সালেক সুফী: ক্রিকেটে এখন বৃহস্পতি বসত করছে। ভাগ্যের অকৃপণ আনুগত্য পাচ্ছে টিম টাইগার্স। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন্স ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশ পর্যদুস্ত করে দু দুটি ম্যাচ ক্রমান্বয়ে জিতে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ জিতে নিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। আরো একটি ধবল ধোলাই অর্জনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে সাকিবের টাইগার স্কোয়াড। ইংল্যান্ড বাংলাদেশের তিন ম্যাচের প্রথম দিপাক্ষিক টি২০ সিরিজে কাল ৪ উইকেটে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ এখন ২-০ এগিয়ে। ওডিআই সিরিজের শেষ ম্যাচটি যোগ করলে উপর্যুপরি তিন তিনটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। সাকিব -হাতুরাসিংহে ছোঁয়ামাত্র যেন সোনা হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। ভাগ্যের বরণমালা ওদের গলায়। কেউ কিন্তু কস্মিনকালেও ভাবে নি বাংলাদেশ তার দুর্বলতম টি২০ ফরম্যাটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারাবে। নবীন প্রবীনের সমাহার বাংলাদেশ দলকে জয়ের জন্য কৃতকল্প মনে হচ্ছে।
চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে ৫০ রানে পরাজয়ের পর কাল ঢাকার মিরপুরের শেরেবাংলায় ইংল্যান্ডের জন্য ছিল বাঁচা-মরার ম্যাচ। উইকেটে পেস, বাউন্স, টার্ন সবই চির বাড়ন্ত। টস হেরে ব্যাটিং করতে এসে সফরকারীরা জয়ের নেশায় মত্ত এক দুরন্ত বাংলাদেশ বাহিনীর মুখোমুখি হলো। তাসকিন, মুস্তাফিজ, মাহমুদ হাসান গতি আর মুভমেন্ট দিয়ে হকচকিয়ে দিলো। এই ম্যাচে দলে ফেরা মেহেদী মিরাজের ঘূর্ণি বলে দিশেহারা ইংরেজ সিংহ।
মাঠে বাংলাদেশ ফিল্ডাররা যেন ক্ষুদার্থ বাঘ। সল্ট, মালান, মঈন, বাটলার হালে পানি পেলো না। কিছুটা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেছিল বেন ডাকেট। সর্বসাকুল্যে রান হলো ১১৭। এমনকি মিরপুর উইকেটে গড় রান থেকেও কম। মেহেদি চার ওভারে ১৩ রান দিয়ে একই উইকেট নিলেন চার চারটি। ইংল্যান্ডের ১১৭ রানের ইনিংসে উল্লেখ করার মতো বেন ডাকেট ২৫ আর ফিল সল্ট ২৫। বাংলাদেশের হয়ে উইকেট রক্ষক লিটন দাসের দুটি স্ট্যাম্পিং, শান্তর ক্যাচ ছিল দর্শনীয়। মাহমুদ হাসান লক্ষ্যভেদী ইয়র্কার ছুঁড়ে উড়িয়ে দিয়েছিলো ইংরেজ অধিনায়ক জস বাটলারের উইকেট।
কঠিন উইকেটে ইতিহাস রচনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ভড়কে যায়নি তুখোড় ইংল্যান্ড বোলিং আক্রমণের মুখে। তবে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শুরু করেও সহসা ফিরে যায় লিটন আর রনি। অপর প্রান্তে অটল অচল হিমাদ্রির মতো দাঁড়িয়ে শান্ত। সঙ্গী নবীন হৃদয়ের যোগাযোগে তৃতীয় উইকেটে যোগ হয় মূল্যবান ২৯ রান। স্বল্প স্কোরের ম্যাচে অপর্যাপ্ত নয়। হৃদয় ফিরে যাবার পর ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয় সাকিব। নিজেকে আড়ালে রেখে বাম হাতি স্পিনার মঈন আলী আর লেগ স্পিনার আদিল রশিদের সামনে পাঠানো হলো মেহেদী মিরাজকে।
শান্ত-মিরাজের উজ্জীবিত ৪৩ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলো। মিরাজ ব্যর্থ হলে হয়তো নানা কথা বলা হতো। কিন্তু ১৬ বলে দুই প্রচন্ড ছক্কায় করা মেহেদির ২০ রান জানিয়ে দিলো জয় ছাড়া আর কোনো পরিণতি নেই ম্যাচটির। মেহেদি ফিরে যাবার পর সাকিব, আফিফের দ্রুত পতন কিছুটা আকর্ষণ এনেছিল ম্যাচে। মরিয়া হয়ে বিদ্যুৎগতিতে বল ছুড়ছিলো জোফরা আর্চার। কিন্তু অবিচল আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা নাজমুল হোসেন শান্তকে (৪৬*) টলানো যায়নি। তাসকিন এসে দুটি সাহসী স্ট্রোকস উপহার দিলে বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় গ্যালারিতে রুদ্র মাতম তুলে। ২-০ ম্যাচে এগুনো বাংলাদেশ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে এখন ধবল ধোলাইয়ের অপেক্ষায়।
যেন এক জাদুমন্ত্রের ছোয়ায় পাল্টে গেছে বাংলাদেশ। যা কিছু ছুঁইছেন সাকিব – হাতুরাসিংহে সোনা হয়ে যাচ্ছে। এই দল যখন জিততে শিখেছে আকাশ এখন ওদের সীমানা। তরুণ দলটিকে নিবিড় যত্ন নেয়া হলে ওরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে।