গ্রীষ্মের বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবতা

মার্চ মাসে রোজা এবং নিবিড় সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ চাহিদা ১৪,০০০-১৫,০০০ মেগাওয়াট সীমিত থাকায় ভালো ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় গ্যাস এবং কয়লা আমদানির অর্থ যোগান দেওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূল থাকায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া গাছে। এই সাফল্যের জন্য বিদ্যুৎ জ্বালানি ব্যাবস্থাপনা কতৃ‍র্পক্ষ সাধুবাদ পেতেই পারে। কিন্তু গ্রীষ্মের সূচনায় তাপমাত্রা বেড়ে চাহিদা যখনি ১৫,০০০ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাচ্ছে তখনি টানপোড়ন শুরু হচ্ছে। কয়েকদফা সহনীয় মাত্রায় বিদ্যুৎ লোড শেডিং শুরু হয়েছে। জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ফরজুল কবির খান বারবার বলছেন, এবারের গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরণের সংকট হবেনা। লোড শেডিং সীমিত থাকবে এবং সেটি হলে শহর ও গ্রামে সমানভাবে বন্টন করা হবে। তবে তার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টরে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা প্রাক্তন অভিজ্ঞ পেশাদারদের দেখা যাচ্ছে না।

সাধারণভাবে ধারণা করা হচ্ছে তীব্র গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ চাহিদা ১৭,৫০০০ -১৮,০০০ মেগাওয়াট হতে পারে। দেশের সর্বোচ্চ স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতা ২৮,০০০ মেগাওয়াটের অধিক। সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থা ১৮,০০০ মেগাওয়াট সরবরাহের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সঙ্কট প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। গ্যাস সরবরাহ সঙ্কটে ১১,০০০ মেগাওয়াট গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ৬,০০০ মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। সেটি করতে হলেও দেশীয় গ্যাস উৎপাদনের পাশাপাশি ১,০০০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কয়লা থেকে ৫,০০০ মেগাওয়াট, আমদানি থেকে ২,৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এর পরেও পিক সময়ে ৩,০০০ মেগাওয়াটের অধিক ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক উৎপাদন থাকলে ১,৭০০০ মেগাওয়াট চাহিদা মেটানো যাবে। তীব্র গরমের সময় হিট ওয়েভ হলে ১,৫০০-২,০০০ মেগাওয়াট ঘাটতি এড়ানো যাবে না। এর বাইরে কারিগরি ত্রুটি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থাকবেই। আবার সঞ্চালন সীমাবদ্ধতার কারণে বিপিডিবি উত্‌পাদনে এর সুবিধা নিতে পারছে না।

এর মাঝে গতকাল দেশের দক্ষিাঞ্চলের ২১ জেলায় গ্রীড বিপর্যয়ের কারণে গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটে। ৫.৪৫ মিনিটে বিপর্যয় হওয়ার পর ২ ঘন্টার ব্যবধানে আবার সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হয়।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টরের সঠিক রোগ ধরতে পেরেছেন। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘরে বসে না থেকে নিরন্তর চেষ্টা করছেন। সচিব, কর্পোরেশন উর্ধতন কর্মর্কর্তাদের নিয়মিত তাগাদা দিচ্ছেন। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিপুল বকেয়ার বড় অংশ পরিশোধ করেছেন। বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সরবরাহকারীদের আস্থা ফিরে এসেছে। এখন জরুরি সুষ্ঠু ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট, কৃচ্ছতা নিবিড়ভাবে মনিটরিং। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট থেকে শিল্পকে মুক্ত রাখতে হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিকল্পিত লোড শেড্ডিং করতে হবে। এই বিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল এবং দেশবাসী সরকারকে সহায়তা করা জরুরি। সরকারকে নিজস্ব জ্বালানি কয়লা এবং গ্যাস আহরণ এবং উত্তোলনের জন্য যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। জ্বালানি বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, সিস্টেম লস গ্রহণযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতেই হবে।

ইতোমধ্যে দেশে জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ করে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়ে কাজ চলামান আছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ৩৪টি কূপ খনন শেষ করা সম্ভব হবে। তাতে নিজস্ব গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পেতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 − 18 =