ক্রিকেটে শুরু হোক নতুন পথচলা

দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট মহলে বোদ্ধাজনের দাবি ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে আলো ছড়াতে থাকা বাংলাদেশের ক্রিকেট আইকন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সম্পৃক্ত করার।  অবশেষে সেই প্রতীক্ষার প্রহর গোনা শেষ হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে আইসিসির এশিয়া অঞ্চলে ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসাবে কর্মরত আমিনুল ইসলাম বুলবুল আপাতত বিসিবির পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এমন এক সময়ে বুলবুল দায়িত্ব নিয়েছেন যখন সঠিক পরিকল্পনার অভাব, দুর্বল ঘরোয়া অবকাঠামো, অনুকূল পরিবেশের অভাব, পেশাদারিত্ব ইত্যাদির সমিষ্টিগত ব্যর্থতায় সকল ফরম্যাটে বাংলাদেশ আইসিসি র‍্যাংকিংয়ে তলানিতে। টেস্ট খেলুড়ে প্রধান দলগুলো দূরের কথা সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় খাবি খাচ্ছে রীতিমত। নতুন বিসিবি সভাপতির জন্য চ্যালেঞ্জগুলো অজানা নয়। এসিসি বা আইসিসিতে দীর্ঘদিন সফলতার সঙ্গে কাজের সুবাদে বুলবুল একই ধরণের পরিস্থিতি দেখেছেন, সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে পরিবর্তনের সারথি হয়েছেন। তাই ক্রিকেট বিশ্বে বুলবুল সমাদৃত। বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলের সহায়তা পেলে সীমিত সময়েও বুলবুল কিছু অপরিহার্য মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারবেন বলে আস্থা রাখা যেতেই পারে।

নির্বাচন ছাড়া কিন্তু বিসিবিতে কিন্তু ব্যাপক পরিবর্তনের সুযোগ নেই। নতুন সভাপতিকে কিন্তু কাজ করতে হচ্ছে নির্বাচিত বোর্ড পরিচালকদের নিয়েই। নাজমুল আবেদীন ফাহিম ছাড়া বাকি সবাই দীর্ঘ দিন বিসিবিতে দায়িত্বরত থেকে সাফল্যের পরিচয় দিতে পারেনি। নড়বড়ে ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামো, ম্যাচ ফিক্সিং অভিযোগ, দল নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, বিপিএল বিড়ম্বনা সব কিছুতেই বিসিবি পরিচালকদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। এমন পরিবেশে নতুন সভাপতি সকল পরিচালকদের দায় দায়িত্ব সুনিদৃস্ট করে দিয়ে জবাব দিহিতার আওতায় আনতে শুরুতেই সুনি‍র্দি‍ষ্ট কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন। একজন পেশাদার দায়িত্বশীল ক্রিকেট বিজ্ঞ প্রশাসক কিছুদিন সময় পেলে অবশ্যই ক্রিকেট খোল নলচে পাল্টে দিবেন সন্দেহ তাতে নেই। আপাতত শ্রীলংকার বিরুদ্ধে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেট দিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন ভাবে পথচলা।

বাংলাদেশ টেস্ট স্কোয়াড:

নাজমুল হোসেন (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, এনামুল হক, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, মাহিদুল ইসলাম, জাকের আলী, মেহেদী হাসান মিরাজ (সহ-অধিনায়ক), তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান, হাসান মুরাদ, ইবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা ও খালেদ আহমেদ।

শ্রীলংকার বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের শুরু হবে ২০২৫-২০২৭ পর্যায়ের আইসিসি টেস্ট চাম্পিয়নশিপ রাউন্ড। নিজেদের দেশে শ্রীলংকা অনেক শক্তিশালী দল। দলে মহাতারকা কম থাকলেও ব্যাটিং বোলিং সবকিছুতেই প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের কমতি নেই। এহেন একটি দলের বিরুদ্ধে সফল হতে হলে সাম্প্রতিক অতীত ভুলে বাংলাদেশকে নতুন ভাবে সুসংগঠিত হতে হবে। হেড কোচ ফিল সিমন্স, পেস বোলিং কোচ শন টেট, স্পিন বোলিং কোচ মোস্তাক আহমেদ বিশ্বসেরাদের অন্যতম। নির্বাচিত টেস্ট স্কোয়াড নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় খেলোয়াড়রা মাঠের খেলায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে সাফল্য না আসার কারণ দেখিনা।

তামিম ইকবাল দলে অনিয়মিত হয়ে যাবার পর থেকে ওপেনিং পার্টনারশীপ নড়বড়ে হয়ে গেছে। নির্বাচকরা কারো উপরেই আস্থা রাখতে পারেনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের টেকসই প্রমান করতে পারেনি কেউ। সাদমান ইসলাম আর আনামুল হক বিজয়ের উপর আস্থা রেখেছে নির্বাচক মন্ডলী। লিটন হয়তো মিডল অর্ডারে খেলবে। টেস্ট দলে কিন্তু বিকল্প ওপেনার নেই। কোন একজন আহত হলে হয়ত অধিনায়ক নাজমুল শান্ত, এমনকি সহ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজকে ওপেনার হিসাবে দেখা যেতে পারে। দলের ব্যাটিং শক্তি মোমিনুল, মুশফিক, নাজমুল শান্ত, লিটন দাস। এদের অন্তত দুই জনকে প্রতি ইনিংসে দায়িত্ব নিয়ে লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। লেট্ মিডল অর্ডারে জাকের আলী, মাহিদুল অংকন প্রতিভাবান। বাংলাদেশকে টেস্ট সিরিজে টিকে থাকতে নিয়মিত ৩৫০-৪০০ রান করতে হবে। কিন্তু শংকা হল ইদানিং বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নিয়মিত মোড়ক ধরছে। তাসের ঘরের মত ঝরে পড়ছে অবলিলায়। টিম ব্যাবস্থাপনা দলকে উজ্জীবিত করতে পারছে না।

দীর্ঘদিন পর দলে ফিরেছে পেস বলার এবাদত হোসেন। হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, খালেদ আহমেদ সম্মিলিত পেস আক্রমণ বিশ্বমানের। ব্যাটসম্যানরা পর্যাপ্ত রান করতে পারলে পেস বোলাররা লড়াই করবে সন্দেহ নেই। স্পিন আক্রমণের নেতৃত্বে থাকবে তাইজুল ইসলাম, মেহেদী মিরাজ। সঙ্গী আছে নাঈম হাসান আর হাসান মুরাদ। আশা করি বাংলাদেশের নতুন সূচনা সাফল্য বয়ে আনবে।

স্মরণ রাখতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে এখন বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। দেয়ালে পিঠ থেকে গাছে। ঘুরে দাঁড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। ক্রীড়ানুরাগীরা কিন্তু সাফল্যের তৃষ্ণায় চাতক পাখির মত অপেক্ষা করছে। হামজা অনুপ্রাণিত ফুটবল প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। ক্রিকেটে সাফল্য না আসলে কিন্তু অনুরাগীরা মুখ ফিরিয়ে নিতেও পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 + 4 =