গোয়িং হোম: এক নারীর স্বপ্নপূরণের গল্প

এক ব্যক্তি রাতে সানগ্লাস পরে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে ঘটতে থাকে নানান ঘটনা। এরমধ্যে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধও। এমনই গল্পে নির্মিত হয়েছে ‘গোয়িং হোম’ নামের একটি সিনেমা। এটি নির্মাণ করেছেন ঢালিউডের বরেণ্য নায়ক সোহেল রানার ছেলে মাশরুর পারভেজ ওরফে ইয়ুল রাইয়ান। নির্মাণের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় চরিত্রেও অভিনয় করেছেন রাইয়ান। নিজের বাবা-মাকেও নিয়েছেন অভিনয়শিল্পী হিসেবে। সোহেল রানাকে দিয়েছেন একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র সামলানোর দায়িত্ব। কিছুদিন আগে ছবিটির একটি প্রচার অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন রানা পরিবার। সোহেল রানা যে এখনও কতটা জনপ্রিয় তা সেদিনের প্রেস কনফারেন্সই বলে দেয়। ছেলের ছবির অনুষ্ঠানে এসে সবকিছু ছাপিয়ে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন মধ্যমণি।

সাধারণত এ ধরনের অনুষ্ঠানে দেখা যায় না পর্দার মাসুদ রানাকে। হয়তো ছেলের ছবি বলেই এসেছিলেন। এসে অবশ্য ভালোই করেছিলেন। আজীবন পরিবারকে পর্দার আড়ালে রাখা মাসুদ পারভেজ এদিন যেন মনের আগল খুলেছিলেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এই প্রথম মন ভরে কথা বলেছেন তিনি। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তার চিকিৎসক স্ত্রীও। তার কথায় স্পষ্ট ‘গোয়িং হোম’ শুধু একটি ছবিই নয়, একজন নারীর অনেক না পাওয়া ও অতৃপ্তির ওপর সুখের প্রলেপ। কী সেই অতৃপ্তি? রাইয়ানের মা অর্থাৎ সোহেল রানার স্ত্রীর আজীবনের স্বপ্ন ছিল অভিনয় করবেন। ডাক্তারি পড়াকালীন সুযোগ এসেছিল নাটকে অভিনয়ের। আনন্দে উদ্বাহু নৃত্য করতে গিয়েও দেখলেন বাবার সায় নেই। ফলে আর ওমুখো হননি। পরে সোহেল রানার ঘরে এসে স্বপ্নটি ফের মাথা চাড়া দিয়েছিল। ভেবেছিলেন নায়কের ঘরে যেহেতু এসেছেন সেহেতু নায়িকা হওয়া তার আটকায় কে! কিন্তু সে আর হয়ে ওঠেনি। কেননা যার ওপর ভর করে এই স্বপ্ন দেখা সেই সোহেল রানা কখনও চাননি স্ত্রী রঙের দুনিয়ায় আসুক। ফলে আর স্বপ্ন দেখেননি মিসেস রানা। এতে অবশ্য স্বামীর ওপর প্রচণ্ড রাগও হয়েছে তার। কিন্তু সেসব রাগ-অভিমান সাদা অ্যাপ্রোনে ঢেকে চিকিৎসা পেশায় মন দিয়েছেন তিনি।

তারপর কেটে গেছে অনেকদিন। ছেলে রাইয়ান বড় হয়েছে। ছবি বানিয়েছে। কে জানত স্বামীর অসহযোগিতায় ডানা ভেঙেছিল যে স্বপ্নের তা মেরামত করবেন ছেলে! হ্যাঁ রাইয়ান তার দ্বিতীয় ছবি রাইয়ানে ছোট একটি চরিত্রে সুযোগ দিয়ে পূরণ করেন মায়ের স্বপ্ন। গোয়িং হোমেও মাকে রেখেছেন। এবারের চরিত্রের ব্যাপ্তি আরও বেশি। এসব কথা যখন সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে সোহেল রানার স্ত্রী বলছিলেন, তখন তার শিশুসুলভ হাসিই বলছিল কতটা আনন্দিত তিনি। সবার সামনে ছেলে রাইয়ানকে ধন্যবাদও জানান তিনি।

