সালেক সুফী: দুই দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেট ক্রিকেট অঙ্গণে। কয়েকজন বিশ্ব মানের খেলোয়াড়ের অবদানে অনেক বিরতিতে ওডিআই ক্রিকেটে কিছু সাফল্য আসলেও সার্বিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অর্জন হতাশাজনক। সদ্য সমাপ্ত টি ২০ বিশ্ব কাপে বাংলাদেশের ভরাডুবি ক্রিকেট প্রেমী কোটি বাংলাদেশিদের মনে গভীর ক্ষোভ এবং তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। দেশের মাটিতে টি ২০ অনুপযোগী উইকেটে অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের খর্ব শক্তির দলকে ফাঁদে ফেলে সিরিজ জয় করে অপরিণত দল নিয়ে অবিবেচকের মতো বিশ্ব কাপ মিশনে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচ, কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড এবং সুপার ১২ সহ ১০ ম্যাচ খেলে জয় পেলো মাত্র দুটি খেলায় তাও ওমান এবং পিএনজির মতো দলের বিরুদ্ধে। সুপার ১২ পর্যায়ে ৫ টি ম্যাচে হার। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিরুদ্ধে শোচনীয় ব্যার্থতা। অর্জনের খাতা শুন্য। অথচ অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ডের সাথে সিরিজ জয় করে কতনা কল্পনার ফানুস উড়িয়েছিল বাংলাদেশ?
সংক্ষিপ্ত করে যদি বলি বাংলাদেশ সুপার ১২ সবচেয়ে দুর্বল দল ছিল। যদিও ভাগ্যক্রমে ২০২২ টি ২০ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জনকে হয়তো বিসিবি অর্জন বলে দেখাবে।
খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্ট, বিসিবি কোনো একটি বিশেষ অংশকে আলাদা করে চিহ্নিত করে ফায়দা নেই, ব্যার্থতা সার্বিক। এখানে এমনকি মিডিয়ার ( প্রিন্ট , ইলেকট্রনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া ) হাইপ সৃষ্টিও সমানভাবে দায়ী। বাংলাদেশ এখনো টি ২০ খেলার আদর্শ দল হয়ে উঠে নি, টেস্ট ক্রিকেটে তলানিতে। ওডিআইতে কালে ভদ্রে সাফল্য আসে তাও বেশির ভাগ দেশের মাটিতে।
অনেকেই বলছেন দীর্ঘ দুইযুগে বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। সেই যে বিদগ্ধ ক্রিকেট আইকন সর্বযুগের অন্যতম সেরা কার্রিবিয়ান ব্যাটসম্যান স্যার গর্ডন গ্রিনিজ টেস্ট সনদ পাবার প্রাক্কালে ১৯৯৯ সালে বিলেতে বলেছিলেন, ” বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তৈরি হয়নি “। ২২ বছর পরে অনেক বড় বড়ো বচন সোনার পরেও এখনো মনে হয় গ্রিনিজের সেই মূল্যায়নকেই বাংলাদেশ বহন করে চলেছে। ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামো বলতে কিছু নেই। বিদেশের মাটিতে কথা নেই, খোদ দেশের মাটিতেই সেদিনের পুচকে আফগানিস্তান বাংলাদেশেকে হেসে খেলে টেস্ট ম্যাচে হারিয়ে গাছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের কাছেও হতে হয়েছে টেস্ট সিরিজ ব্রাউন ওয়াশ।
সীমাবদ্ধতা কোথায়?
ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামো অগোছালো। বিসিবির স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা বলতে কিছু নেই। ক্রিকেট অপারেশন্স প্রশ্নবিদ্ধ। খেলার মাঠ, উইকেটস উন্নত ক্রিকেট অনুপযোগী। টূর্নামেন্টস বা প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে ভালো ক্রিকেটার গড়ে তোলার পরিকল্পনা অবিন্যস্ত। দেশ ব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট অনুপস্থিত। একসময়ের মুখর ক্রিকেট ভেন্যু চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, যাশোর, বরিশাল, রংপুর, ফরিদপুর নিয়মিত ক্রিকেট আসর থেকে প্রতিভা আনা হয় না। জাতীয় দল, বয়স ভিত্তিক দল গুলোর খেলোয়াড় নির্বাচন পদ্ধতি প্রশ্ন বিদ্ধ। অনুপযোগী উইকেটে, পক্ষপাতদুষ্ট আম্পয়ারিংয়ের অধীনে খেলে প্রতিভার বিকাশ হয় না। পেস বোলার, লেগ স্পিনার, ওপেনিং ব্যাটসম্যান খুঁজে বের করার কোনো ক্লিনিক হয় না। স্কুল ক্রিকেট বলে কোনো অবকাঠামো নেই। দামি কোচিং স্টাফ আনা হচ্ছে। কিছু ওদের দায় দায়িত্ব নির্ধারণ বা জবাব দিহিতা নাই। ৯০০ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ব্যালান্স নিয়ে বসে আছে বিসিবি। অনেকে বলে বিসিবি জুড়ে একটি বিশেষ ব্যাবসায়ী সংগঠনের চর দখলের পরিণতি এবারের বিশ্ব কাপ ভরাডুবি।
এই যখন অবস্থা সবাই মনে করে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ভরাডুবির আসল কারণ খুঁজে বের করে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করা জরুরি। প্রয়োজনে সরকার বিসিবি ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন অ্যাড হক কমিটিকে নতুন নির্বাচন করার দায়িত্ব দিতে পারে।