মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নতুন ওয়েব ফিল্ম ‘লাস্ট ডিফেন্ডার অব মনোগামী’, সংক্ষেপে যার নাম ‘মনোগামী’। এতে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, জেফার, সামিনা হোসেন প্রমুখ। এই ওয়েব ফিল্মে প্রথমবার চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে পর্দায় দেখা যাবে তাঁর ছেলে শুদ্ধকে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে চাঁদরাতে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পাবে ওয়েব সিনেমাটি। এটি চরকির ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’ প্রজেক্টের তৃতীয় সিনেমা।
মনোগামী নিয়ে চঞ্চল চৌধুরী
সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্র শাফকাতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। সিনেমাটি নিয়ে চঞ্চল বলেন, ‘মনোগামী মানে নিজের মতো করে একজন। আমি সেই সর্বশেষ প্রাণী, যে কিনা এমন ভাবনার শেষ একজন যোদ্ধা। মনোগামীর গল্পটি আমাদের বেশির ভাগ মানুষের জীবনের কোথাও না কোথাও মিলে যাবে। এই গল্পের মধ্যে দেখা যাবে জীবনের বাস্তবতা বা এমন কিছু কথা থাকে, যা আমরা সবার সামনে স্বীকার করতে চাই না। সিনেমায় কিছু মনস্তাত্ত্বিক দিক আছে, যা দর্শককে ভাবাবে। মস্তিষ্কে যে ভাবনাগুলো খেলা করে, সেই ভাবনার সঙ্গে একটা মজাও আছে। প্রতিটি দৃশ্যে কিছু না কিছু ঘটবে, যা দর্শকদের গল্পে বেঁধে রাখবে। গল্পের মতো আমার চরিত্রের লুক, গেট-আপও একদম ভিন্ন হয়েছে।’
প্রথমবার পর্দায় বাবা-ছেলে
চঞ্চল চৌধুরীর ছেলে শুদ্ধরও রয়েছে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা। কদিন আগেই অভিনয় করেছে টিভি নাটকে। এবার অভিনয় করল বাবার সঙ্গে সিনেমায়। মনোগামীতে চঞ্চল চৌধুরীর ছেলের চরিত্রেই দেখা যাবে শুদ্ধকে। রিয়েল লাইফের বাবাকে পর্দার বাবা হিসেবে পেয়ে শুদ্ধ বেশ খুশি। তবে বাবা চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করে চাপ অনুভব করেছে শুদ্ধ। তার কথায়, ‘বাবার সঙ্গে কাজ করা প্রেশারের’। শুদ্ধ বলে, ‘বাবা সব সময় আমাকে গাইড করেন। যখন গাইড করেন, তখন মন খারাপ হয়, পরে বুঝতে পারি আমার ভালোর জন্যই এমনটা বলেছেন। এ সিনেমায়ও বাবা আমাকে গাইড করেছেন। আমি বাবার শুটিংয়ে অনেকবার গিয়েছি। তবে এবার নিজের শুটিং হওয়ায় খুব নার্ভাস লাগছিল। শুটিংয়ের আগে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। এখন বুঝতে পারছি, শুটিং করা কতটা প্রেশারের। ফারুকী আংকেলের এই সিনেমায় কাজ করাটা আমার জীবনে অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।’ বাবা-ছেলে জুটির সঙ্গে মনোগামীতে মা-মেয়ের জুটিও দেখা যাবে। সিনেমার অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামিনা হোসেন প্রেমা। তাঁর কন্যা রাইও থাকছে তাঁর কন্যা হিসেবেই।
গায়িকা থেকে অভিনেত্রী জেফার
মনোগামী দিয়ে অভিনেত্রী হিসেবে অভিষেক হচ্ছে সংগীতশিল্পী জেফারের। সিনেমার প্রযোজক নুসরাত ইমরোজ তিশা জানান, এই সিনেমায় জেফারকে খুঁজে নেওয়ার পেছনে সহায়ক হয়েছে তাঁর মেয়ে ইলহাম। জেফারের ‘ঝুমকা’ গানের ভক্ত সে। ফারুকী যখন লামিয়া চরিত্রে নতুন কাউকে খুঁজছিলেন, তখন ইলহামকে গান দেখাতে গিয়ে ফারুকী খেয়াল করলেন, তিনি যাকে খুঁজছেন, জেফার তার সঙ্গে মানিয়ে যায় একদম। অভিনয়ে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে জেফার বলেন, ‘আমি একটি স্টুডিওতে গান গাইতে গিয়েছিলাম। তখন ফারুকী ভাই গল্পটি শুনিয়ে বলল, গল্পের এই মেয়েটা যেন আমি হই। আমি অবাক হলাম! রাজি হওয়ার পরেও ভাবছিলাম, আমি কি পারব? অভিনয় তো আমার কাজ না। এই কাজটির জন্য আমার হেয়ার স্টাইল বদলাতে হবে, সুতি শাড়ি পরতে হবে, স্যান্ডেল পরতে হবে। আমি কখনোই চুল খুলি না, শাড়ি পরা হয় না। একটু দ্বিধায় ছিলাম; পরে ভাবলাম, যেহেতু একটা দারুণ টিম পেয়েছি এবং আমি নতুন কিছু করতে পছন্দ করি, তাই ভাবলাম, দেখি কী হয়। দর্শক যদি আমার কাজ পছন্দ করে, তাহলে মনোগামী দিয়ে আমার নতুন পথচলা শুরু হবে।’
নির্মাতা ফারুকীর ভাবনা
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘আমার প্রিয় একটা কাজ হচ্ছে, মানুষের মনের ভেতর ছিপ ফেলে দেখা, কী কী ধরা পড়ে সেখানে। ছোট-বড়, তুচ্ছ-গুরুত্বপূর্ণ—সবই আমাকে নাড়া দেয়। মনোগামীতে অনেক দিন পর নারী-পুরুষের সম্পর্কের কিছু দিক নিয়ে ছিপ ফেলার সুযোগ পেয়েছি। ব্যাচেলর সিনেমায় ব্যাচেলর জীবনের ঘটনা কোনো রকম রাখঢাক ছাড়া দেখাতে পেরেছিলাম। মনোগামীতে বিবাহিত এবং প্রবাহিত জীবনের কিছু দিক দেখানোর সুযোগ পেয়েছি।’
প্রযোজক তিশা যা বললেন
সিনেমার অন্যতম প্রযোজক অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা বলেন, ‘মনোগামীর প্রধান বিষয় হলো দুটি জেনারেশনকে একত্র করা। দুটি জেনারেশনের মানুষকে বুঝতে পারা, তাদের বুঝতে দেওয়া, সর্বোপরি তাদের পরিস্থিতি মানুষের সামনে তুলে ধরা। আমি চাই, দর্শক সিনেমাটি দেখুক। এর মনস্তাত্ত্বিক দিকটা মানুষ বোঝার চেষ্টা করুক।’