গল টেস্ট নিষ্পত্তির দ্বারপ্রান্তে, জমে উঠছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে এশেজ লড়াই

সালেক সুফী

ক্রিকেট বিশ্বের দুই প্রান্তে শ্রীলংকা এবং ইংল্যান্ডে চলছে দুটি ভিন্ন মাত্রায় আকর্ষণীয় দুটি টেস্ট ম্যাচ। ভারত মহাসাগর পারে অপূর্ব নৈসর্গিক পরিবেশে শ্রীলংকার গলে আজ শেষ হতে যাওয়া পাকিস্তান-শ্রীলংকা টেস্ট জয় করতে পাকিস্তানের প্রয়োজন ৮৩ রান হাতে আছে ৭ উইকেট। ওদিকে ফুটবল নগরী ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রান্সফোর্ডে চলতি এশেজ সিরিজে চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিন শেষে অস্ট্রেলিয়া সংগ্রহ করেছে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯৯ রান। সিরিজে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ১-২ পিছিয়ে আছে। সিরিজে টিকে থাকতে ইংল্যান্ডকে জিততে হবে।  আজ দ্বিতীয় দিন শেষে ম্যাচ পরিস্থিতি অনেকটাই সুস্পষ্ট হবে।

অল্প কথায় বললে বলতে হয় দুটি দুই মাত্রার টেস্ট ম্যাচ। গল উইকেটে দুই দলের স্পিনাররা জাদু দেখাচ্ছে। অন্যদিকে ওল্ড ট্রাফোর্ড উইকেট দেখছে এবং দেখবে  উড-ওকস-ব্রডের সঙ্গে কামিন্স-স্টার্ক-হেজেলউড গতির যুদ্ধ। আজ গল টেস্ট শেষ হবে, ওল্ড ট্রাফোর্ড নাটক চলবে আরো চার দিন। দুটি টেস্টে বৃষ্টি শঙ্কা ছিল, আছে। পাকিস্তান বা শ্রীলংকা কিন্তু প্রথম দুটি আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সুবিধা করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়া এখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন, ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটে নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে।

শ্রীলংকার গল কিন্তু ঐতিহ্যগত ভাবেই ধীর গতির স্পিন নির্ভর উইকেট। এই মাঠে মুরালিধরন, হেরাথের অনেক কীর্তি আছে। সেই উইকেটে প্রথম বোলিং করা পাকিস্তানের হয়ে শুরুতেই বর্তমান বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেস বোলার শাহীন শাহ আফ্রিদি চটজলদি তিন তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিক দলকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়।  তরুণ পেসার নাসিম শাহ গতি দিয়ে লংকানদের হকচকিয়ে দেয়। পাকিস্তানের স্পিনার আবরার আহমেদও ভালো বোলিং করে।

একমাত্র ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (১২২) এবং এঞ্জেলা ম্যাথিউস (৬৪) ছাড়া আর কেউ সুবিধা করতে না পারায় শ্রীলংকান ইনিংস ৩১২ রানে শেষ হয়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান তুখোড় লংকান স্পিনার যুগল রমেশ মেন্ডিস এবং প্রভাত জয়াসুরিয়ার ঘূর্ণি বলের মোকাবিলায় ১০১ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জুটি বেঁধে পাকিস্তানী নবীন সাউদ শাকিল এবং সালমান দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করে ম্যাচ জয়ের পুঁজি সংগ্রহে ভূমিকা রাখে।  স্পিনকে কিভাবে দক্ষতা দিয়ে প্রতিআক্রমণ করে মোকাবেলা করতে হয় ওদের ব্যাটিং ছিল তার আদর্শ প্রদর্শনী।

এই জুটি ষষ্ট উইকেটে ১৭৭ রান যোগ করে। সালমান ৮৩ রানে ফিরে গেলেও শাকিল লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গী করে পাকিস্তান স্কোর ৪৬১ পর্যন্ত টেনে নেয়। নিজে অনবদ্য ২০৮ রানে অপরাজিত থাকে। অনেকেই বলবেন বৈরী অবস্থায় শাকিলের ইনিংস অন্যতম সেরা টেস্ট ইনিংস। পাকিস্তান গুরুত্বপূর্ণ ১৪৯ রানে এগিয়ে যায়। শ্রীলংকার হয়ে রমেশ মেন্ডিস ৫/১৩৬ এবং প্রভাত জয়াসুরিয়া ( ৩/১৪৫) অর্জন করে। পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ১৪৯ রানের লিড পায়। পাকিস্তান ফিল্ডাররা কয়েকটি চমৎকার ক্যাচ অসামান্য দক্ষতায় ধরে নিয়েছে এই টেস্টে যার প্রশংসা করতেই হবে।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে এসে আবারো পাকিস্তানী স্পিনার্সদের উইকেট উপযোগী বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিংয়ের মোকাবেলায় খেই হারিয়ে ফেলে। আবরার, নোমান, সালমান সঠিক লাইন-লেংথে বল করে একের পর এক উইকেট তুলে নেয়।  কেবলমাত্র শুরুতে মধুসকা (৫২) এবং যথারীতি ধনঞ্জয়া (৮২) প্রতিরোধ গড়ে তলায় শ্রীলংকা কোনোভাবে ২৭৯ করে পাকিস্তানের সামনে  ১৩১ রানের টার্গেট ছুড়ে দেয়।

চতুর্থ দিন শেষে পাকিস্তান ৩ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ গড়ে ৪৮। জয় পেতে প্রয়োজন আরো ৮৩ রান। উইকেটে আছে ইমামুল হক এবং বাবার আজম।  উইকেটে টার্ন আছে, গ্রিপ করছে। জয়ের সুবাস পাচ্ছে পাকিস্তান। কিছু দুই একটা উইকেট চটজলদি পরে গেলে নাটক হতেও পারে।

এ্যাশেজ টেস্ট জমে উঠবে

সিরিজের প্রথম  তিনটি টেস্ট নাটকীয় পরিসমাপ্তি দেখেছে। প্রথম দুটি টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জিতে এগিয়ে গেলেও তৃতীয় টেস্ট জিতে সিরিজে টিকে আছে ইংল্যান্ড। কাল চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিনেও ইংল্যান্ডের পেস বোলারদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের তীব্র লড়াই হয়েছে। মার্নাস লেবুসাং (৫১), মিচেল মার্শ (৫১),  ট্রাভিস হেড (৪৮), স্টিভ স্মিথ (৪১), ডেভিড ওয়ার্নার (৩২) ভালো শুরু করলেও কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারে নি ক্রিস ওকস (৪/৫২), স্টুয়ার্ট ব্রড (২/৬৮), মার্ক উড এবং মঈন আলী ভালো বোলিং করায়।  তবে দিনশেষে ২৯৯/৮ রান মোটামুটি ভালো সংগ্রহ।  আজ দ্বিতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়া ৩৪০-৩৫০ করতে পারলে সেটি ওদের আস্থা দিবে। অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা এই উইকেটে ভালো বোলিং করবে। ইংলিশ লায়ন্স আর কাঙ্গারুদের যুদ্ধ আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eighteen − two =