খাদ্যনিরাপত্তা নিরঙ্কুশ করার চ্যালেঞ্জ

সালেক সুফী: কোভিড অতিমারীর অভিঘাতের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া যুক্ত হয়ে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। যদিও বাংলাদেশ অন্যান্য অনেক দেশ থেকে আপাতত স্বস্তিতে আছে, তবুও বাজারে নিত্যপণ্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি উদ্বিগ্ন হবার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন টিসিবি পরিচালিত সুলভ মূল্য খাদ্য বিতরণ সময়ে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি সীমিত আয়ের মধ্যবিত্তদের সমাবেশ ঘটছে। যদিও আমি আতংকিত নই তবুও সতর্ক হবার প্রয়োজন অনুভব করছি। বলবো না দায়িত্বহীন বিরোধীদলীয় নেতাদের মতো যে দেশে দুর্ভিক্ষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু কঠিন সময় আসছে। সর্বত্র কৃচ্ছতাসাধন এখন অতি প্রয়োজন। খাদ্যপণ্যের সাপ্লাই চেইন থেকে দুর্নীতিপরায়ণ সিন্ডিকেটের আগ্রাসন নির্মূল করতে হবে। জনতার দুর্ভোগ নিয়ে যারা রাজনীতি করে তাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্ব জ্বালানি বাজারে আকাশ ছোয়া মূল্য বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে অশুভ প্রভাব সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে যেন খাদ্যপণ্য পরিবহনে সংকট না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। অসৎ ব্যাবসায়ী মজুতদারদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন পরিস্থিতি সন্তোষজনক, বিতরণ ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। তবুও সম্পদের সুষম বণ্টন না হওয়ায় করোনার অভিঘাতে অন্তত ৩ কোটি প্রান্তিক গোষ্ঠীকে দারিদ্র সীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে। ক্রয়ক্ষমতা সকল স্তরে খুব একটা বেড়েছে বলে মনে হয় না। সরকার ইতিমধ্যেই টিসিবির মাধ্যমে সুলভে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। দেশব্যাপী এই কার্যক্রম আরো নিবিড় আর জোরদার করতে হবে। সরকার ভোজ্য তেল, চিনি সহ কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট মওকুফ করেছে। ১ কোটি প্রান্তিক পরিবারকে  সুলভ মূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণের জন্য কার্ড প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। যদি নিবিড় তদারকি করা হয় তাহলে আক্রার সময় অন্তত ৪ কোটি মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি কৃষকের স্বার্থরক্ষার জন্য সরকারকে মধ্যসত্বভোগীদের উপর নজরদারি করতে হবে। কৃষি উপকরণ সার, বীজ, সেচ উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে হবে। যতটা সম্ভব কৃষকের নিকট থেকে ন্যায্যমূল্যে কৃষিপণ্য সরাসরি কিনতে হবে।

খাদ্যনিরাপত্তা জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট। এটি নিতে রাজনীতি করা অমানবিক। অথচ একদিকে যেমন বিরোধী দলের নেতারা দায়িত্বহীন ভাবে কথা বলছে, অন্যদিকে সরকার দলীয় নেতারাও কাজ না করে অযথা বাগাড়ম্বর করছে।

সরকারের উচিত দেশপ্রেমী তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজে লাগানো। বাংলাদেশের সচেতন মিডিয়াকে অনুরোধ করবো গরিব, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খাদ্যসহায়তা প্রদানের জন্য সচ্ছল মানুষদের উদ্বুদ্ধ করার। কোনো খাদ্যপণ্য যেন অপচয় না হয়, সরকারের আন্তরিক প্রয়াস যেন দুর্বৃত্তদের করালগ্রাসে বার্থ না হয় সেই বিষয়ে মিডিয়াকে সচেতন থাকতে হবে। আসন্ন রোজার মাসটি ভালো ভাবে পার হলে নতুন ফসল সংকট কাটাবে। আশা করি সরকারের সকল প্রয়াস সার্থক হবে। বাংলাদেশকে খাদ্যনিরাপত্তা নিরঙ্কুশ করতেই হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

9 − seven =