সালেক সুফী
শক্তিশালী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওদের আঙিনায় বাংলাদেশের ১০ উইকেটের দাপুটে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ জয়কে আমি নিঃসন্দেহে ক্রিকেট অঙ্গনে বাক বদলের সুবাতাস বলবো। সিরিজ শুরুর আগে দূরে থাক, কাল সকালে শেষ দিনের খেলা শুরুর আগেও কিন্তু খুব কম মানুষ স্বপ্ন দেখেছে বাংলাদেশের জয়ের। ক্রিকেট বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটকে কেন বলে গৌরবোজ্জ্বল অনিশ্চয়তায় ভরা খেলা সেই কথাটি আবারো প্রমাণিত হলো বদলে যাওয়া নিস্প্রান উইকেটে সাকিব মিরাজ ঘূর্ণি জাদুতে পাকিস্তানের বিদ্ধস্ত হয়ে যাওয়ায়। যেন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে উঠছিলো এগারো জন ক্রিকেট সৈনিক। কি দারুন বোলিং, কি চটপটে ফিল্ডিং। ধসে গেলো পাকিস্তান। ক্রিকেট বিশ্ব অবাক বিস্ময়ে রইলো তাকিয়ে। নতুন মাইল স্টোন সৃষ্টি করে পাকিস্তানের মাটিতে ১০ উইকেটের ব্যাবধানে জয় ছিনিয়ে নিলো বীর বাংলাদেশ।
ছাত্র জনতার গণবিস্ফোরণে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর দেশে চলছে নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রাম। এরই মাঝে প্রলয়ংকারী বন্যায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ পূর্ব বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ জনপদ। ক্রিকেট অঙ্গনেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোয়া। বিসিবিকে ঢেলে সাজানোর কাজ সূচিত হয়েছে প্রাক্তন জাতীয় দলের অধিনায়ক, প্রাক্তন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদকে বিসিবি সভাপতি এবং ক্রিকেটার গড়ার কারিগর নাজমুল আবেদীন ফাহিমকে বোর্ড পরিচালক করার মাধ্যমে। অচিরেই আরো সংস্কার হবে ক্রিকেটে, ক্রীড়াঙ্গনে।
দেশে গণ আন্দোলন চলা কালে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে অসুবিধা তাই পাকিস্তানে আগেভাগে গিয়েছিলো বাংলাদেশ দল। সেখানে অনুশীলন করে পরিবেশ এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়েছে। তবে দেশে পরিবর্তন এবং বিশেষত বিসিবিতে পরিবর্তনের শুভ প্রতিক্রিয়ায় দলের উপর পড়েছে অনুভব করা গেছে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা পরিবর্তন থেকেই। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে রাওয়ালপিন্ডি উইকেটের চরিত্র পাকিস্তান দল থেকেও ভালো বুঝেছে। আর তাই তিন পেসারের সাথে দুই স্পিন বোলিং অল রাউন্ডার নির্বাচনে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। টস জয় করে বোলিং করার ঝুঁকি নিতে পারাটিও ছিল সাহসী সিদ্ধান্ত। পাকিস্তান কিন্তু দলে প্রথম সারির স্পিনার না রেখে ভুল করেছে।
বাংলাদেশের সূচনাটা ছিল সাফল্য গাঁথা। আব্দুল্লাহ শফিক, শান মাসুদ, বাবার আজম পত্র পাঠ বিদায় নিয়েছে বৃষ্টি বিঘ্নিত বিলম্বিত প্রথম দিনের সূচনায়। সাঈম আয়ুব, মোহাম্মদ রিজওয়ান এবং সাউদ শাকিলের ঝলমলে ব্যাটিং পাকিস্তানে ম্যাচে ফেরালেও ৪৪৮/৬ ইনিংস ঘোষণা ছিল পাকিস্তানের কৌশলগত ভুল। ব্যাটিং চালু রেখে ৫৫০-৬০০ করে বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে বের করে দিতে পারতো পাকিস্তান। পিছনে ফায়ার তাকালে পাকিস্তান হয়তো অনুষ্যেচনা করবে।
বীরের মোট ব্যাটিং করেছে একটি কৃতকল্প ইউনিট হয়ে বাংলাদেশ। তরুণ সাদমান ইসলাম খেলেছে অসামান্য দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে। ছোট পাখি মোমিনুল খেলেছে এল ঝলমল ইনিংস। এই যে পাকিস্তানের দুরন্ত পেস আক্রমণের মোকাবেলায় বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভেঙে পড়েনি এটি নতুন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাক বদলের সূচনা। বাংলাদেশের লিটল মাস্টার মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিক খেলেছে আকাশ ছোয়া অনবদ্দ ইনিংস, লিটন দাস, মেহেদী মিরাজ কাকে রেখে কার কথা বলবো। ৫৬৫ রানের পাহাড় চূড়ায় উঠে বাংলাদেশ পাকিস্তানের মনোবল দুমড়ে চুমরে চূর্ণ করেছে। শেষ দিনের সকালে সংহারী রূপে আবির্ভুত পরিবর্তিত বাংলাদেশের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান। নিস্প্রান উইকেট থেকে দৈত্য দানবরা বেরিয়ে আশায় সাকিব মিরাজের ঘূর্ণি বলে ছিল প্রলয় নৃত্য। রিজওয়ান কিছুটা প্রতিরোধ গোড়ায় ইনিংস পরাজয়ের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। কিন্তু ১০ উইকেটে জয় পেয়ে পাকিস্তানের ঘরের আঙিনায় হুঙ্কার দিয়েছে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল।
কথা আছে জয় জয়ের জননী। বাংলাদেশ কিন্তু ৫০ ওভার ক্রিকেটে বিশ্বকাপ আসরে জিতেছে, দেশের মাটিতে পাকিস্তান দলকে বাংলাওয়াশ করেছে। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম জয় দিয়ে শুরু হলো বাক বদল। এখন লক্ষ্য সিরিজ জয় সম্ভব হলে ধবল ধোলাই। ভালো লেগেছে শান্ত বিজয়টি সাম্প্রতিক আন্দোলনে শহীদদের উৎসর্গ করায়, মুশফিক, লিটন পুরুস্কারের অর্থ বানভাসী মানুষদের সহায়তার জন্য পাঠানোর কথা ঘোষণায়। এই বাংলাদেশ আমার মায়ের দেশ। বার বার জেগে উঠে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।