চলে গেলেন রফিকুল হক ‘দাদু ভাই’

শিশু সাহিত্যিক, ছড়াকার, শিশু সংগঠক, নাট্যকার ও সাংবাদিক রফিকুল হক আর নেই, যিনি পরিচিত ছিলেন ‘দাদু ভাই’ হিসেবে। রোববার বেলা ১১টার দিকে মুগদার বাসায় তার মৃত্যু হয় বলে তার ভাগ্নে নুরুল ইসলাম জানান।

৮৪ বছর বয়সী রফিকুল হক বাধ্যর্কজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার মধ্যে গত বছর পরপর দুইবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। সুস্থ হয়ে কর্মস্থল যুগান্তরে যোগ দিলেও পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মাস ছয়েক আগে পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।

১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া রফিকুল হকের গ্রামের বাড়ি রংপুরের কামালকাচনায়। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। নুরুল ইসলাম জানান, আছরের পর যুগান্তরে এবং মাগরিবের পর বাসাবো জামে মসজিদে দুই দফা জানাজার পর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে তার মামা রফিকুল হককে।

সত্তরের দশকে গড়া শিশু কিশোরদের সংগঠন ‘চাঁদের হাটে’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক রফিকুল হক। তার আগে তার পরিকল্পনায় এবং তার তত্ত্বাবধানে দৈনিক পূর্বদেশে ‘চাঁদের হাট’ নামে ছোটদের একটি পাতা বের হত। তখন থেকে তিনি ‘দাদু ভাই’ নামে পরিচিতি পান। পরেই ১৯৭৪ সালে ‘চাঁদের হাট’ নামে একটি শিশু সংগঠন গড়ে তোলেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফিরে আসা উপলক্ষে দৈনিক ‘পূর্বদেশ’ একটি বিশেষ সংখ্যা বের করে। ওই পত্রিকার প্রথম পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবির সাথে ‘ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু’ শিরোনামে রফিকুল হকের একটি কবিতা ছাপা হয়, যা আলোচিত হয়।

বাংলা শিশু সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রফিকুল হক দাদুভাই ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একই বছর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার পান। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি পুরস্কার, নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার তিনি পেয়েছেন।

রফিকুল হক যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ছিলেন। নব্বই দশকে দৈনিক রুপালীর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি পালন করেন। তার আগে দৈনিক জনতার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। কাজ করেছেন দৈনিক লাল সবুজ, আজাদ, বাংলাদেশ অবজারভারে।

সত্তরের দশকে ‘কিশোর বাংলা’ নামে শিশু কিশোরদের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন তিনি। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ‘নিধুয়া পাথার কান্দে’ নামে একটি নাটক লিখছিলেন রফিকুল হক, যা পরে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ‘বর্গি এলো দেশে’ সহ তার প্রকাশিত বাইয়ের সংখ্যা সাতটি।

দাদুভাইয়ের আশিতম জন্মদিন উপলক্ষে এক লেখায় ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন বলেছিলেন, “আজকের বাংলাদেশে আমাদের শিল্প- সাহিত্য- সাংবাদিকতার ভূবনটি আলোকিত করে রেখেছেন যারা তাদের অনেকেই একদা এই রফিকুল হক দাদু ভাইয়ের প্রীতির বলয়ে আবদ্ধ ছিলেন দীর্ঘ দিবস আর দীর্ঘ রজনী।”

সেমসয় তরুণ লেখক ইমদাদুল হক মিলনের প্রথম গল্পটি এই দাদুভাইয়ের হাত দিয়ে দৈনিক পূর্বদেশের চাঁদের হাটের পাতায় ছাপা হয়েছিল বলে রিটন তার লেখায় উল্লেখ করেছেন।

ইমদাদুল হক মিলন দাদু ভাইয়ের জন্ম দিনের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “চিরনবীন বিস্ময়কর দাদু ভাই যদি না থাকত, তাহলে ইমদাদুল হক মিলন নামে কোন লেখকের জন্ম হত না। তার হাতদিয়ে গড়া চাঁদের হাট অনেক আলোকস্তম্ভ তৈরি করেছে।”

বিডিনিউজ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

nineteen − 7 =