গরমে সুতির পোশাক

নীলাঞ্জনা নীলা

গরমে অবস্থা যতই নাজেহাল হোক না কেন ক্লাস, অফিস ও নানা কাজে প্রতিদিনই আমাদের ঘর থেকে বের হতে হয়। এই তীব্র গরমে ঘর কিংবা বাইরে সব স্থানের জন্যই সঠিক পোশাক বাছাই করা জরুরি। তা না হলে পড়তে হবে অস্বস্তিতে। জেনে নেওয়া যাক গরমে কেমন পোশাক হবে আরামদায়ক।

ছেলে-মেয়ে ছোট-বড় সবারই গরমের প্রথম পছন্দ সুতির পোশাক। সুতির পোশাক ঘাম সহজে শুষে নিতে পারে। তা ছাড়া প্রাকৃতিক তন্তু থেকে এই পোশাক তৈরি করা হয় বলে তা খুব মসৃণ হয়, তাই শরীরে অস্বস্তি হয় না। অতিরিক্ত ঘামের ফলে আমাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়। এই ব্যাকটেরিয়া মূলত দায়ী দুর্গন্ধ ছড়ানোর জন্য। সুতি পোশাক যেহেতু ঘাম শুষে নিতে পারে তাই শরীরে দুর্গন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সুতির পোশাক ভেদ করে খুব সহজে বাতাস চলাফেরা করতে পারে। তাই গরমে সুতির পোশাকের বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না।

একটা সময় সুতির পোশাক অনেক সাদামাটা হতো বলে অনেকে পরিধান করতে পছন্দ করত না। কিন্তু এখন সুতি পোশাকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফিউশন করা হচ্ছে। একঘেয়ে ডিজাইন থেকে বের হয়ে সুতি পোশাকের মধ্যে নিয়ে আসা হচ্ছে নানা বৈচিত্র্য। যাতে করে শুধু নিত্যদিনের ব্যবহারের জন্য নয় যেকোনো উৎসব আয়োজনেও এখন অনেকে সুতির পোশাক বেছে নিতে পারছেন। সুতির পোশাক যেমন আরামদায়ক তেমন এটি পরে দেশীয় ঐতিহ্য ফুটিয়ে তোলা যায়। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে বড় অংশ জুড়ে থাকে সুতির পোষাক ও শাড়ি।

দেশে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবার কারণে অধিকাংশ ক্রেতাদের প্রথম পছন্দই থাকে সুতির পোশাক। নতুন প্রজন্ম একটা সময় সুতির প্রতি আগ্রহী না থাকলেও এখন তারা সুতির কাপড় পরতে বেশ আগ্রহী। কারণ সুতি কাপড়ের পোশাক এখন অনেক বেশি ফ্যাশনেবল ভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে। ওয়েস্টার্ন পোশাকও সুতির কাপড় দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।

মেয়েদের পোশাক

সুতির পোশাকে এখন মূল আকর্ষণ হচ্ছে মোটিফ। ডিজাইনারদের চেষ্টা থাকে সুতির পোশাকে নানা ধরনের মোটিফ তুলে ধরে তা আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। সুতির পোশাকে দেখা যায় বিভিন্ন চিত্রকর্ম, কখনো করা হয় হ্যান্ড পেইন্ট। ফুল লতাপাতা প্রকৃতির ছোঁয়া তুলে নিয়ে আসা হয় পোশাকে। সুতির সালোয়ার কামিজের বিভিন্ন ধরনের ব্লক প্রিন্ট করা হয়। গর্জিয়াস লুক দেওয়ার জন্য হাতের কাজ কিংবা এমব্রয়ডারি করা হয়। যারা জামদানি পছন্দ করেন তাদের জন্য জামদানি মোটিফে সুতির সালোয়ার কামিজ তৈরি করা হয়। নিত্য ব্যবহারের জন্য সব বয়সী মেয়েদের এখন পছন্দ সুতির কুর্তি। কুর্তি সাধারণত ফরমাল প্যান্ট কিংবা জিন্স দিয়ে পরিধান করা হয়। কুর্তির মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে কখনো কলার দেওয়া হয় কখনো বা হাতার মধ্যে কুচি। অফিস কিংবা ক্লাসের জন্য অনেকেই বেছে নিচ্ছেন সুতির কুর্তি। এছাড়া আরো রয়েছে শর্ট কুর্তি। সুতির টপ এখন বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। টপের মধ্যে নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের কারুকাজ করা হয়।

