ্চে দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি। একই মঞ্চে আসাদুজ্জামান নূরের পরিচালনায় এতগুলো গুণী মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্যেরই বটে।
আপনার অভিনয় ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এমন কাজ কোনটি?
গাজী রাকায়েতের ‘ঘোড়া ঘোড়া’ নাটকটির কথা বলবো সবসময়। এটি একটি একক নাটক ছিল। সেই নাটকটি প্রচার হবার পর যতটুকু জেনেছি অমিতাভ রেজা চৌধুরীর টিম আমাকে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনের জন্য অডিশনে ডাকে। ওই নাটকটি দেখে তারা আমাকে বিজ্ঞাপনটিতে নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর বেশ প্রশংসা পায় সবার। ‘ঘোড়া ঘোড়া’ ও গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপন আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট মনে করি।
বড়পর্দাতে অভিনয় করছেন। এখন কোন চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যস্ততা?
আমি আসলে যেমন গল্প পছন্দ করি সেরকম গল্পের চরিত্রেই কাজ করি। সেরকম গল্পের কাজ এখানে খুব বেশি হয় না। তবে আমি আমার মতো করে অল্প অল্প কাজ করেছি। আমি যে ধাঁচের গল্প পছন্দ করি সে রকম গল্পেই কাজ করতে চাই। খুব সমানতালে আমার কাজ হয়েছে তেমনও না। আমার অভিনীত প্রথম সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। একই দিনে আমার দুইটি ছবি মুক্তি পায়। সিনেমা দুটি হলো ‘ছিটকিনি’ ও ‘হালদা’। ২০১৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আমার চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৬টি। বর্তমানে মাসুদ পথিকের ‘বক’ ও কৌশিকশঙ্কর দাসের ‘দাফন’ এই দুইটি চলচ্চিত্র মুক্তির অপেক্ষায় আছে।
হালদা চলচ্চিত্রে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। অনুভূতি কেমন ছিল?
যে কোনো শিল্পীর জন্য এটা অত্যন্ত সম্মান ও আনন্দের। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অভিনয়ের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান। এটা যে কোনো শিল্পীর কাছে স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্ন আমার পূর্ণ হয়েছে জীবনের প্রথম সিনেমা দিয়ে। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটা যেন স্বপ্নের চেয়েও বড় কিছু পাওয়া। আমি জীবনে কখনো ভাবিনি প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবো।
বর্তমানে প্রচুর ওয়েব ফিল্ম ও ওয়েব সিরিজ নির্মাণ হচ্ছে। দেশে ওয়েব সিরিজের সংকট ও সম্ভাবনা কী?
সংকটের কথা আমি বলতে পারব না। সংকট তেমন চোখে পড়েনি। সম্ভাবনার কথা যেটা বলতে পারি – আমি মূলত টেলিভিশনে কাজ করেছি। টেলিভিশনের ক্ষেত্রে একক নাটক ও ধারাবাহিকের যে বাজেট থাকতো তার চেয়ে এখন ওয়েব কন্টেন্টের নির্মাতারা আরো অনেক বেশি বাজেট পান। বাজেট পেলে কাজ ভালো করার সুযোগ থাকে।
এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাচ্ছে সিনেমা। ওটিটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সারা পৃথিবীতে বড় পর্দার সিনেমা এখন ওটিটিতে রিলিজ পাচ্ছে। ঘরে বসে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন সাবস্ক্রাইব করে কনটেন্ট দেখতে পাওয়া যায়। সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তি উন্নত হয়। আমাদের পাশের দেশেও বড় পর্দায় মুক্তির এক মাস পরেই সেই সিনেমা ওটিটিতে পাওয়া যাচ্ছে। সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে কাজের ধরন গতি প্রকৃতি বদলে যায়।
আপনার শৈশব কৈশোর নিয়ে জানতে চাই…
আমার জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দাদির বাড়িতে। বাবার চাকরি সূত্রে আমি কয়েকটি স্কুলে পড়েছি। তিন বছর বয়স থেকে এসএসসি পর্যন্ত সখিপুর টাঙ্গাইলে ছিলাম। এসএসসির পর আমি ঢাকায় আসি। আমার ইন্টারমিডিয়েট বদরুন্নেছা গভর্মেন্ট কলেজ থেকে। তারপর অনার্স মাস্টার্স করি ইডেন কলেজ থেকে বাংলায়। পরিবার ও স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর এক শৈশব কৈশোর কেটেছে আমার। মনে পড়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির সময়গুলো। সেই সময়গুলো কেটেছে সখিপুর মির্জাপুরের লাল মাটি, শাল, গজারের বনে বনে সবুজ প্রকৃতির মাঝে। আমার বাবার আমি একমাত্র মেয়ে। আমার একটি ছোট ভাই আছে। মা হোমমেকার। দেশের ৯৮ ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো আমার পরিবারও মধ্যবিত্ত। সেখানে খুব আনন্দে বেড়ে উঠেছি আমি।
আপনার ব্যক্তিজীবন ও পরিবার…
আমার হাজব্যান্ড ও কন্যাকে ঘিরে আমার ছোট্ট পরিবার। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সেই ছোটবেলার মতোই রয়ে গেছি। ডাল-সবজির মতোই অতি সাধারণ জীবন-যাপন করতে পছন্দ করি।
সবার উদ্দেশ্যে কী বলতে চান?
সবার উদ্দেশ্যে ভালোবাসা। সবাই ভালো থাকুন সুন্দর থাকুন। যারা আমাকে ভালোবাসেন, আমার কাজকে ভালোবাসেন, তাদের জন্য আমার প্রাণঢালা ভালোবাসা।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আলাপচারিতা