তিনি গান ভালোবাসেন। গানই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তার লেখা, সুর করা কিংবা সংগীতায়োজনে বুঁদ হয়ে থাকেননি এমন শ্রোতা পাওয়া ভার। সেই নব্বইয়ের দশক থেকে গানের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন প্রিন্স মাহমুদ। এখনো এতটুকু ফুরোয়নি তার অবদান। সবশেষ হিমেল আশরাফ পরিচালিত ‘প্রিয়তমা’ সিনেমায় তার তৈরি করা ‘ঈশ্বর’ গানটি পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। গানের টানেই অনেক দর্শক বসেছেন বড়পর্দায় ‘প্রিয়তমা’র সামনে।
ঈশ্বরের মতো অসংখ্যা জনপ্রিয় গানের জন্মদাতা প্রিয় মাহমুদ। সত্যিকারের প্রিন্স হয়েই দাপটের সঙ্গে মাতিয়ে রেখেছেন আমাদের সংগীতাঙ্গন। তার মাথা মগজ ঘুরে যে গানগুলো এসেছে শ্রোতাদের পাতে, তার বেশির ভাগই পেয়েছে ‘হিট’ তকমা।
আজ এই জনপ্রিয় সংগীত তারকার জন্মদিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে পত্রিকার পাতা এবং টিভি চ্যানেল- সব জায়গায় আজ প্রিন্স বন্দনা।
সব জায়গায় যখন প্রিন্স বন্দনা সেখানে নিজের জন্মদিন নিয়ে কী ভাবছেন এই তারকা? দুপুরের খানিক আগে দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন আমাকে কেউ চিনত না, তখন জন্মদিনটা এক রকম ছিল। খুব মজা হতো। চেনার পর থেকে আবার আরেক রকম। বাসায় স্টুডিওতে ছেলে-পেলেরা আসে। ওদের মতো করে আনন্দ করার চেষ্টা করি। কোনো কোনো বছর হয়তো একটু বেশি উদযাপন হয়, কোনো কোনো বছর কম। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি উচ্ছ্বাস চলতে থাকে। সেসবের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি। এভাবেই কেটে যায়।’
তবে জীবনে প্রত্যাশার চেয়ে জীবনে প্রাপ্তি কম নয় এই তারকার। কথা বলেন সে প্রসঙ্গেও। ‘প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তি অনেক বেশি। মাঝে মাঝে মনে হয় এমন তো কিছু করিনি। আমার অনিন্দ্যসুন্দর সময়ে সবার সহযোগিতা পেয়েছি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। সবাই আমাকে দোয়ায় রাখবেন। যতদিন বাঁচি ততদিন কাজ করে যেতে চাই।’
জানতে চাই সংগীত তারকা না হলে কী হলে কী হতেন প্রিন্স মাহমুদ। জীবনের লক্ষ্যই বা কী ছিল? এই তারকা বলেন, ‘গান ছাড়া কিছুই করতে পারতাম না। কী হতাম, কিছুই না! গানই করতে হতো আমাকে। এটাই ছিল ভেতরে। ‘গান ছাড়া’ জীবনের অন্য কোনো লক্ষ্য ছিল না।’
সবশেষ সোমেশ্বর অলির লেখা, রিয়াদের গাওয়া ‘ঈশ্বর’ গানটি নিয়ে কথা বলেন সুরকার ও সংগীত পরিচালক প্রিন্স মাহমুদ। বলেন, ঈশ্বর গানটা সবার মধ্যে পৌঁছে গেছে। অত্যন্ত ভালো লাগছে। এ জন্য প্রথম কৃতিত্বটা পরিচালক হিমেল আশরাফের। এরপর সোমেশ্বর অলি, গায়ক রিয়াদসহ সংশ্লিষ্ট সবার। আমি পেছনে থেকে গানটাকে তুলে ধরেছি মাত্র। সবাই পছন্দ করে ফেলেছেন, এই প্রাপ্তি অনেক। যেখানে যাচ্ছি সেখানে এই গানটার কথা শুনছি। গানটা যদি একটা নির্দিষ্ট জায়গায় যায় এবং মানুষের ভেতরে থাকে তাহলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে।’
গানটার তৈরিতে বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েও কথা বলেন এই সংগীত পরিচালক। বলেন, ‘আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নতুন গায়ক রিয়াদকে সামনে তুলে ধরা। এ কাজে আমি সম্ভবত সফল হয়েছি। এ কারণে ভালো লাগাটা অন্য রকম। আমার চেষ্টা থাকবে নতুনদের যেন আরও সামনে আনতে পারি। এটা তো শুরু হলো মাত্র। এই গানটা দিয়ে একটা নতুন ধারা নতুন সময় শুরু হলো। পুরোনো দিনে গানের জন্য অনেকেই হলে যেত, ঈশ্বর গানটা শুনে অনেকেই সেই অভিব্যক্তি জানাচ্ছেন। এটা অসম্ভব রকম প্রাপ্তি।’
গানের সঙ্গে প্রিন্স মাহমুদের সম্পর্ক আশির দশক থেকে। ওই সময় দ্য ব্লুজ ব্যান্ডের ভোকাল ও গিটারিস্ট ছিলেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ‘ফ্রম ওয়েস্ট’ নামে একটি ব্যান্ড গড়েন তিনি। সেই ব্যান্ডেও ভোকালিস্ট হিসেবে ছিলেন। তবে ওই সময় গান গাওয়া কমিয়ে দেন তিনি। মন দেন গানের কথা ও সুরে।
তাঁর সুরে ১৯৯৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা পেয়েছি শক্তি, ক্ষমা, এখনো দুচোখে বন্যা, পিয়ানো থেকে শুরু করে ‘খেয়াল পোকা’ মিলিয়ে ৫০টি অ্যালবাম। তার লেখা ও সুর করা জনপ্রিয় গানের তালিকায় আছে, ‘মা’, ‘বাবা’, ‘জন্মদিন’, ‘বাংলাদেশ’, ‘এত কষ্ট কেন ভালোবাসায়’, ‘বেলা শেষে’, ‘সোনার মেয়ে’, ‘ফেরানো গেল না কিছুতেই’, ‘হয়নি যাবার বেলা’, ‘শেষ দেখা’র মতো গানে পাওয়া গেছে তাঁকে।
তার লেখা ও সুরে গেয়েছেন জেমস, আইয়ুব বাচ্চু, শাফিন, খালিদসহ অসংখ্যা তারকা সংগীতশিল্পী। ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় ব্যান্ডের গান করলেও ‘জিরো ডিগ্রি, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার গান করেছেন তিনি।