চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চন্দ্রযান ৩

আশফাক আহমেদ

চাঁদের দক্ষিণ মেরু নিয়ে রহস্য দীর্ঘদিনের। এর আগে সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চাঁদে নভোযান পাঠাতে সক্ষম হলেও এই অংশে কেউই পৌঁছাতে পারেনি। এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের ধারণাও সীমিত। পৃথিবীর উপগ্রহটির খানাখন্দে ভরা আবছায়া সেই দক্ষিণ মেরুতে প্রথম আলো ফেলে ইতিহাস গড়েছে ভারত। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে মাটি স্পর্শ করে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ওই অঞ্চলে পানির সন্ধান মিলতে পারে, খুঁজে পাওয়া যেতে প্রাণের অস্তিত্ব। ভারতের মহাকাশযানের ল্যান্ডার বিক্রম থেকে বের হয়ে রোবটযান ‘প্রজ্ঞান’ সেগুলোই সন্ধান করবে। চন্দ্রপৃষ্ঠের রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে পৃথিবীতে ছবি আর তথ্য পাঠাবে। খুলবে মহাকাশ নিয়ে গবেষণার নতুন দুয়ার।

চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয়ের যাত্রা সহজ নয়। ভারতের চন্দ্রযান ৩-এর সফল উৎক্ষেপণের পর রাশিয়ার ‘লুনা ২৫’ নভোযান চাঁদের ওই অঞ্চলে যাত্রা করে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠে আছড়ে পড়ে। প্রায় অর্ধ শতাব্দির মধ্যে চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি জমানোয় রাশিয়ার প্রথম উদ্যোগ ছিল সেটি। ১৯ থেকে ২১ অগাস্টের মধ্যে ‘লুনা ২৫’ নভোযানটির চাঁদে অবতরণের কথা থাকলেও গতিপথ বদলাতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে।

২০১৯ সালে চাঁদের এই অংশে পৌঁছাতে চন্দ্রযান ২ উৎক্ষেপণ করে ভারত। ওই অভিযান আংশিকভাবে সফল হয়। চন্দ্রযান ২-এর অরবিটার আজও চাঁদের চারপাশ প্রদক্ষিণ করছে এবং তথ্য পাঠাচ্ছে। কিন্তু এর ল্যান্ডার অবতরণের সময় শেষ মুহূর্তের জটিলতায় চাঁদের মাটিতে বিধ্বস্ত হয়। চন্দ্রযান ২ যেসব সমস্যায় পড়েছিল, সেগুলো ঠিকঠাক করেই চন্দ্রযান ৩ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে ভারত। প্রত্যাশা ও আত্মবিশ্বাস অনেক বেশিই ছিল। সেই আত্মবিশ্বাসই ভারতকে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদের মাটিতে নামার কৃতিত্ব এনে দিলো। চাঁদের দক্ষিণ মেরু নিয়ে গবেষণা এখনো খুব বেশি এগোয়নি। ছায়ায় ঢাকা ওই অঞ্চল চাঁদের উত্তর মেরুর চেয়ে বড়। ধারণা করা হয়, সবসময় অন্ধকারে থাকা ওই অঞ্চলে বরফ বা পানির অস্তিত্ব পাওয়া যেতে পারে। এই বরফ বা পানি খোঁজাই ভারতের এবারের চন্দ্রাভিযানের মূল লক্ষ্য।

চন্দ্রযান ৩-এর ওজন ৩ হাজার ৯০০ কেজি। বানাতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৭ কোটি ডলার। মহাকাশযানটি তৈরি হয়েছে অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার এই তিনটি অংশ নিয়ে। ইসরোর প্রতিষ্ঠাতার নামে চন্দ্রযান ৩ এর ল্যান্ডারের নাম রাখা হয় বিক্রম। যার ওজন দেড় হাজার কেজি। বিক্রম পেটের মধ্যে বহন করে ২৬ কেজি ওজনের রোভার বা রোবটযান প্রজ্ঞানকে। এই রোভার সক্রিয় থাকবে চাঁদের এক দিন, যা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান। ২৮ দিনে এক চান্দ্রমাসের বাকি ১৪ দিন থাকে টানা অন্ধকার বা রাত। ফলে টানা ১৪ দিনের সময়টাতেই চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়াবে প্রজ্ঞান।

চাঁদে প্রথম অ্যাপোলো মিশন অবতরণের আগে অর্থাৎ ৬০’র দশক থেকেই বিজ্ঞানীরা অনুমান করে আসছেন, চাঁদে পানির খোঁজ মিলতে পারে। তবে, ৬০’র দশকের শেষে ও ৭০’র দশকের শুরুর দিকে অ্যাপোলো মিশনের নভোচারীরা চাঁদ থেকে যেসব নমুনা পৃথিবীতে আনেন সেগুলো সবই ছিল খটখটে, শুকনো। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে আবারো সেইসব নমুনা পরীক্ষা করেন। আর এতে তারা চাঁদ থেকে পাওয়া আগ্নেয়গিরির কাঁচের ভেতর হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব খুঁজে পান। ২০০৯ সালে নাসার সহায়তায় ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা ইসরোর পাঠানো চন্দ্রযান ১ মহাকাশযান চাঁদের পৃষ্ঠে পানির অস্তিত্ব শনাক্ত করে। একই বছর নাসার অনুসন্ধানে উঠে আসে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর পৃষ্ঠের নিচে জমাট বরফ থাকতে পারে। এর আগে ১৯৯৮ সালে নাসা পরিচালিত ‘লুনার প্রসপেক্টর’ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত ছায়াযুক্ত গর্তে উচ্চমাত্রার জমাট বরফ থাকার প্রমাণ মেলে।

