ক্রিকেট মক্কায় ঐতিহ্যবাহি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণে ক্যাঙ্গারু বাহিনী

সালেক সুফী

বৃষ্টি এবং আলোক স্বল্পতা ২৭ ওভার আগেই তৃতীয় দিনের খেলার যবনিকা টানলেও ৮ উইকেট হাতে রেখে ২২১ রানে আগুয়ান অস্ট্রেলিয়া টেস্ট এবং এশেজ জয়ের প্রায় নিশ্চিত অবস্থানে পৌঁছেছে। বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ  স্মিথ (১১০) অনুপ্রাণিত অস্ট্রেলিয়া কঠিন ব্যাটিং পরিবেশ ( সবুজ ঘাসের উইকেট, মেঘে ঢাকা আকাশের) নিচে ৪১৬ রান করে কাজের কাজটি করে রাখে।

দ্বিতীয় দিন খেলা শেষে ২৭৮/৪ রান করে স্বাগতিক ইংল্যান্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাষ রেখেছিলো। কিন্তু তৃতীয় দিনে অধিক প্রস্তুত  অস্ট্রেলিয়া মানসম্মত দ্রুত গতির পাঁজর বরাবর বোলিং করে ইংল্যান্ড ইনিংস ৩২৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৯১ রানের কার্যকরী লিড অর্জন করে। ১০০ টেস্ট ক্রমাগত খেলার মাইলফলক স্থাপনকারী দলের মুখ্য স্পিনার নাথান লায়ন পেশির টানে বোলিং করতে না পারলেও ভারসাম্যপূর্ণ অস্ট্রেলিয়া বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মাফিক বোলিং করে ইংল্যান্ডকে কোনঠাসা করে ফেলে।

স্টার্ক (৩/৮৮), হ্যাজেলউড (২/৭১) এবং কামিন্স বোলিং সহায়ক পরিবেশে দ্রুত গতির শর্ট বোলিং করে ইংল্যান্ডের মিডল অর্ডার ধসিয়ে দেয়ার পর খন্ডকালীন স্পিনার ট্রাভিস হেড (২/১৭) ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লেজ মুড়ে দেয়। ৯১ রান এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ইনিংসেও কঠিন উইকেট এবং পরিবেশে নিজেদের প্রয়োগ করে খেলে প্রথম উইকেটে ৬৩ এবং দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬০ রান জুড়ে তৃতীয় দিন শেষে ১৩০/২ উইকেট অবস্থানে পৌঁছে।

ইংলিশ ক্রিকেটের নিত্য সঙ্গী বৃষ্টি এবং ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশ তৃতীয় দিনের খেলার উল্লেখযোগ্য অংশ কেড়ে নিলেও ২২১ রানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া লর্ডস টেস্ট জয়ের শক্ত অবস্থানে উপনীত হয়েছে। ইতিমধ্যে ১-০ ব্যাবধানে এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া ৩৫০-৪০০ রান লিড নিলে এই উইকেটে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জয়ের পরিস্থিতিতে পৌঁছাবে।

৫৮ রান করে অপরাজিত আছে ধীর স্থির টেস্ট মেজাজে খেলতে থাকা উসমান খাজা। সঙ্গী বর্তমান টেস্ট ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথ।  ক্রিকেট বিশ্লেষক মাত্রই বলবে ইংল্যান্ড নিজেদের মাঠে বোলিং অনুকূল পরিস্থিতিতে কাজের কাজ করতে পারেনি।

ক্রিকেটে আগাম বলা বোকামি।  কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি বলছে বর্তমানে দুই দলের ফর্ম এবং মান বিচারে অস্ট্রেলিয়া আরো একটি এশেজ জয়ের সুবাতাস পেতে শুরু করেছে।

পরিবর্তনশীল ক্রিকেট বিশ্বে এখন নানা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি হলেও দুই ঐতিহ্যগত প্রতিদ্বন্দ্বী বনেদি আসর এশেজ আকর্ষণ বজায় রেখেছে। যতই খেলা হোক এমসিজি বা নরেন্দ্র মোদী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশেষত ক্রিকেট মক্কা লর্ডসে ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া টেস্ট ম্যাচের আবেদন ক্রিকেট প্রেমিকদের কাছে ভিন্নতর।

ইংল্যান্ডের আধুনিক সংস্করণ ব্যাজবল মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয় কার্যকরী কৌশল স্বাগতিকদের বেসামাল করে দিয়েছে বলার সময় হয়তো হয়নি। কিন্তু ইতিমধ্যেই ইংলিশ ক্রিকেটের বোদ্ধা সমাজ কিন্তু ব্রেডন মাকুলাম এবং বেন স্টোকস অনুসৃত কৌশলের সমালোচনা শুরু করেছে।

লর্ডসে বোলিং উপযোগী উইকেট এবং পরিবেশে টস জয় করে অস্ট্রেলিয়াকে বাগে পেয়েও কেন ইংল্যান্ড সুবিধা নিতে পারলো না তার চুলচেরা বিশ্লেষণ অবশ্যই ম্যাচ শেষে বলা যাবে। হয়তো এই ধরনের উইকেটে খেলার জন্য মার্ক উড এবং ক্রিস ওকস ভালো হতো কেউ কেউ বলবেন।

কিন্তু আমি বলবো অস্ট্রেলিয়া এই উইকেটে নিজেদের প্রয়োগ করে ব্যাটিং করলেও ইংল্যান্ড দ্রুত গতির শর্ট বোলিং খেলতে ব্যর্থ হয়েছে। খেলার যে পরিস্থিতি ৩৫০-৪০০ রান লিড পেলে অস্ট্রেলিয়া ২-০ এগিয়ে যাবে এবং সেখান থেকে ক্যাঙ্গারুর ছোবল থেকে এশেজ রক্ষা করা ইংলিশ লায়ন্সদের পক্ষে সহজ হবে না।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 × three =