ময়ূরাক্ষী সেন
বাইরে কাঠফাটা রোদ্দুর! সূর্যের দাপটে সবাই অতিষ্ট। কিন্তু গরমের দোহাই দিয়ে বাদ থাকছে না কোনো উৎসব আয়োজন। আজ এই বন্ধুর বাসায় দাওয়াত তো কাল সেই সহকর্মীর বাড়িতে ডিনার। তাই নিজেকে সাজাতে তো হচ্ছেই। কারো পেশাগত কারণেও রোজ মেকআপ নিতে হচ্ছে। কিন্তু এই গরমে মেকআপ করা এবং মেকআপ সারাদিন ধরে রাখা দুটোই যেন কষ্টসাধ্য। এজন্য অনুসরণ করতে হবে সঠিক নিয়ম।
‘আবহাওয়া যেমনই হোক মেকআপ করার আগে ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন লাগাতে কোনোভাবেই ভোলা যাবে না’ এমনটাই বলেন রিডাইভিং এলিগেন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও মেকআপ আর্টিস্ট কাজী জেসিয়া। গ্রীষ্মকাল তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তৈলাক্ত ত্বক ঘামে বেশি আর অতিরিক্ত তেল বের হয়ে ত্বকের সৌন্দর্য আরো নষ্ট করে দেয়। আর সেটা অক্সিডাইজ হয়ে ত্বক কালো দেখা যায়। তাই এই গরমে মেকআপ করার ক্ষেত্রে কিছু রুলস ও হ্যাকস ফলো করে কাঙ্ক্ষিত লুক পাওয়া যাতে পারে। আমরা কোথাও যাবার আগে চটজলদি মেকআপ শুরু করে দেই ঠিকই কিন্তু এটা মাথায় রাখি না যে আমাদের ত্বক মেকআপ করার জন্য রেডি কি না। মেকআপ নেওয়ার আগে প্রথমেই আমাদের ত্বক সুন্দর করে রেডি করে নিতে হবে। মেকআপের আগে প্রথমে বরফের টুকরো কাপড়ে নিয়ে ভালো করে মুখে ম্যাসাজ করতে হবে, বরফের ফলে মুখের রক্ত চলাচল দ্রুত হয়।
আর মুখে জমে থাকা তেল অনেকটা কমে যায়, এছাড়া একটা শসার রস বের করে রসটুকু মুখে লাগিয়ে রেখে ১০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেললে গরমের মধ্যেও মুখ বেশ খানিকটা সময় সতেজ থাকে। কিংবা ঘরে পাকা কলা থাকলে তা চটকে মুখে দেওয়া যেতে পারে, পাকা কলা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। মুখ থেকে জমে থাকা তেল কিছুটা কমিয়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে কারণ স্কিন যদি ময়েশ্চারাইজড থাকে তবে আলাদা করে তেমন কিছুই করা লাগে না। অনেকেই মনে করে থাকেন যে গরমকালে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই, আসলে এটি ভুল ধারনা। ময়েশ্চারাইজার যেকোনো আবহাওয়াতেই ব্যবহার করতে হবে।
স্কিনকে ভেতর থেকে হেলদি রাখে, যাতে বাইরের দূষণ স্কিনের ক্ষতি করতে না পারে সহজে। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কিছু নিয়ম রয়েছে, নিয়ম না মেনে ময়েশ্চারাইজার দেওয়ার ফলে অনেক সময় ময়েশ্চারাইজার কাজ করে না। ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রাথমিক দুটি সময় হচ্ছে দিনের শুরুতে ও দিনের শেষে। কিন্ত মেকআপ যখনই করা হোক ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ময়েশ্চারাইজার স্কিনকে আর্দ্রতা দিয়ে থাকে। গরমের মেকআপে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে সানস্ক্রিন। আমাদের সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে রক্ষা করে। বাইরে এমনি রোদের তাপ যা সরাসরি আমাদের স্কিনের উপর প্রভাব ফেলে। এই রোদ থেকে হাতিয়ারের মতো রক্ষা করে সানস্ক্রিন। তাই ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন প্রতিদিনের রুটিনে রাখতেই হবে।
গরমে যতটা সম্ভব হালকা মেকআপ ব্যবহার করতে হবে। বড় কোনো অনুষ্ঠান থাকলে দুদিন আগে ফেসিয়াল করে নেওয়া যেতে পারে, এতে মেকআপ খুব সহজে মিশে যাবে। এরপর প্রাইমার ব্যবহার করতে হবে, প্রাইমার দীর্ঘ সময় মেকআপ ধরে রাখতে সাহায্য করে। মেকআপের শুরুতে তাড়াহুড়া তে অনেকেই প্রাইমার দিতে ভুলে যায় কিংবা অনেকে প্রাইমারের উপকারিতার ব্যাপারে জানে না। কিন্তু প্রাইমার না দিলে মেকআপ সহজে সেট হতে চায় না। গরমে অনেকেই মেকআপ সেট না হওয়ার সমস্যায় পড়ে। প্রাইমার দিলে এই সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যায়।