এখানে প্রশ্ন থেকেই যায়, স্ত্রীকে কাউকে দেখতে দেবেন না বলে পণ করেছিলেন সোহেল রানা। কিন্তু সে আর হলো না। কীভাবে মেনে নিচ্ছেন? পর্দার লড়াকুর সরল স্বীকারোক্তি, আমার মধ্যে অনেক দোষ-গুণ আছে। তার মধ্যে একটা দোষ না হয় আমি আমার বউকে ঘরের মধ্যে রেখে দিতে চাচ্ছি। আপনাদের কাছে এ কারণে আমি ক্ষমাও চেয়ে নিচ্ছি। এখন আমার ছেলে যখন ওর মাকে নিয়ে নিয়েছে, এখন আমি আর কি বলব। ছেলে বলে দশ মাস দশ দিন মায়ের পেটে ছিলাম, আমি মাকে নেব। তখন বললাম না-ও বাবা। আসলে একটা সময় চলে আসে, যখন ছেলেরা যা বলে বাবাকে তাই শুনতে হয়। এভাবেই স্বামী-স্ত্রীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য জমে উঠেছিল তাদের ছেলে রাইয়ানের সিনেমার প্রচারণা অনুষ্ঠান। জুলাইতে মুক্তি পাবে গোয়িং হোম। তবে এরইমধ্যে দেশের বাইরে প্রদর্শনী হয়েছে গোয়িং হোম। সবশেষে চলুন মিলিয়ে নেই পিতা-পুত্রের সমীকরণ।

১৯৭৩ সালে একইসঙ্গে পরিচালক ও নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সোহেল রানার। মাসুদ রানা নামের সে ছবি দিয়েই তারকাখ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। বাবার মতো রাইয়ানও দুই পরিচয় নিয়ে একসঙ্গে নাম লিখিয়েছিলেন ঢালিউডে। যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে অদৃশ্য শত্রু নামের একটি ছবির মাধ্যমে। এর তিন বছর পর রাইয়ান নামে দ্বিতীয় ছবিটি বানান। তার পাঁচ বছর পর বাবা মাকে নিয়ে ফিরছেন তিনি। সঙ্গে আছে গোয়িং হোম।

ঢালিউড অ্যাওয়ার্ডে একটু খবর

বিশ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজন করা হচ্ছে ঢালিউড ফিল্ম অ্যান্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের। এবারের আসরটি বসেছিল গত ১ জুলাই শনিবার রাতে ভার্জিনিয়ার হার্ন্ডন হাই স্কুলের মিলনায়তনে। এ উপলক্ষ্যে দেশের শোবিজ দুনিয়ার একঝাঁক তারকা উড়ে গিয়েছিলেন মার্কিন মুলুকে। তাদের উপস্থিতিতে জোৎস্নাময় হয়ে উঠেছিল সে আসর। এবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ঢালিউড ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন মোট ২৫ জন অভিনয়শিল্পী। সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন মোশারফ করিম। একই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকেও। আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয়েছে ঢালিউডের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা অমিত হাসানকে। টিভি নাটকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারটি বগলদাবা করেছেন মেহজাবীন চৌধুরী আর জনপ্রিয় অভিনেত্রীর পুরস্কার গেছে তাসনিয়া ফারিনের ঝুড়িতে। সেরা টিভি নাট্য পরিচালকের সম্মাননা পেয়েছেন মোহম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। ঢালিউড বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন সৈয়দ বাবু আর ঢালিউড পাওয়ার সম্মাননা পেয়েছেন মিশা সওদাগর। সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতার পুরস্কার গেছে শাকিব খানের ঘরে। আর সেরা অভিনেত্রীর সম্মাননা অর্জন করেছেন পূজা চেরি। অন্যদিকে চলচ্চিত্রের রাইজিং স্টার সম্মাননা প্রিয় মনি আর বিশেষ রাইজিং স্টার সম্মাননা পেয়েছেন জয় চৌধুরী। জায়েদ খানও একটি পুরস্কার বগলদাবা করেছেন। সেটি হলো ক্রিটিক্স সম্মাননা। একই সম্মাননা টিভি নাটকে পেয়েছেন জিয়াউল হক পলাশ। আর টিভি নাটকে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছে সাজু খাদেম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাজু খাদেম আর পুরস্কার তুলে দেন নিউ ইয়র্কের শো টাইম মিউজিকের স্বত্বাধিকারী আলমগীর খান আলম।

