সালেক সুফী
মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যাবধানে মোহনীয় চাঁদের দুই পিঠ দেখলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ১৮ তারিখে সফরের প্রথম ওডিআই ম্যাচ ৩৮ রানে জিতে নেয়া যদি পূর্ণ শশীর স্নিগ্ধ জোৎস্না হয় তাহলে আজ ৭ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে পরাজয় ছিল ঘুটঘুটে অমাবস্যার নিকষ কালো আঁধার। ক্রিকেটে এমন হতে পারে। কিন্তু এই দুই বিপরীত মেরুর ফলাফল অনেকটাই ভুল কৌশলের জন্য হয়ে থাকে। জোহান্নেসবার্গের ওয়ান্ডারার্স মাঠের উইকেটে তুলনামূলক ভাবে অধিক গতি ছিল, কিছুটা অসম বাউন্স ছিল। এহেন উইকেটে পেস বোলারস শুরুতেই সাধারণত অধিক সুবিধা আদায় করে নিতে পারে, বাংলাদেশের পেসার ত্রয়ী তাসকিন, শরিফুল এবং মুস্তাফিজ ছন্দে থাকায় টস জয়ী বাংলাদেশ বোলিং বেছে নিতে পারতো। দলের সাথে থাকা অভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকান কোচিং স্টাফ কি উপদেশ দিয়েছে জানিনা। এই ধরণের উইকেটে সচরাচর খেলতে অভ্যস্থ নয় বাংলাদেশ। আর তাই ব্যাট হাতে শুরুতেই গুলিয়ে ফেললো বাংলাদেশ রাবাদা আর এনজিডির মোকাবিলায়। ৩৪ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ব্যাটিং তাসের ঘরের মতোই হুড় মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো। তামিম, শাকিব, মুশফিক, ইয়াসির অনেকটা নাদানের মতোই উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে। একমাত্র লিটনের কিছুই করার ছিল না। রাবাদা খেলার বিরতিতে বলেছে আগের ম্যাচেও ওরা ভালো বোলিং করেছে। কিন্তু বাংলাদেশিরা ওদের অনেক সতর্কতা আর সাহস নিয়ে মোকাবিলা করেছিল।
মাহমুদুল্লাহ চেষ্টা করেছিল তরুণ আফিফকে নিয়ে। মাহমুদুল্লাহ ফিরে যাবার পর আফিফ (৭২) যুদ্ধ করলো মিরাজকে (৩৮) নিয়ে। ওদের যোগাযোগে ৭ম উইকেটে ৮৬ রানের জুটি মুখ রক্ষার ১৯৪/৯ রান এনে দিলো। কাগিসো রাবাদা (৪/৩৩) এবং লুঙ্গি এনজিডি (৩/৪৪) প্রথম ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিলো।
অনেকেই ভেবেছিলেন এই রান যুদ্ধ জয়ের রসদ হয়তো এনে দিয়েছে। কিন্তু যে ভুল বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা অনেকেই করে উইকেট বিলিয়ে দিয়েছে তুখোড় দক্ষিণ আফ্রিকানরা সেই পথে হাটেনি। শুরু থেকেই চড়াও হয়েছে ডি কক (৬২) এবং মালান (২৬)। ওদের যোগাযোগে প্রথম উইকেটে সংগ্রহীত দ্রুত গতির ৮৬ রান বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। হালে পানি পায়নি প্রথম ম্যাচের সফল মিরাজ (১/৫৬) আর তাসকিন (০/৪১)। ভারায়ন (৫৮) , টেম্বা বাভুমার (৩৭) সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৮২ রান জুড়ে দিয়ে হেসে খেলে ৭ উইকেটে ম্যাচ জয় করেছে। সিরিজে এখন সমতা। বাংলাদেশের খেলা দেখে মনে হয়েছে প্রথম খেলায় বিশাল জয়ের মাঝেই যেন ওদের সবকিছু অর্জন হয়ে গেছে। এখন তৃতীয় ম্যাচে সিরিজ নির্ধারণ হবে। নিজেদের ছন্দ দারুন ভাবে ফিরে পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে বাংলাদেশ আর নাগালে পাবে বলে মনে হয় না। খেলাটি কিন্তু আবার হবে সেঞ্চুরিয়ানের সুপার পার্কে।
ভেবে পাই না মাত্র ৪৮ ঘন্টার ব্যাবধানে পাশার দান কেন এভাবে উল্টে গেলো?