কাজী জেসিয়া জানান, এই গরমে নিত্যদিনের মেকআপে ফাউন্ডেশন যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। ফাউন্ডেশন এর বিকল্প হিসেবে বিবি ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপর কনসিলার দিয়ে স্পট, ডার্ক সার্কেল ঢেকে করে দিয়ে ফেস পাউডার ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু অনেকে আবার গরমের কারণে কনসিলার ব্যবহার করতে চায় না। কেউ চাইলে কনসিলার ব্যবহারও এড়িয়ে যেতে পারে, সেক্ষেত্রে ফেস পাউডার ভালো করে এপ্লাই করতে হবে।
গরমের মেকআপে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে ফেস পাউডার, কারণ এটি মুখের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ফেস পাউডার সমস্ত মেকআপকে ব্লেন্ড হতে সাহায্য করে। এরপর ব্যবহার করতে হবে লুজ পাউডার। অনেকের মেকআপ কিছুক্ষণ পর ফেটে যায় কিংবা বসে না, লুজ পাউডার এ সমস্যার সমাধান করে।
এছাড়া চোখে ভারী মেকআপ না করাই ভালো! গরমে অনেকের এলার্জি বা চুলকানিজনিত সমস্যা দেখা দেয়। ভারী চোখের মেকআপ করলে চোখে চুলকানি হতে পারে। তখন চোখ লাল হয়ে পানি পড়ে। দেখা যাবে মেকআপ করা অবস্থায় চুলকালে সমস্ত চোখের মেকআপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই চোখে ভারী মেকআপ এড়িয়ে যাওয়াই উচিত।
চোখের লিডে হালকা ব্রাউন কালার আইসেডো দেওয়া যেতে পারে কারণ ব্রাউন আইসেডো সব রঙের পোশাকের সাথেই মানিয়ে যায়। গরমে ক্রিম অ্যাইশ্যাডো এড়িয়ে চলা উচিত, এর বদলে পাউডার বেসড অ্যাইশ্যাডো ব্যবহার করা যেতে পারে। গ্লিটার জাতীয় আইশ্যাডো না ব্যবহার করাই ভালো। চোখের হালকা মেকআপ চোখের প্রশান্তি দেয়।
ভারী করে মাশকারা ও ঘন কাজল দিয়ে চোখের সাজের ইতি টেনে দিতে হবে। চোখের নিচে ভারী কাজল এখন বেশ ট্রেন্ডি। অবশ্যই মাশকারা দেওয়ার আগে আই ল্যাশে একটু পাউডার ব্যবহার করে নিতে হবে, এতে ঘেমে গেলেও মাশকারা ছড়িয়ে যাবে না। যাদের চোখ একটু ছোট তারা দুই লেয়ারের মাশকারা দিলে চোখ অনেকটা বড় ও সুন্দর দেখায়।
ঠোঁটে হালকা রঙের লিপষ্টিক ব্যবহার করতে হবে। লিপস্টিক ব্যবহার করার আগে লিপ প্রাইমার ব্যবহার করে নিতে হবে। গরমের মধ্যে অনেকের ঠোঁটে মরা চামড়া দেখা যায়। লেবু ও চিনির মিশ্রণ একসাথে দিলে ঠোঁটের মরা চামড়াগুলো উঠে আসে ও ঠোঁট হয় মসৃণ।
গরমে সিমারি লুক এড়িয়ে যেতে হবে, কারণ সিমারি মেকআপ খুব সহজে গলে যায়। গরমে পাউডারজাতীয় মেকআপ দিয়ে ম্যাট লুক দিতে হবে, এতে অনেক সময় মেকআপ তরতাজা থাকে। মেকআপের মধ্যে অবশ্যই ওয়াটার স্প্রে ব্যবহার করতে হবে, এতে মেকআপ অনেক ফ্রেশ দেখাবে। সবশেষে হালকা পাউডার ব্লাশন গালে ও নাকে দিয়ে মেকআপ শেষ করে নিতে হবে, সামান্য ব্লাশন একটি সম্পূর্ণ মেকআপ লুক দিবে। বেইস মেকআপ ও আই লুক শেষ করে মেকআপ সেটিং স্প্রে দিতে হবে, এটি মুখে মেকআপের পাইডারি ভাব দূর করে এবং সারাদিন মেকাপ সেট রাখবে। মেকআপ শেষ করে মুখ থেকে থেকে ৮-১০ ইঞ্চি দূরে থেকে স্প্রে করলে নিলেই সারাদিন মেকআপ নিয়ে নিশ্চিত থাকা যাবে।
কাজী জেসিয়া আরো জানান, বাজারে এখন ওয়াটার প্রুফ মেকআপ পাওয়া যায়। গরমে ওয়াটার প্রুফ মেকআপ ব্যবহার করা উচিত। এতে ঘেমে গেলেও মেকআপ গলে যাওয়ার ভয় থাকবে না। ভালো করে দেখে নিজের ত্বকের জন্য উপযুক্ত প্রসাধনী বেছে নিতে হবে। আর সারাদিন পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মেকআপ তোলা। অনেকেই ঠিকমতো মেকআপ না তুলে ঘুমিয়ে পড়ে যা ত্বকের জন্য খুব ক্ষতিকারক। মেকআপ মুখে থেকে গেলে ব্রন, লাল লাল র্যাশ দেখা দিতে পারে। মেকআপ তুলতে হবে আলতো হাতে খুব বেশি ঘষা যাবে না।
আজকাল অনেক ধরনের মেকআপ রিমুভার পাওয়ার যায় তাছাড়া ঘরোয়া পদ্ধতিতেও তোলা যায় মেকআপ। নারিকেল তেল খুব সহজে মেকআপ তুলে ফেলে, তাই নারিকেল তেল দিয়ে মেকআপ তুলে এরপর তুলা দিয়ে শসার রস ব্যবহার করতে হবে। শসার রস টোনার হিসেবে কাজ করে।মেকআপের শুরুতে যেমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়, ঠিক তেমন করে মেকআপ তুলে ফেলার পরেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আরশী