দুই ভাগে বিভক্ত অ্যাওয়ার্ডটির আগের অংশ জমে উঠেছিল নিউ ইয়র্কের কুইন্সের জামাইকা অ্যামাজুরা হলে। সেখানে ঢালিউডের মিউজিক অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করা হয় ১৭ জন সংগীতশিল্পীকে। নগর বাউলের জেমস, চিরকুট, তাহসান খান, মেহের আফরোজ শাওনসহ দেশের ও প্রবাসী ১৭ জন শিল্পীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এবারের ঢালিউডের বিশেষ আকর্ষণ ছিলেন সবার প্রিয় গায়ক জেমস। বেশ কিছুদিন নিজের দল নিয়ে দেশটিতে আছেন তিনি। বিভিন্ন স্টেটে বসবাসরত বাঙালিদের তৃপ্ত করছেন গান শুনিয়ে। তারই এক ফাঁকে ঢালিউড অ্যাওয়ার্ডে এসেছিলেন তিনি।

এ আসরে আলোচিত সমালোচিত আরেক অতিথির নাম জায়েদ খান। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুই বারের নির্বাচিত এই সাধারণ সম্পাদকের মুখে আজকাল লাগাম নেই। ক্যামেরা সামনে পেলেই নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন। ঢালিউড অ্যাওয়ার্ডে দাওয়াত পেয়েও একই কাজটি করেছেন। জায়েদ সেসময় বেশ ফলাও করে জানিয়েছিলেন তার যুক্তরাষ্ট্রের যাওয়ার খবরটি চাওর হওয়ার পর থেকেই তাকে ফোন করা শুরু করেছেন সেখানকার প্রবাসীরা। তাদের না কি একটাই প্রশ্ন ছিল। তা হলো, জায়েদ ভাই, আপনি আসবেন কবে? যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বিমানে চেপে বসার ছবিও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছিল, বেশ আগ্রহী ছিলেন তিনি। কিন্তু অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের শুরুর দিকেই পড়েন তোপের মুখে। ভদ্রলোক প্রিয়মনির সঙ্গে মঞ্চে উঠেছিলেন পারফর্ম করতে। কিন্তু মঞ্চে তাকে দেখেই ভুয়া বলে ধুয়োধ্বনি দেওয়া শুরু করে দর্শক। পরিস্থিতি প্রতিকূলে দেখে জায়েদও কেটে পড়েন মানে মানে। পরে অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপে শান্ত হয় দর্শক অংশ। অবশ্য এরপর আর এমন পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। ফলে বেশ প্রাণবন্তভাবে নিজের মতো করে বিনোদন দিয়েছেন দর্শকদের। সেইসঙ্গে পর্দা নেমেছে ২১তম এ অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের।

দুই দেশের দুই তারকা

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত একটি ছবি সবার নজর কেড়েছে। ছবিটিতে ফ্রেমবন্দি হয়েছেন দুই দেশের দুই তারকা। একজন ভারতের জনপ্রিয় অভিনেত্রী তামান্না ভাটিয়া। জনপ্রিয় সিনেমা বাহুবলীসহ একাধিক ছবি রয়েছে তার ঝুলিতে। আর অন্যজন ছোটপর্দার একসময়ে জনপ্রিয় তারকা নাফিজা জাহান। এ প্রজন্ম নাফিজাকে সেভাবে চেনার কথা না। চিনলেও স্মৃতিটুকু ঝাপসা হওয়ার কথা। কেননা নাফিজা ছোটপর্দা ছেড়ে প্রবাসজীবন বেছে নিয়েছেন অনেকদিন হলো। থিতু হয়েছেন মার্কিন মুলুকে। অথচ একসময় নাটক মানেই তিনি ছিলেন। অনবদ্য অভিনয় দিয়ে জমিয়ে রাখতেন ছোটপর্দা। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে এক হয়েছিলেন ভাটিয়া ও জাহান। এ কথা নাফিজা নিজেই জানিয়েছেন নেট দুনিয়ায়। চেক ইনে জন এফ কেনেডি বিমানবন্দর রেখে ক্যাপশনে লিখেছেন, তামান্না ভাটিয়ার সাথে। নাফিজার ওই ছবির মন্তব্যের ঘরে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। দুই দেশের দুই তারকাকে এক ফ্রেমে দেখে উচ্ছসিত হয়েছেন তারা। কেউ কেউ আবার সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে নাফিজাকে এগিয়ে রেখেছেন। অনেকে আবার জানিয়েছেন, দুজনকেই সুন্দর লাগছে।

লাক্স চ্যানেল আই সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ২০০৬ সালে শোবিজে নাম লিখিয়েছিলেন নাফিজা। অল্প সময়েই ছোটপর্দায় ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছিলেন। তবে বেশিদিন থাকেননি। এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীকে বিয়ে করে উড়াল দেন আমেরিকায়। এরপর থেকে সেখানেই জীবনযাপন করছেন তিনি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: ফ্রেমবন্দি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 4 =