শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) নন্দিত গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের জন্মদিন। বিশেষ দিনটিতে তিনি সহকর্মী, স্নেহভাজন ও ভক্তদের শুভেচ্ছা-ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছেন, হবেন দিনভর।
১৯৪৩ সালের এই দিনে (১১ ফেব্রুয়ারি), ঝিনাইদহ জেলার ফুরসুন্দির নানা বাড়িতে জন্ম নেন এই গীতিকবি। তবে তার পৈতৃক নিবাস যশোর শহরের খড়কী এলাকায়। যশোর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন (এসএসসি), সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে এইচএসসি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরিবারে শিক্ষা-সাহিত্যের চর্চা ছিলো। সেই সুবাদে ছোটবেলাতেই ছড়া-কবিতা-গল্পে হাতেখড়ি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের। বড় হতে হতে সেই চর্চা বাড়তে থাকে আর তিনিও মগ্ন হয়ে পড়েন লেখার জগতে।
১৯৬৫ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশ বেতারে গীতিকবি হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর তিন বছর পর বেতারে চাকরি নেন। সেই চাকরি তিনি ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত করেছেন। এরপর একাধিক টিভি চ্যানেলের উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন।
তবে চাকরির বাইরে লেখালেখিতেই ছিলো মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের মূল আবেগ, ভালোবাসা। দীর্ঘ জীবনে তিনি দুই হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন। এর মধ্যে বিখ্যাত হয়েছে বহু গান।
গীতিকবি হিসেবে সিনেমায় মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের অভিষেক হয় ১৯৭৩ সালে। এরপর ১৯৭৫ সাল থেকে তিনি অসংখ্য সিনেমার চিত্রনাট্যও লিখেছেন। শুধু দেশে নয়, কলকাতার বহু সিনেমায়ও গল্পকার, চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
তার রচিত অন্যতম কয়েকটি চিত্রনাট্য হলো: ‘দেবদাস’, ‘ঘর সংসার’, ‘সৎ ভাই’, ‘কাজললতা’, ‘বিরাজ বউ’, ‘শুভদা’, ‘সহযাত্রী’, ‘ছেলেকার’, ‘জন্মদাতা’, ‘চরম আঘাত’, ‘না বলো না’, ‘মরণের পরে’ ইত্যাদি।
মূলত গানেই সর্বজনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। তার রচিত কালজয়ী কয়েকটি গান হলো- ‘সেই রেললাইনের ধারে’, ‘আমাদের দেশটা স্বপ্নপুরী’, ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে’, ‘ভালোবাসা যত বড়, জীবন তত বড় নয়’, ‘তোমার হাতপাখার বাতাসে’, ‘রিটার্ন টিকিট হাতে লইয়া আইসাছি এই দুনিয়ায়’, ‘নদী চায় চলতে, তারা চায় জ্বলতে’, ‘পদ্ম পাতার পানি নয়’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার শত্রু বলে গণ্য হলাম’, ‘ওই রাত ডাকে ওই চাঁদ ডাকে’, ‘তুমি আমার মনের মানুষ মনেরই ভিতর’, ‘কী জাদু করেছো বলো না’ ইত্যাদি।
চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। এছাড়া বাচসাস পুরস্কার, জীবনের জয়গান উৎসব আজীবন সম্মাননাসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন এই গুণী ব্যক্তিত্ব।