গরমে আরেকটি জনপ্রিয় পোশাক হচ্ছে কাফতান। ফ্যাশন হাউজগুলো এখন নানা নকশার সুতির কাফতান তৈরি করছে। কাফতান ফিটিংয়ের জন্য সামনে ফিতা রাখা হয়। এতে যে যার সাইজ মতো ফিট করে নিতে পারেন। কাফতান পরে যেমন ফ্যাশনেবল লুক তৈরি করা যায় তেমন গরমেও মিলে স্বস্তি। অনেক মেয়েরা ক্যাজুয়াল লুকের জন্য বেছে নিচ্ছেন শার্ট, সেক্ষেত্রে গরমে বেছে নেওয়া যেতে পারে সুতির তৈরি শার্ট। শার্টকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য শার্টের বুকে ফুল কিংবা বিভিন্ন প্রকৃতির দৃশ্য এমব্রয়ডারি করা হয়ে থাকে। এছাড়া সুতির মধ্যে চেক কিংবা একরঙা শার্ট পাওয়া যায়। অনেক মেয়েরা ওয়েস্টার্ন পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাদের জন্য বিভিন্ন ধাঁচের স্কার্ট, প্লাজো, টপ, শর্ট কাফতান তৈরি করা হচ্ছে। গরমের মধ্যে এখন অনেকে ওভারসাইজ পোশাক বেছে নিচ্ছেন। ওভারসাইজ কামিজগুলো সাধারণত বডি থেকে ২ ইঞ্চি বেশি হয় এবং হাতা থাকে কিছুটা ঝোলানো।

তীব্র গরম হলেও দাওয়াত ও নানা রকম উৎসব আয়োজন লেগেই আছে। যেকোনো অনুষ্ঠানে অনেকের প্রথম পছন্দ শাড়ি। গরমের সময় সুতির শাড়ি বেছে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ। সুতির শাড়ি মানেই যে একরঙা এবং একঘেয়ে তা কিন্তু নয়। এখন সুতির শাড়িকে স্টাইলিশ করার জন্য তার মধ্যে বিভিন্ন মোটিফের কাজ হচ্ছে। শাড়ির আঁচলে নকশি কাঁথার কাজ, আবার ব্লক প্রিন্ট করা হচ্ছে কখনো প্রিয় গান কিংবা কবিতার লাইন। আবার কুচিতেও রয়েছে নানা ধরনের প্রিন্ট। পুরো শাড়ি একরঙা রেখে পাড়ে করা হচ্ছে হাতের কাজ যা শাড়িকে নান্দনিক করে তুলছে। এছাড়া প্যাচওয়ার্কের শাড়ি এখন বেশ ট্রেন্ডি। দেশীয় ঐতিহ্যপ্রেমীদের জন্য রয়েছে গামছা প্রিন্টের সুতির শাড়ি এবং রিকশা পেইন্ট করা শাড়ি। অনেকে এক রঙের শাড়ি পরে ব্লাউজ পরছে বিভিন্ন প্রিন্টের। গরমের মধ্যে ফুল হাতা ব্লাউজ না পরে বেছে নিতে পারেন হাফ হাতা কিংবা সিøভলেস। গরমে পোশাকের পাশাপাশি পোশাকের রঙের বিষয়েও খেয়াল রাখতে বলছেন ডিজাইনাররা। কালো, লাল এর মতো গাঢ় রঙ অতি সহজে তাপ শোষণ করে নেয়। তাই বেছে নিতে হবে হালকা রঙ যেমন সাদা, হালকা গোলাপি, হালকা হলুদ, আকাশি, লেমন ইত্যাদি।

ছেলেদের পোশাক

গরমে ছেলেদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পোশাক হচ্ছে টি-শার্ট। টি-শার্টে ভিন্নতা আনার জন্য নানা প্রিন্টের কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ফরমাল লুকের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে এক রঙের সুতির শার্ট। ফ্যাশন হাউজগুলো সুতির মধ্যে ছেলেদের জন্য বাহারি নকশার পাঞ্জাবি কালেকশন রাখছে। গরমে খুব কারুকাজ করা পাঞ্জাবি বেছে না নিয়ে চেক কিংবা এক রঙের পাঞ্জাবি বেছে নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রেও হালকা রঙের পাঞ্জাবিকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। ট্রেন্ডে রয়েছে শর্ট পাঞ্জাবি, গরমে হুটহাট বাইরে বের হওয়ার জন্য শর্ট পাঞ্জাবি থাকতে পারে পছন্দের তালিকায়। এছাড়া আরো পাওয়া যায় ছেলেদের হাফ হাতা ফতুয়া। সুতির ফতুয়ার মধ্যে করা হয় ব্লক প্রিন্ট কিংবা সুই সুতার কাজ।

ছোটদের পোশাক

ছোটদের ক্ষেত্রে শুধু গরম নয় সবসময় আরামকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া উচিত। পোশাকটি যতই সুন্দর হোক কিন্তু আরামদায়ক যদি না হয় তাহলে শিশুরা তা পরিধান করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না। শিশুদের জন্য বিভিন্ন দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলোতে রয়েছে সুতির বিভিন্ন টপস, ফতুয়া, স্কার্ট  ইত্যাদি। বড়দের মতো তাদের পোশাক আকর্ষণীয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মোটিফে কাজ করা হয়, আবার করা হয় এমব্রয়ডারিও।

কোথায় পাবেন

গরমের জন্য উপযোগী বিভিন্ন ফ্যাশনেবল সুতির পোশাক পেয়ে যাবেন দেশীয় সব ফ্যাশন হাউজগুলোতে। যেমন আড়ং, দেশাল, অঞ্জনস, যাত্রা, কে ক্রাফট, বাংলার মেলা, বিশ্বরঙ ইত্যাদি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্যাশন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 1 =