চাঁদে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়া যায়, তবে এটি চাঁদে যাওয়া নভোচারীদের পানযোগ্য পানির উৎস হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্র শীতল করার ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যেতে পারে। এছাড়া, মহাকাশযানের জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় হাইড্রোজেন ও নভোচারীদের শ্বাস নেওয়ার জন্য অক্সিজেনও তৈরি করা যেতে পারে এর মাধ্যমে। মঙ্গল গ্রহে যাত্রা ও চাঁদে ‘মাইনিংয়ের’ ক্ষেত্রেও এটি সহায়ক হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনেরও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি রোলস রয়েস লা রোস নয়ের ড্রপটেল

বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা রোলস রয়েস। তাদের তৈরি গাড়ি দেখতে যেমন অন্যান্য গাড়ি থেকে আলাদা হয় তেমনি দামও বেশি। এবার বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি এনেছে রোলস রয়েস। রোলস রয়েস লা রোস নয়ের ড্রপটেল গাড়িটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি। রোলস রয়েসের মতে, এই গাড়ি হলো একটা গোলাপ ফুল। কারণ ফ্রান্সের বিরল কালো বাকারা রঙের গোলাপ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে গাড়িটি ডিজাইন করা হয়েছে। ফ্রান্সের এই কালো গোলাপের একটি বিশেষত্ব রয়েছে। এই ফুলের একটি গাঢ় লাল রং আছে। এটি ছায়ায় পড়লে কালো রঙের দেখায়। কিছুটা সেইরকম ডিজাইন করা হয়েছে রোলস রয়েসের এই বিলাসবহুল চার চাকায়। রঙের পাশাপাশি গাড়ির সরঞ্জামেও রয়েছে বিলাসিতার ছোঁয়া। বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের জন্য এই গাড়ি বানিয়েছে রোলস রয়েস।

‘রোলস রয়েস লা রোস নয়ের ড্রপটেল’ গাড়িটির দাম রাখা হয়েছে ৩০ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩২৮ কোটি টাকা। এর আগে সবচেয়ে দামি গাড়ি ছিল ‘রোলস রয়েস বোট টেল’। যার দাম ছিল ২৮ মিলিয়ন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৯৪ কোটি টাকা। রোলস রয়েস লা রোস নয়ের ড্রপটেল গাড়িটিতে রয়েছে পরিবর্তন করা যায় এমন কার্বন ফাইবার এবং ইলেক্ট্রোক্রোমিক হার্ডটপ বা রুফ। যাতে দেওয়া হয়েছে ৬.৭৫ লিটার ভি১২ ইঞ্জিন যা ৫৬৩ হর্সপাওয়ার এবং ৮২০ নিউটন মিটার টর্ক তৈরি করতে পারে।

এই গাড়িতে রয়েছে দুটি দরজা এবং দুটি আসন। ১৫০টির বেশি বৈচিত্র্য পরীক্ষা করার পর গাড়ির এক্সটিরিয়র নির্ধারণ করা হয়। রয়েছে লা টোন যুক্ত বার্নিশের ৫টি স্তর। সূক্ষ্ম কারুকার্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে গাড়িটি। হাতে তৈরি ১৬০০টির বেশি কাঠের টুকরা রয়েছে গাড়ির ইন্টিরিয়র ডিজাইনে। যা প্রসেস এবং গাড়িতে স্থাপন করতে সময় লেগেছে ২ বছর। প্রায় ৫ বছর ধরে গাড়িটি ডিজাইন করছে রোলস রয়েসের সেরা ইঞ্জিনিয়াররা। গাড়ির ড্যাশবোর্ডে রয়েছে অডমার্স পিগুয়েট রয়্যাল ওয়াক কনসেপ্টের ঘড়ি।

অনলাইনে ভুয়া বিজ্ঞাপন চেনার কৌশল

লোভনীয় অফার অনলাইনে দেওয়া ভুয়া বিজ্ঞাপনগুলোতে সাধারণত প্রলোভন দেখানো হয়। দ্রুত নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে প্রলুব্ধও করে থাকে প্রতারক। বিজ্ঞাপনগুলোতে পণ্য কেনার বা বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার জন্য এক বা দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। অনেক বিজ্ঞাপনে বলা হয়, আর মাত্র কয়েকটি পণ্য অবিক্রীত রয়েছে, এখনই কিনুন। বাজার মূল্যের থেকে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান থাকতে হবে। এমন বিজ্ঞাপনের লিংকে ক্লিক করার আগে অবশ্যই বিজ্ঞাপন দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই করা উচিত।

বিজ্ঞাপনে থাকা ওয়েবসাইটের ঠিকানা বা ইউআরএলে যদি এইচটিটিপিএস না থাকে, তবে সতর্ক হতে হবে। বেশিরভাগ ভুয়া বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ঠিকানা এইচটিটিপি দিয়ে শুরু হয়। এ জন্য ওয়েবসাইটের ইউআরএল যাচাই করতে হবে। সামাজিকমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই না করে ক্লিক করা ঠিক হবে না।

ভুয়া বিজ্ঞাপনে সাধারণত শুরুতেই ক্রেতার ব্যাংক কার্ডের তথ্য চাওয়া হয়। যাচাই না করে ব্যাংক কার্ড বা আর্থিক তথ্য দিলে বিপদ হতে পারে। অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজে দেওয়া বিজ্ঞাপনে যদি মন্তব্য করা না যায়, তবে সাবধান থাকতে হবে। কারণ, ভুয়া বিজ্ঞাপন দেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ফলে পরবর্তীতে চাইলেও অভিযোগ করা যায় না।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: টেক ট্রেন্ড

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × four =