ক্রিকেট অপারেশনে আনাড়িপনা সংকট ঘনীভূত করছে

এমনিতেই নানা কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সকল ফরম্যাটে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তলানিতে। উপরন্ত বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন আনাড়িপনায় সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে। ইতিমধ্যে টেস্ট, ওডিআই এবং টি ২০ তিন ফরম্যাটে তিন জন ভিন্ন অধিনায়ক ঘোষণা করা হয়েছে। এই কিছুদিন আগেও তিন ফরম্যাটে অধিনায়ক ছিল নাজমুল হোসেন শান্ত। বাটিংয়ে ধারাবাহিক ব্যার্থতার কারণে শান্ত নিজে থেকে টি ২০ অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ায় টেস্ট এবং ওডিআই অধিনায়কত্ব চালিয়ে নিতে আগ্রহী ছিল. লিটন কুমার দাসকে টি ২০ দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দেয়া হয়।

শ্রীলংকা সফর চলা কালেই বিসিবি আবার ওডিআই অধিনায়ক পরিবর্তন করে মেহেদী হাসান মিরাজকে দায়িত্ব প্রদান করে. বিষয়টি হয়ত নাজমুল শান্তর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। তাই কলম্বো টেস্টে শোচনীয় ইনিংস পরাজয় শেষে মিডিয়ায় এসে টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঘোষণা কালে সুস্পষ্ট জানিয়েছে বিভিন্ন  ফরম্যাটে তলানির দল বাংলাদেশের জন্য তিন ফরম্যাটে তিন পৃথক অধিনায়ক করার উপযোগী সময় এখনো আসেনি। বিশেষ করে তিন অধিনায়ক যখন তিন ফরমেট খেলে থাকে।

দেখা যাচ্ছে সরকার পরিবর্তনের পর নাজমুল আবেদীন ফাহিম অনির্বাচিত ভাবে বিসিবিতে জাতীয় স্পোর্টস কাউন্সিল মনোনীত প্রতিনিধি হয়ে আসার পর থেকে এবং পরবর্তীতে ক্রিকেট অপারেশন পরিচালক হওয়ার পর থেকে নানা বিতর্ক, বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। ফাহিম অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফরকারী দলের সফরসঙ্গী হচ্ছেন। এই সময় বাংলাদেশের সোনালী প্রজন্মের সেরা খেলোয়াররা একে একে বিদায় নেয়ায় ট্রানজিশন চলছে। পারফরমেন্স ভাটা পড়েছে।  এই সময়ে খেলোয়াড়দের নিয়ে যখন ধৈর্য্য প্রয়োজন তখন বিসিবি কেন অধিনায়কদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না।

অনির্বাচিত পরিচালকরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন তারা কিন্তু একটি কঠিন সময়ে দায়িত্বে আছে. ক্রিকেট পরিচালনায় ভুল ভ্রান্তি, দূরদৃষ্টির অভাবের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অর্জন প্রায় শুন্যের কোঠায়।  নেতৃত্ব দেয়ার মত গুনাগুন সম্পন্ন খেলোয়াড় সংখ্যা সীমিত। একজন অধিনায়ককে একটা নিদৃস্ট সময় পর্যন্ত দায়িত্ব না দেয়া হলে তার পক্ষে কোনো ভাবেই বাংলাদেশের মত একটি দলকে পরিবর্তন করতে পারবে না. হয়তো অধিনায়ক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত বিসিবির সম্মিলিত সিদ্ধান্ত।  কিন্তু এই বিষয়ে প্র্যাথমিক দায়িত্ব পরিচালক ক্রিকেট অপেরেশনের উপর বর্তায়।

সবাই জানে সেই বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই শান্ত এবং মিরাজ খেলার সাথী। দুইজনের মাঝে ক্রিকেট মাঠে এবং মাঠের বাইরে মধুর সম্পর্ক আছে বলেই জানি। কিন্তু এটি সহজেই অনুমেয় একটি বিদেশ সফর চলা কালে হটাৎ করে শান্তকে সরিয়ে মেহেদী মিরাজকে অধিনায়ক করা শান্তর মনোপুত হয় নি. বিষয়টি হয়তো মেরাজকেও বিব্রত করেছে। এই যে বাংলাদেশ গল টেস্টে ভালো পারফরম্যান্স করার পর কলম্বো টেস্ট শোচনীয় ভাবে হেরে গেলো নিঃসন্দেহে বলতে পারি খেলোয়াড়দের রসায়ন ভালো ছিল না.

অনুজপ্রতিম আমিনুল ইসলাম বুল্বুল এখন নতুন বিসিবি সভাপতি। সবার স্মরণে আছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে  শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিল বুল্বুল। অথচ এই বুলবুলকে অপসারণ করে বিসিবি ২০০০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে নাঈমুর রহমান দুর্জয়কে অধিনায়ক করা হয়েছিল। বুল্বুল নিঃসন্দেহে হতাশ ছিল. অবশ্য বুল্বুল হতাশার জবাব দিয়েছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম শতরান করার কৃতিত্ত্ব অর্জন করে.আশা করবো অধিনায়কত্বের বিষয়টি নিয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল শান্তর সঙ্গে ব্যাক্তিগতভাবে আলোচনা করবেন।

টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে। শুরু হবে ওডিআই এবং টি ২০ সিরিজ। শান্ত, মেরাজ, লিটন তিন ফরম্যাটে অপরিহার্য খেলোয়াড়। আশা করি সবাই পেশাদারীত্বের পরিচয় দিয়ে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ নিবেদন করবে। আশা করি ক্রিকেট অপারেশন আরো পেশাদারিত্বের পরিচয় দিবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five − 4 =